তসলিমা নাসরিন : জঙ্গি জিহাদিদের জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যত ধর্ম ব্যবসায়ী ওয়াজি, সব দেশে ফেরত এসেছে। দেশে জামাতে ইসলামির রাজত্ব। নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী হিযবুত তাহরীরের মিছিল মিটিং ফ্ল্যাগ পোস্টার প্রকাশ্যেই চলছে। আইসিসের ফ্ল্যাগ প্রদর্শন চলছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সব ভাস্কর্য ভাঙ্গা হয়ে গেছে, হিন্দুর দেব দেবীর প্রচুর প্রতিমা ভাঙ্গা হয়ে গেছে, মাজার ভাঙ্গা সারা, আদিবাসিদের বাড়ি ঘরে উপাসনালয়ে হামলাও কমপ্লিট। এখন বৌদ্ধরা জানিয়ে দিয়েছে কঠিন চীবর দান নামে যে অনুষ্ঠান তারা করতো, সেটি করবে না। হিন্দুদের পুজো মন্ডপে পাহারা বসেছে। কাদের হাত থেকে তারা বাঁচাতে চাইছে মণ্ডপ? পুলিশ যথেষ্ট নেই, ভয়ে তারা কাজে আসছে না। যেভাবে জবাই করা হয়েছে পুলিশকে! ট্রমাই কাটেনি পুলিশের। মোট কজন পুলিশকে জবাই করা হয়েছিল আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে। কেউ বলে ছশো, কেউ বলে হাজারের ওপর।
যে নেতারা সরকারের পতন ঘটিয়েছিল, খবর বেরিয়েছে তাদের অধিকাংশের নাম জামাতে ইসলামির ছাত্র সংগঠন শিবিরের খাতায় লেখা। তাদের অনেকে মুক্তিযুদ্ধ কেন হয়েছিল সেই ইতিহাসই জানে না। মাদ্রাসায় মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস পড়ানো হয় না। মাদ্রাসা পরবর্তী পাঠচক্রে যোগ দেওয়া ছেলেপুলেদের ইন্টেলেকচুয়াল ভাবার কোনও কারণ নেই। পাঠচক্রে ইসলামি বইও থাকে, যেসব বইয়ে শর্টকাটে জান্নাত কী করে পাওয়া যায় তার নকশা থাকে, খিলাফত কী করে প্রতিষ্ঠা করতে হয়, তারও কায়দা কানুন থাকে।
আওয়ামী পন্থীরা সব গর্তে লুকিয়েছে, নয় ভেগেছে, নয় জেলে পচছে। এই সরকার আওয়ামী লীগকে আর রাজনীতি করতে দিতে চায় না। বাটন টেপা হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ এখন অতীত। বিএনপির জন্যও কি বাটন টেপা হয়ে গেছে? জানি না। আওয়ামী পন্থী সাংবাদিকরা জেলে। মন্ত্রীরা পালিয়ে গেছে। কেউ কেউ বিপদ আঁচ করে জামাতে ইসলামিতে যোগ দিয়েছে।
মাঝে মধ্যে মনে হয় অধিকাংশ লোক চাইছে শরিয়া, শরিয়া আইন কায়েম হয়ে যাক। গণপ্রজাতন্ত্রী হয়ে উঠুক ইসলামি রাষ্ট্র । গণতন্ত্র নিপাত যাক। বোরখার ভেতরে ঢুকে যাক পরনির্ভর রমণীকূল। ঘরে ঘরে চার বিবি নিয়ে ফোর-সাম চলুক। ইহকালে কতিপয় হুর, পরকালে অজস্র। বাকস্বাধীনতা হয়ে উঠুক অচেনা দেশ। মাঝে মধ্যে আবার এও মনে হয়, বড় একটা বিপ্লব ঘটুক। সূত্র : https://www.facebook.com/nasreen.taslima