এপ্রিল ১৮, ২০২৫
লেডিঞ্জে গ্রেন্ড, স্টকহোম,সুইডেন
বাংলাদেশ মতামত

ধর্ষণের সমাধান পথ- মৃত্যুদন্ড

বর্তমানে বাংলাদেশে যে সমস্যা টি মহামারি আকারে ধারণ নিছে তা হলো “ধর্ষণ”। কিছু দিন আগে ইভটিজিং মহামারি আকারে ছিলো। আসলে আমরা যে জিনিসটা বুঝার চেষ্টা করি নাই তা-হলো ইভটিজিং হলো ধর্ষণ করার পূর্ব লক্ষণ।

যাই হোক, নিজের বলতে লজ্জা লাগে যে এদেশে ৫ বছরের শিশু পর্যন্ত ধর্ষণ হয়। ৫ই আগস্ট ২০২৪ পরবর্তীতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি দিনে দিনে ভয়াবহ রূপে ধারণ করে। বিগত দুই মাস ধরে ইভটিজিং ধর্ষণ বেড়ে চলছে। গত কয়েকদিনে হাফ-সেঞ্চুরি হয়েছে। আমাদের সমাজের উন্নতি থেকেও অবনতি হচ্ছে। 

ধর্ষণ বাংলাদেশে একটি সর্বব্যাপ্ত অপরাধ চলেছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছর গড়ে প্রতি মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১১১ জন নারী। জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮৮৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের। ২০১৭ সালে ৮১৮ জন, ২০১৮ সালে ৭৩২ জন এবং ২০১৯ সালে ১ হাজার ৪১৩ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ২০১৯ সালে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছিল ৭৬ জনকে। আত্মহত্যায় বাধ্য হয়েছিলেন ১০ জন নারী। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৪ হাজার ৭৮৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬২৭ জন। তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সংখ্যা নেমে এসেছে ৩২৯ এ।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত চার বছরে বাংলাদেশে প্রতি ৯ ঘণ্টায় একটি করে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ শুধু গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেই দেখা যায় গত চার বছরে বাংলাদেশে প্রতিদিন অন্তত দুজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। প্রতি ৫ জনের ৩ জনই শিশু 

পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে, এই সময়ের মধ্যে শূন্য থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত ২ হাজার ৮৬২ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি পাঁচজনের মধ্যে তিন জনই শিশু।

সমাধান কী?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বের প্রায় ৩৮ শতাংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয় তাদের কাছের মানুষ দ্বারা। ছেলে ও মেয়েশিশুসহ বিভিন্ন বয়সী নারীর ওপর ধর্ষণের ঘটনা কয়েক দশক ধরে এতই বেড়ে গেছে যে এর প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে মানুষ আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছে। ধর্ষণ প্রতিরোধে মানুষ ধর্ষকের কঠোর শাস্তির দাবি তুললেও মনস্তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপট থেকে সেটাই একমাত্র সমাধান নয়। কারণ, ধর্ষণ একটি অপরাধমূলক আচরণ এবং সেই আচরণের প্রাথমিক ভিত্তি হলো নারীর প্রতি ক্রমান্বয়ে তৈরি হওয়া নেতিবাচক ও বিকৃত চিন্তাপ্রক্রিয়া বা দৃষ্টিভঙ্গি।

এ ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ধর্ষণ নামক আচরণকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও, ধর্ষণের সঙ্গে সম্পর্কিত নেতিবাচক ও বিকৃত চিন্তাপ্রক্রিয়াকে সমূলে উৎপাটন করা যাবে না। নারীর প্রতি নেতিবাচক ও বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গিকে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সংশোধন করতে হবে। সেই চিন্তাগত সংশোধন প্রক্রিয়ায় মূল্যবোধের শিক্ষা নিঃসন্দেহে প্রধান অনুঘটকের ভূমিকা পালন করবে।

আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের ভেতর যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে, তার পেছনে মূলত কাজ করছে মানুষের নেতিবাচক চিন্তাপ্রক্রিয়া ও আচরণ। মনস্তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপট থেকে বলা যায় যে মানুষের চিন্তাপ্রক্রিয়া ও আচরণ কেমন হবে, তার প্রাথমিক ভিত্তি ছোটবেলায় তৈরি হয়ে যায়। মানুষের পরবর্তী জীবনের চিন্তার ধরনে ও আচরণে নানা রকম নিয়মিত পরিবর্তন এলেও ছোটবেলায় তৈরি হওয়া প্রাথমিক ভিত্তিমূল প্রায় অপরিবর্তনীয় থেকে যায়।

ধর্ষণ এমন একটি অপরাধ, যা নির্মূল করতে রাষ্ট্রের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। আইনের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যেমন অত্যন্ত জরুরি, তেমনি সমাজে বিরাজমান ধর্ষকামী মনস্তত্ত্ব দমনে শিক্ষা ও সংস্কৃতির যথাযথ বিকাশও জরুরি।

বাংলাদেশ যেন আজ ধর্ষকের এক অভয়ারণ্যে পরিণত হতে চলেছে। শহরে, গ্রামে, পাহাড়ে, সমতলে, ঘরে, বাইরে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৃশংস নিপীড়ণের শিকার হচ্ছেন নারী। শিক্ষিত, কর্মজীবী, গৃহবধূ, শ্রমিক যে পরিচয়েরই হোক না কেনো ধর্ষকের নোংরা হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না কেউ। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত– শ্রেণির কোন ভেদাভেদ এক্ষেত্রে অন্তত দেখা যাচ্ছে না। নির্যাতনের শিকার সকলেরই এক পরিচয়- তারা নির্যাতনের শিকার। এ নির্বিচার ধর্ষণের কারণ খুঁজে বের করার সময় কিন্তু বয়ে যাচ্ছে। কেন ধর্ষকরা দম্ভের সাথে পৈশাচিকতা দেখিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে চারপাশে, কেন এই সোনার বাংলাকে তারা বারবার রক্তাক্ত করছে হিংস্র বিভৎসতায়– এই প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধানের সময় চলে যাচ্ছে।

আমরা সরকারের কাছে দ্রুত ন্যায্য বিচার চাই, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই যা হবে মৃত্যুদন্ড । ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যতদিন না হবে, ততদিন এই পিশাচদের আস্ফালন বন্ধ হবে না। অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি যদি দেয়া যায়, তবেই পরবর্তী সময়ে আরেকজন অপরাধ করতে ভয় পাবে। এভাবে বিচার সুনিশ্চিতের মাধ্যমে কমতে পারে এই বর্বরতা।