জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
লেডিঞ্জে গ্রেন্ড, স্টকহোম,সুইডেন
মতামত

বাংলাদেশ থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ এবং বাংলাদেশের সাংবাদিকতার প্যাটার্ন

শওগাত আলী সাগর : লন্ডনভিত্তিক ‘ফাইনান্সিয়াল টাইমস’ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সাক্ষাতকারটি বাংলাদেশের প্রত্যেক অর্থনৈতিক রিপোর্টার, এমনকি সম্পাদকদেরও মনোযোগসহকারে পড়া উচিত বলে আমার মনে হয়। শুধু পড়াই নয়- এটি নিয়ে আলোচনাও হওয়া দরকার।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনেরা বাংলাদেশ থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে- খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্ণরের মুখ থেকে এমন বক্তব্য পাওয়ার পর যে কোনো রিপোর্টারই মনে করতে পারেন- তার দায়িত্ব শেষ, এখন ছেপে দিলেই হয়। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার প্যাটার্ণ সম্ভবত এমনি। কিন্তু ফাইনান্সিয়াল টাইমস আরো বেশি কিছু দরকার বলে মনে করেছে। বলাই বাহুল্য- ফাইনান্সিয়াল টাইমস যেটা করেছে- সেটাই সাংবাদিকতার স্ট্যান্ডার্ড।

ফাইনান্সিয়াল টাইমস এস আলম গ্রুপের আইনজীবী প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য যুক্ত করেছে- যেটি এই ধরনের রিপোর্টের ক্ষেত্রে অবশ্যই করণীয়। এস আলম গ্রুপের ব্যাংক দখলের সাথে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ‘ডিজিডিএফআই’র সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলেছেন গভর্ণর। ফাইনান্সিয়াল টাইমস ডিজিডিএফআইর সাথে কথা বলার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করেছে, যোগাযোগ করতে পারেনি। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দপ্তরের কাছে বক্তব্য চেয়েছে তারা কোনো বক্তব্য দেয়নি। আমরা হয়তো ভাবতাম- যেখানে গভর্ণর অন রেকর্ড কথা বলেছে- সেখানে এত্তো ঝক্কি পোহানোর কী আছে। ফাইনান্সিয়াল টাইমস ভেবেছে- ঝক্কিটাই আসলে সাংবাদিকতা, ইন্টারভিউটুকু সাংবাদিকতা নয়।

কানাডীয়ান মিডিয়ার অভিজ্ঞতাটাও এই ফাঁকে শেয়ার করে রাখি। গভর্ণর, এমনকি প্রধানমন্ত্রী কোনো অভিযোগ করলেও এমনকি কোনো অপরাধে পুলিশ অভিযোগ গঠন করলেও পত্রিকা/টেলিভিশন খবরটি প্রচারের সময় বাড়তি দুটো লাইন যোগ করে দেয়। এই অভিযোগটি কোনো আদালতে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এখনো প্রমাণিত হয়নি, এই অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে আমরা স্বাধীনভাবে কোনো অনুসন্ধান করিনি।
সাংবাদিকতা কেবল বক্তৃতা প্রচার করা নয়, সেই বক্তৃতার সত্য মিথ্যা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পাঠককে সহযোগিতা করাও বটে। লেখক: কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক। ফেসবুক থেকে