মহিউদ্দিন মোহাম্মদ : শেখ মুজিবকে নিয়ে কখনো কিছু লিখি নি। ভালোও নয়, মন্দও নয়। তাঁকে ঘিরে ছড়া, গল্প, ও দরুদ লিখে অনেকেই বাগিয়ে নিয়েছেন পুরস্কার, কেউ কেউ আশায় ছিলেন রুই মাছের, বরাদ্দ দিয়েছিলেন বাংলার আকাশ, কিন্তু আমি এ পথ ধরি নি। কারণ স্বাধীনভাবে তাঁকে নিয়ে লেখার সুযোগ আমার ছিলো না। আওয়ামী লীগ তাঁকে দখল করে রেখেছিলো বহু বছর। করে তুলেছিলো ক্লিশে। কিন্তু আজ তিনি বিপন্ন। এ জন্য লিখছি।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সাথে মুজিব জড়িয়ে আছেন ওইভাবে, যেভাবে জিলাপির সিরায় জড়িয়ে থাকে চিনি ও গুঁড়। তাঁকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস কল্পনা করা যাবে না। তাঁকে মোছা যাবে না ব্লিচিং ও ডিটারজেন্ট দিয়ে। তিনি জাতির জনক কি না, তাঁকে বঙ্গবন্ধু ডাকা ঠিক হবে কি না, সেটি ভিন্ন বিষয়, কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান সংগঠক তিনি। তিনি সেই কাঙ্ক্ষিত দাই মা, যিনি হাত বাড়িয়ে ইতিহাসের গর্ভ থেকে ‘বাংলাদেশ’ নামক সন্তানটি টেনে বের করেছিলেন।
অথচ তাঁর বাড়িটা আপনারা পুড়িয়ে দিলেন। শেখ হাসিনার পাপের লাঠি দিয়ে তাঁকে আঘাত করলেন। গণঅভ্যুত্থানের মালিকরা এ কাজের প্রতিবাদ করে নি। কারণ তাদের সে-স্বাধীনতা নেই। একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে তারা ভয় পায়। শুধু সেসব কথাই বলে, যেসব কথায় শয়তান রাগ করে না। শয়তানের মন যোগাতে সকলেই খুব সচেষ্ট। জাতির বাকস্বাধীনতা নিয়ে যারা উদ্বিগ্ন, তাদেরকে নিজের বাকস্বাধীনতা নিয়েও উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। বাকস্বাধীনতা শুধু সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার নয়। জনগণের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকারও বাকস্বাধীনতা।
মুহাম্মদ ইউনূসকে বলবো, বাড়িটি মেরামত করুন। জড়িতদের বিচারের ঘোষণা দিন। এ বাড়ি পুড়ে যাওয়া আর আপনার সরকার পুড়ে যাওয়া— দুটি একই জিনিস। আপনি যে-দেশের প্রধান উপদেষ্টা, বা প্রধান ভগবান, সে-দেশের জন্মঋণ এ বাড়িতে রয়েছে। এ ঋণ গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণের মতো পরিশোধযোগ্য নয়।
শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। তাঁর মন্ত্রীসভা ও এমপিসভা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু নিরীহ আওয়ামী লীগ কর্মীরা, যারা শেখ হাসিনা থেকে কোনো সুবিধা নেন নি, তারা দেশেই আছেন। তাদের অধিকার রয়েছে— শেখ মুজিবের মৃত্যুদিবস শোকের সাথে পালন করার। এ অধিকার নিশ্চিত করুন।
পর্যালোচনা / ১৩ আগস্ট / ২০২৪। ফেসবুক থেকে