ফজলুল বারী : ড. ইউনূসের দেশে মিডিয়া এখন স্বাধীন? প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং ক্রমেই এক আতংকের নাম হয়ে উঠছে সাংবাদিকদের কাছে! একটু এদিক সেদিক হলেই ফোন করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম! আর এই ফোনের পর হয় শিরোনাম বদলাতে হচ্ছে নয়তো পুরো নিউজই গায়েব হয়ে যাচ্ছে!
শফিকুল আলম পশ্চিমা গণমাধ্যম এএফপিতে কাজ করতেন। তবে নিয়মিতভাবে ফেসবুকে শেয়ার করতেন, শিবির আর হেফাজতের নিউজ ও ভিডিও! এর ফল তিনি পেয়েছেন প্রেস সচিব হয়ে! বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে কাজ করা সংবাদদাতাদের সংগঠন ওভারসিজ করেসপনডেন্ট এসোসিয়শন অব বাংলাদেশ (ওকাব) থাকার পরও শফিকের নেতৃত্বে বছর দুই আগে গঠিত হয় বাংলাদেশ জার্নালিস্ট ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া বা বিজেআইএম। এর সদস্যরা সবাই ইসলামিক মতাদর্শের। এদের একমাত্র কাজ ছিল পশ্চিমা দূতাবাসে গিয়ে ওকাবের অন্য সদস্যদের নামে গীবত করা!
সম্প্রতি পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের এত শিক্ষক… ৩০০-৪০০-৫০০ শিক্ষক সবাই কেন এত ভিসি হতে চায়, আমি বুঝি না।” এসময় নিজের কথাও তুলে ধরে বলেন, “আমি তো কখনও ভিসি হতে চাইইনি।…শত শত ভিসি হতে চান, প্রো-ভিসি হতে চান, ইনারা পড়াতে চান না কেন। বুঝতে পারছি না আমি।”
এই নিউজ আসার পর প্রতিক্রিয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মাঝে। অনেকেই বলতে থাকেন শিক্ষা উপদেষ্টা সাধারণভাবে সব শিক্ষককে অপমান করেছেন। নড়চড়ে বসে সরকার প্রধান ইউনূসের প্রেস সচিব! কয়েক ঘণ্টা পরেই প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে হুমকি দেয়া হয়! আসে এক বিবৃতি। এতে লেখা ছিল, “আমরা সকল সংবাদমাধ্যমকে সতর্কতার সঙ্গে সংবাদ পরিবেশনের অনুরোধ জানাই।” সবার আগে প্রথম আলো পত্রিকা এই সংবাদ তুলে নেয়! শিরোনাম উঠিয়ে একনেকের ব্রিফিংয়ের অন্য একটি প্রসঙ্গ নিয়ে নিউজ করে পত্রিকাটি!
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে যে বার্তা আসে তাতে লেখা ছিল, “গত ৭ অক্টোবর পরিকল্পনা ও অর্থ উপদেষ্টা একনেক সভার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো জানানোর জন্য পরিকল্পনা কমিশনে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। শুরুতে তার ব্যস্ততা ও শারীরিক ক্লান্তির কথা বুঝাতে তিনি বলেছিলেন, তার কাছে চারশো থেকে পাঁচশো ভিসি, প্রোভিসি হওয়ার আবেদন আছে যা তিনি এখনো যাচাই-বাছাই শেষ করতে পারেননি।
“এ প্রসঙ্গে তিনি (ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ) মজার ছলে বলেছিলেন, সবাই ক্লাসে পড়ানোর চাইতে এসব পদে যেতেই আগ্রহী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজের প্রতি সত্যিকার অর্থে তার এ ধরনের মন্তব্য করার প্রশ্নই ওঠে না।” কিন্তু শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্যের ভিডিও আছে, সেখানে তিনি মজার ছলে এমন কথা বলেছেন, সেটি অনুমান করার সুযোগ ছিল না, আর এমন কথা তিনি নিজেও বলেননি।
সেই বিবৃতিতে এরপর লেখা হয়, “তার (ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ) হালকাভাবে বলা কথাকে পুরো শিক্ষক সমাজের প্রতি বিরূপ বক্তব্য হিসেবে কিছু কিছু সংবাদমাধ্যম সংবাদের শিরোনাম হিসেবে ব্যবহার করেছে, যা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। আমরা সকল সংবাদমাধ্যমকে সতর্কতার সঙ্গে সংবাদ পরিবেশনের অনুরোধ জানাই।”
প্রশ্ন হলো, কথা বলেছেন শিক্ষা ও বাণিজ্য উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টা নন। তাহলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং কেন বিবৃতি পাঠালো? সেই ব্যাখ্যাও নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি জনসংযোগ বিভাগ আছে, তাদের জনসংযোগ কর্মকর্তা আছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিছুই বলেনি। আগ বাড়িয়ে হুমকি দিল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব টকশো করতে নিজে আগ্রহী হয়ে বিভিন্ন চ্যানেলে যাচ্ছেন। আর এই সুযোগে অলিখিত সেন্সরশিপ রেখে আসছেন প্রতিটি চ্যানেলে!” লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক। সূত্র : https://www.facebook.com/profile.php?id=61552204160274