জানুয়ারি ২২, ২০২৫
লেডিঞ্জে গ্রেন্ড, স্টকহোম,সুইডেন
মতামত রাজনীতি

নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা আর উচ্চ দ্রব্যমূল্যই এখন মূল সংকট দেশের

ফজলুল বারী : দেশে নাকি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির ইন্ধন দেয়া হচ্ছে! এমন বক্তব্য দেখে হাসি পায়। ইউনুস সরকার আর সেনাবাহিনীর উদ্যোগে বৃহস্পতিবারের ব্রিফিংএ একই অভিযোগ করা হয়েছে। এর কারন তারা সত্য এড়িয়ে যেতে চাইছেন অথবা সত্য বুঝতে পারছেননা। প্রথম আসি ইস্কন প্রসংগে। বাংলাদেশের সব মুসলমান জঙ্গী সংগঠন এখন প্রকাশ্যে কাজ করছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের এই সংগঠন হঠাৎ করে সরকারের মাথাব্যথার কারন কেন হলো? কারন হলো এই সংগঠন গত তিনমাস ধরে দেশের হিন্দুদের যেভাবে জুলুমের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করেছে তা দেখে সরকারি লোকজনের মাথা খারাপ অবস্থা!

আগে হিন্দুদের মারলে ভয় দেখালে তারা ভারতে চলে যেতো। অথবা ভারতে পাঠাতেই ভয় দেখানো হতো। এখন তারা রুখে দাঁড়ায়! মিছিল করে বলে এই দেশ আমার জন্মভূমি। আমি এখান থেকে কেন যাবো। আমরা জন্মভূমি ছেড়ে কোথাও যাবোনা। দেশটা কি তোদের বাপদাদার?
ইস্কন ইস্যুতে দেশের হিন্দুদের ভয় দেখাতে এর নেতা চিন্ময় প্রভুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে চিন্ময় সহ ইস্কন নেতাদের। দালাল হিন্দু নেতাদের বিপরীতে চিন্ময় প্রভু হয়ে উঠেছেন দেশের হিন্দু সমপ্রদায় বিশেষ করে তরুন হিন্দুদের নেতা।
ইস্কন নেতাদের বিরুদ্ধে সরকারের দমন পীড়নে লাভ হয়নি। বাংলাদেশ ছাড়াও প্রতিবাদ সৃষ্টি করেছে ভারতে ও সারা বিশ্বের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি মাঠে নেমেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রথম পক্ষ নিয়েছেন। ভারত সরকারের সাথে ইউনুস সরকারের সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটেছে।

চিন্ময়ের জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর সিদ্ধান্তের তাৎক্ষনিক বিরোধিতা করেছেন তরুন হিন্দুরা। এটাকে তাদের ঔদ্ধত্য, বেয়াদবি হিসাবে দেখা হয়েছে। চট্টগ্রামের আদালত পাড়া সহ নানা এলাকা এখন জামায়াত শিবিরের দখলে। হিন্দু যুবকদের বেয়াদবির বিরুদ্ধে তারা ঝাপিয়ে পড়েছে! নিহত হয়েছে এক আইনজীবী। দেখা গেল এই আইনজীবীও জামায়াতের। কাজেই সে শহীদ হয়ে গেছে! ঢাকা থেকে সমন্বয়করা ছুটে গিয়ে জামায়াতের পক্ষে হিন্দুদের বিপক্ষে সংহতি জানিয়েছে! রাজনৈতিক মেরুকরন যা হবার তাই হচ্ছে!
সব মিলিয়ে দেশের চলমান ভারত বিরোধী রাজনীতিকে আরেক দফা চওড়া করা হয়েছে! মাঝে একদল হঠাৎ করে বেসুরো আচরন করে বসে প্রথম আলো ডেইলি স্টারের বিরুদ্ধে। পত্রিকা দুটিকে ভারতের দালাল আখ্যা দিয়ে এ দুটিকে বন্ধের দাবি তুলে একদল মোল্লা। ইউনুস সরকার এবং বিএনপি দ্রুত এই মোল্লাদের থামিয়েছে! প্রথম আলো মোল্লাদের হোটেল সোনারগায় খানাপিনার ব্যবস্থা করেছে! জামায়াত সহ মোল্লা নেতারাও সেখানে ছিলেন! যাদের নিয়ে কার্টুন সবচেয়ে বেশি এঁকেছে ছেপেছে প্রথম আলো ডেইলি স্টার! আর এমন কার্টুন পত্রিকা দুটিতে দেখা যাবেনা!
এক মোল্লা নেতা সেই বৈঠকের একটি বর্ননা দিয়েছেন! তিনি বলেছেন, নামাজের সময় দেখা গেলো অনেক চেয়ার ফাঁকা! মানে তারা নামাজে চলে গিয়েছিলেন! অনেকে নামাজে যাননি বা নামাজ পড়েননি! তবু এ নিয়ে কেউ আপত্তি তোলেননি! এটাই নাকি তাদের সৌন্দর্য! তেল আর জলের না মেশার মিমাংসিত বিষয়টিও এভাবে প্রথম আলোর পাতায় মুদ্রিত অবস্থায় থাকলো!
আসলে দেশে যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তা একাত্তরের। এখন যারা ক্ষমতায় বসেছেন তারা এক চিন্তার, যাঁদের সমর্থনে ক্ষমতায় বসেছেন তারা আরেক চিন্তার। একাত্তরে এরা পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন। দেশ স্বাধীন হবার পর জয় বাংলা বলে স্রোতের সাথে মিশে যান। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আবার বাংলাদেশ জিনদাবাদ বলে স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করেন।

তখন ফ্রিডম পার্টি হয়েছে। ফ্রিডম পার্টিও মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতো। এখন নতুন আরেকটি ফ্রিডম পার্টি হচ্ছে! এরা তাদের বাপের একাত্তর পর্যন্ত ভূমিকা মানতে রাজি। বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত বাপ আর বাপ না। বাপ খারাপ মানে ভারতও খারাপ। ভালো পাকিস্তান। সব মিলিয়েই এটিই তাদের রাজনৈতিক লাইন!

আসলে এসব তেলে আর জলে যে মিশেনা এটিই দেশের মূল রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব। নানান ঘটনায় এসব বেরিয়ে পড়ে। এদের কাছে আওয়ামী লীগ মানে ভারত, হিন্দু মানে ভারত! এটা একাত্তরেও ছিল, পচাত্তরের ১৫ আগষ্টও তাই হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগষ্টেও ঘটেছে তাই!
শেখ হাসিনা নাকি তার নিজের দেশ ভারতে চলে গেছেন! শেখ হাসিনা কি পাকিস্তান যাবেন তারা আশা করছিলেন! এখন পর্যন্ত তারা বলেই চলেছে পালিয়ে গেছেন! একবারও বিমান বাহিনীর সেই কর্মকর্তাদের নাম মুখে আনার সাহস হলোনা! যারা শেখ হাসিনাকে নিরাপদ রাখতে ভারতে রেখে এসেছেন!

দেশের মূল সংকট কিন্তু টিসিবির গাড়ির পিছনের লাইনে! উচ্চ দ্রব্যমূল্যের সংকট মানুষের বড় সংকট! টিসিবির গাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী কিনতে পারলে ৪/৫শ টাকা সাশ্রয় হয়। মাছ মাংস বিক্রি করেনা টিসিবি। তাই এই মানুষগুলো মাছ মাংস খেতে পারেন না! এসবই দেশের মানুষের মূল সংকট! সরকার এর কোন সুরাহা দিতে পারছেনা। নানান জায়গায় দেশের মানুষকে ব্যস্ত রাখার বিষয়টি ধরা পড়ে যাচ্ছে!
বিএনপি নির্বাচন নিয়ে যে উদ্বেগে পড়েছে তা মুখ বলতে পারছেনা! ছাত্রদের রাজনৈতিক দল না হওয়া পর্যন্ত সেই দলের নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন দেয়া নিয়ে ছাত্র নেতৃত্বের আগ্রহ কম! সেই সংগঠন কবে কখন নির্বাচনে বিজয়ের অবস্থা অর্জন করবে?

আরেক বিষয় ঝুলিয়ে দিতে পারে নির্বাচন! আওয়ামী লীগের বিচারের পর নির্বাচন! বিচার শেষ হতে কত বছর লাগতে পারে? এর জন্য বিএনপি বলা শুরু করেছে তারা আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে চায়! এটা ভালোবাসা থেকে নয়। নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকে। আগে বিচার পরে নির্বাচন বললে নির্বাচন হবে না। এরজন্য বলছে ভোটে জনগণ আওয়ামী লীগের বিচার করবে! সাড়ে সাত কোটি মানুষকে ভোটের বাইরে রেখে নির্বাচন টেকসই হবে না। নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা আর উচ্চ দ্রব্যমূল্যই এখন মূল সংকট দেশের। নির্বাচন যত বিলম্বিত হবে তত লাভ হবে আওয়ামী লীগের!
লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক। ফেসবুক থেকে