সাদিয়া নাসরিন : আমেরিকায় ট্রাম্প জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগকে কোলে করে এনে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে না। ইন ফ্যাক্ট, আওয়ামী লীগ কারো কোলে চড়ে, ক্যু করে, রাতের আঁধারে চোরাপথে বিপ্লব করে ক্ষমতা দখল করার রাজনীতি করেও না। আওয়ামী লীগের ইতিহাস রাজপথে রক্তাক্ত হওয়ার ইতিহাস। সুতরাং রাজনীতির ময়দান থেকেই আওয়ামীলীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় পৌঁছুবে।
আবার ট্রাম্পের প্রশাসন মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে কোন পরিবর্তন আনবেনা, ফলে ই*উনুস সরকারেরও কোন অসুবিধা হবেনা, ট্রাম্পের সরকারেও ই*উনুচ সাহেবের বন্ধু বান্ধব আছে, এসব শিশুতোষ আলাপও ধর্তব্য কিছু নয়। এখানে হিসাব আছে। ই*উনুস সরকারের উপর ট্রাম্প সরকারের পররাষ্ট্র নীতির প্রভাব বেশ ভালো করেই পড়বে।
ট্রাম্প ব্যক্তিগত সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়। রাশিয়ার পুতিন এবং ভারতের মোদীর সাথে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক যদি দেশগুলোর কুটনৈতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করে এবং ট্রাম্প বাইডেনের “বাংলাদেশ দখল” নীতি থেকে সরে আসে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমেরিকার প্রভাবমুক্ত হয়ে ই*উনুস সরকারের ব্যাকআপ ফোর্স হিসেবে কাজ না করে তাহলেই আওয়ামীলীগ রাজনীতির মাঠ দখল করবে। এবং আওয়ামীলীগ রাজপথে মানে, আওয়ামীলীগ অপ্রতিরোধ্য।
এখন ই*উনুস সরকারের হার্ডনাট চেষ্টা থাকবে আওয়ামীলীগের রাজপথে ফেরার রাস্তা বন্ধ করার এবং শক্তিশালী প্রতিপক্ষ তৈরী করার। সে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যদিও এসব প্রক্রিয়া শেষ অবধি ফল দেবে বলে আপাতত মনে হচ্ছেনা। সেক্ষেত্রে, সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে শেষ সময়ে আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করে শহীদী মর্যাদা দেওয়ার একটা ক্ষ্যাপাটে এটেম্ট ই*উনুস সরকার নিয়ে নিতেও পারে। তবে সেই চেষ্টাও তেমন কোন ফায়দা দেবেনা।
ইতিমধ্যেই রাজনীতিতে এবং সরকার পরিচালনায় ই*উনুচের প্রভাব দৃশ্যমান কমতে শুরু করেছে। সমন্বয়কদের “রাজুতে আয়” ডাক বিএনপির “ঈদের পরের সরকার পতনের আন্দোলন” ডাকার মতোই হাস্যকর হতে শুরু করেছে। সংবিধান বাতিল কিংবা রাষ্ট্রপতির অপসারণের মতো বড় প্রজেক্টগুলোতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব শুধু সুপার ফ্লপই করেনি, রাজনৈতিকভাবে বিরোধিতার মুখে পড়েছে।
এ অবস্থায় বাংলাদেশের আম্বিয়া বেগমও জানে যে, ই*উনুচ সরকারের একমাত্র মুরুব্বি আমেরিকা, সেই আমেরিকা এখন আর উনার বন্ধু ক্লিনটন ঘরানায় নেই। বরং ই*উনুসের সাথে ব্যক্তিগত পর্যায়েই ট্রাম্পের দূরত্ব আছে হিলারির সাথে বন্ধুত্বের কারণে।
তাছাড়া বাংলাদেশের মবোক্র্যাসি, হিন্দু নির্যাতন, পাহাড় অস্থিরতা, আ*সারুল্লাহ বা*লা টীমের শক্তিপ্রদর্শন এসব নিয়ে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত কনসার্ন তাঁর নির্বাচনী ম্যান্ডেটে পর্যন্ত প্রকাশ পেয়েছে।
সুতরাং প্রফেসর ই*উনুস যতোই “ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে কাজ করতে উন্মুখ হয়ে আছি” টাইপ বিগলিত শুভেচ্ছা জানান না কেন, ট্রাম্প ই*উনুস প্রশাসনের সাথে কাজ করতে উন্মুখ নন, সেটা আপাতত ধরে নেওয়া যায়। এ অবস্থায় ট্রাম্পের আমেরিকা বাইডেনের আমেরিকার মতো বাংলাদেশের সাথে নেই মানে, ই*উনুস সরকারের অবস্থা উনার দুর্বল হ্রদপিন্ডের মতোই নড়বড়ে। সেনাপ্রধানের সাথে ক্যামেরা এক্যাশন ওয়ান টু থ্রি বলে পিরিয়ডিক ছবি প্রকাশ করে সেই নড়বড়ে ভাব লুকানো যাচ্ছেনা। মাঠে নির্বাচনের চাপ বাড়ছে।
এখন তল্পি গোটানোই সরকারের জন্য সর্বোত্তম অপশন। এবং ওয়াকার-ই*উনুস সরকারও দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করে মান সম্মান যতোটুকু আছে সেটুকু থাকতে থাকতে বিদায় নেবেন। সংস্কার টংস্কার যা খুশি করতে চায় ওগুলো পলিথিন এবং সেন্টমার্টিনের প্রবাল নিয়ে হর্ণি শিৎকারের মধ্যেই শেষ হবে।
এ পর্যন্ত সব হিসেবে সব ফায়দাই আওয়ামীলীগের ঘরে। প্রশ্ন হচ্ছে এই ফায়দা কাজে লাগিয়ে আওয়ামীলীগ দল হিসেবে রাজপথে ফেরার মতো সাংগঠনিক অবস্থায় আছে কিনা! দলকে সংগঠিত করার মতো কোন উদ্যোগ তিনমাসেও দেখা যায়নি। ই*উনুস সরকারের হাতে নিহত, আহত, গ্রেফতার এবং মামলার আসামী হওয়া নেতা কর্মীর তালিকাও এ পর্যন্ত আওয়ামীলীগ করে উঠতে পারেনি। ওবায়দুল কাদেরের বারোশো প্লাস ছবি এবং হাসান মাহমুদের বাকোয়াজ গাল গল্প যদি আওয়ামীলীগ আবারও মানুষের সামনে হাজির করতে চায় তো, ট্রাম্প স্বয়ং বাংলাদেশে এসে পাহারা বসালেও আওয়ামী লীগের কোনো লাভ হবে না। ফেসবুক থেকে