জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
লেডিঞ্জে গ্রেন্ড, স্টকহোম,সুইডেন
মতামত

সেই থেকে ‘বিজয়া’ এক বিষাদ!

জাহিদ হোসেন : ‘বিসর্জন’ – এই চমৎকার বাংলা শব্দটার সাথে প্রথম পরিচয় হয়েছিল ছেলেবেলায়। দশমীর দিনে। নিরঞ্জন শেষে আমাদের মফস্বল শহরঘেঁষা নদীর দুই ধারে সব প্রতিমা নিয়ে আসা হতো। পাড়ার দাদারা নাচতেন ঢাকের বাজনার সাথে। ওদিকে মেলা বসতো রথতলায়। তেল চুয়ানো পাপড় আর চিনির ছাঁচের ঘোড়া কামড়ে খেতাম আর ভাবতাম, এতো আনন্দের মধ্যে বিসর্জনটা কোথায় ? ‘পুজো ডুবানো’ শেষে ভেজা প্যান্ট খালি গা বন্ধুদের ক্লান্ত-শ্রান্ত মুখে একটা ‘নেই নেই ভাব’ দেখতাম। ওটাকেই বিসর্জন বলে ভ্রম হতো ।

ক্লাস সিক্স/সেভেনের সেই সময়েই ফাল্গুনী মুখার্জির ‘শাপমোচন’ প’ড়ে জানলাম বিসর্জনের এই দিনটাকে বিজয়াও বলে। এক বিজয়ার দিনে চাকরিপ্রার্থী মহেন্দ্র আসে ধনীর দুলালী মাধুরিদের বাড়িতে। মাধুরী তাঁকে ভালোবাসতে শুরু করে। কিন্তু সে ভালোবাসায় সাড়া না দিয়ে মহেন্দ্র ফিরে যায়। হারিয়ে যায় মাধুরির জীবন থেকে। অথচ বিরহী মাধুরী অপেক্ষায় থাকে। প্রত্যেক বিজয়ার দিনে মহেন্দ্রকে চিঠি লেখে, ভাবে একবার যদি এই চিঠি মহেন্দ্রের হাতে পড়ে, যদি আবার মহেন্দ্র ফিরে আসে।
কোন উত্তর আসে না।

সেই থেকে ‘বিজয়া’ এক বিষাদ হয়ে আছে আমার জীবনে। কিন্তু জীবন তো কেবল বিষাদের হতে পারে না। তাই আজকাল মনে হয়, ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা’ বলে যাকে পুজা করা হয় সে কেবল মাটির প্রতিমা নয়; নিজেদের মা’ও। নিজের মায়ের উপর ভক্তি ভালোবাসা যার যতো জীবন্ত, তার কাছে দুর্গাপূজার সার্থকতা ততো বেশি। দশভূজা মহামায়া বিদায় নিলেও ঘরে ঘরে জীবন্ত দ্বিভুজা মা তো থাকেন।

অতএব, বিজয়া দশমীর প্রতিকী ‘বিসর্জন’ হলো ঘরের দ্বিভূজা মাতৃ ঐশ্বর্যের বিভিন্ন শক্তিকে নতুন করে উপলব্ধি করা।
সকল অসুর শক্তিকে পরাভূত করে সকল মা তাঁর সকল সন্তানকে রক্ষা করুন। শুভ বিজয়া। ফেসবুক থেকে