কবির য়াহমদ : হুসাইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে এরপর কবি হতে চেয়েছিলেন। ক্ষমতা দখলের পর তার কবিতা ছাপা হতে থাকে পত্রিকায়-পত্রিকায়। বিষয়টি ভালো লাগেনি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কবি মোহাম্মদ রফিকের। তার কলম থেকে বেরিয়ে এলো কবিতা; তার নাম ‘খোলা কবিতা’। খোলা কবিতা শিরোনামের দীর্ঘ কবিতায় মোহাম্মদ রফিক লিখলেন—‘সব শালা কবি হবে, পিঁপড়ে গোঁ ধরেছে উড়বেই,/ দাঁতাল শুয়োর এসে রাজাসনে বসবেই।’ অনেক লম্বা কবিতা। তবে লাইন দুটো ক্ষোভের-প্রতিবাদের। কবিতার জন্যে কবি মোহাম্মদ রফিককে মুখোমুখি হতে হয়েছিল সেনা-জেরার।
এরশাদকে উদ্দেশ্য করেই লিখা কবিতাটি। আগে এরশাদসহ সবাই কবি হতে চাইত। এরশাদের অনেকগুলো কবিতার বইও আছে।
আর এখন সবাই উপদেষ্টা হতে চায়। কোটা বিরোধিতার আন্দোলন করে নাম কামানো নাহিদ-আসিফ-মাহফুজরা উপদেষ্টা হয়েছেন। উপদেষ্টা হয়েছে আরও অনেকেই। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে উপদেষ্টা হয়েছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
ফারুকী উপদেষ্টা হওয়ার পরে অনেকেই এখন নিজেদের বঞ্চিত ভাবতে শুরু করেছেন। উনি এসএসসি পাস এটা উল্লেখ করে নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতার ফিরিস্তিও দিচ্ছেন অনেকেই। অনেকে আন্দোলনের ক্রেডিট দাবি করে নিজেকে যোগ্য প্রমাণে ব্যস্ততা দেখাচ্ছেন। বিষয়টি কৌতূকপ্রদ হয়ে যাচ্ছে।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে অনেকে এমনভাবে উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন যেন তার কোন যোগ্যতাই নাই উপদেষ্টা হওয়ার। অথচ প্রশ্নটা ফারুকীকে দিয়ে না করে বরং নাহিদ-আসিফ-মাহফুজ দিয়েই শুরু করা উচিত ছিল। এই তিনজনের কী যোগ্যতা উপদেষ্টা হওয়ার? স্রেফ শিক্ষার্থী কোটাকে কি ওখানে বিবেচনা করা হয়নি? এখানে তাদের থেকে ফারুকী বরং যোগ্যই। নয় কি?
আদর্শের প্রশ্নে টলটলায়মান ফারুকী। একবার একদিকে, আরেকবার অন্যদিকে। একই বিষয় কি প্রযোজ্য নয় আসিফ নজরুলের ক্ষেত্রে? এখানে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আর আসিফ নজরুলের মধ্যে অমিল নেই। তবে সাম্প্রতিক সব সমালোচনা ফারুকীকে নিয়েই।
মোহাম্মদ রফিক লিখেছিলেন—‘সব শালা কবি হবে, পিঁপড়ে গোঁ ধরেছে উড়বেই…’; বেঁচে থাকলে সময় দেখে এখন কি লিখতেন তিনি—‘সব শালা উপদেষ্টা হবে, পিঁপড়ে গোঁ ধরেছে উড়বেই…’? কবি নেই বলে প্রশ্ন প্রশ্নের পর্যায়েই থেকে গেল! তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘সব শালারা বাটপার’ স্লোগান শুনে মনে পড়ল মোহাম্মদ রফিকের কবিতার লাইনগুলোই! লেখক:সাংবাদিক ও কলামিস্ট। ফেসবুক থেকে