কবির য়াহমদ : ডিবি হারুনের ‘ভাতের হোটেলে’ পেটপুরে খেয়ে সমন্বয়কগণ যখন ‘দাসখত’ দিয়ে আন্দোলনের একপ্রকার সমাপ্তি টেনেছিলেন, ‘সমাপ্তঘোষিত’ সেই আন্দোলনকে ফের জাগরূক করেছিলেন জেড আই খান পান্নার মতো আইনজীবীরা।
জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট ছিল হাইকোর্টে এক রিট, এবং বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের বেঞ্চের মন্তব্য; ‘জাতির সঙ্গে মশকরা করবেন না। ধরে নিয়ে এসে খাওয়ার টেবিলে বসাতে পারেন না।’ মাঠের বাইরে ঘাটের জোরের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের প্রকাশ তখন।
হাইকোর্ট এই মন্তব্য করেছিল সমন্বয়কদের মুক্তি ও আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে আইনজীবী মানজুর-আল-মতিন ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকার রিটের শুনানিতে। এই রিটের পক্ষে লড়েছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না।
জেড আই খান পান্নার মতো আইনজীবী ঋজু হয়ে না দাঁড়ালে আন্দোলন হয়ত আগস্টের আগেই শেষ হয়ে যায়! রিটের আবেদনকারী এবং শুনানি শেষে সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া বক্তব্যে মানজুর-আল মতিন কিছু সময়ের জন্য আলোচিত হয়েছিলেন সে সময়, কিন্তু এরপর অন্যদের দ্বারা তাদের ক্রেডিট ছিনতাই হয়ে যায়।
সমাপ্তঘোষিত আন্দোলন যাঁর কারণে ফের জেগেছিল, সেই আইনজীবী এখন অন্তর্বর্তী সরকারের তুমুল সমালোচক। সমালোচনার কারণ মূলত সরকারের একাত্তর-বিরোধী নানা পদক্ষেপ। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মুছে দেওয়ার সরকারি-প্রকল্প মেনে নিতে পারছেন না।
মুক্তিযুদ্ধের মানুষ জেড আই খান পান্না তাই রাষ্ট্রযন্ত্রের চোখে এখন ‘দুশমন’। এই দুশমনকে শায়েস্তা করতে মামলার ব্যবস্থা হয়েছে। চলো মামলা করে আসি অবস্থার মধ্য দিয়ে যাওয়া দেশে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কিন্তু এই মামলা দিয়ে কি কিছু করা যাবে তাঁর? এই মামলা বরং তাঁর অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে। মোহে থাকা মানুষদের মোহের দুয়ারে কুঠারাঘাত করবে। অনুকম্পাপ্রত্যাশী ছাড়া বাকিদের টনক নড়তে শুরু করবে।
যেখানে দাঁড়িয়ে এই বর্তমান, তার অন্যতম ‘স্প্যান’ এই জেড আই খান পান্না। তাঁকে কীভাবে অগ্রাহ্য আর অসম্মান করা সম্ভব? তিনি আর তারা ছিলেন বলে ভাতের হোটেলের বাহারি টেবিলে রচিত হতে যাওয়া ছোটগল্পকে উপন্যাসে রূপ দেওয়ার পথ ধরিয়ে দিয়েছিলেন। লেখক:সাংবাদিক ও কলামিস্ট। ফেসবুক থেকে