ভওস : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কৌশল বা অপকৌশলের কাছে পরাজিত হয়ে ক্ষমতার বাইরে এখন আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা প্রায় তিনমাস আত্মগোপনে থাকার পর বাহির হওয়ার কৌশল নিয়েছেন। কথা বলতে শুরু করেছেন। লক্ষ্য আগামী জাতীয় নির্বাচন। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরেই আওয়ামী লীগকে নতুন করে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রের দাবি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আবারও আসবে দলটি, এমনটিই বিশ্বাস নেতাকর্মদের। তাদের যুক্তি, শেখ হাসিনার সরকার বিশ্বে বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করেছে। দেশে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। ফলে মানুষ আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে।
সূত্র মতে, ভারত আমেরিকার নির্বাচনের পর পরই বাংলাদেশকে নির্বাচনের তাগিদ দিতে থাকবে। ধীরে ধীরে চাপ বাড়াবে। এই চাপ নানাভাবে আসবে। ভারত ইতোমধ্যেই ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ জারি রেখেছে। ইতোমধ্যেই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভিসা বন্ধ রেখেছে। এখনকার বাস্তবতা মেনে নিয়ে আগামী নির্বাচনকে টার্গেট করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ যাতে নিশ্চিত হয়, সেজন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। একইসঙ্গে ভারত তার মিত্র দেশগুলোকেও সঙ্গে নেবে বাংলাদেশ ইস্যুতে। রাশিয়া ভারতের সঙ্গেই কাজ করবে। চীন মধ্যপন্থা অবলম্বন করবে। কারও পক্ষে বিপক্ষে যাবে না।
জানা গেছে, ইউনূস সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে নানাভাবে চাপে রেখে ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের প্রথম টার্গেট আওয়ামী লীগ, দ্বিতীয় টার্গেন জাতীয় পার্টি। এই দুই দলকে চাপে ফেলতে পারলে সবশেষে বিএনপিকে কোণ্ঠাসা করার চেষ্টা করবে। এই উদ্যোগ সফল করার অংশ হিসেবে সংবিধান সংশোধন বা পুনর্লিখন বাস্তবায়নের কথা বলা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ইচ্ছা বাস্তবায়নের পথে বড় বাধা সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি। তাদের সরানোর প্রথম দফা চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এতে আমেরিকার সায় নেই। ভারতও রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধানের সরে বিপক্ষে।
ইউনূস সরকারের সুদূর প্রসারী কৌশল কিছুটা ধরতে পেরেছে বলেই মনে হয় বিএনপি। দলটি সংবিধান সংশোধনের বিরোধিতা করছে। রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধেও সায় নেই। রাষ্ট্রপতিতে অপসারণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা চাইছে, নির্বাচন দিয়ে ইউনূস সরকার ভালোয় ভালোয় চলে যাক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতের একজন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ব লেন, বাংলাদেশকে নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন। যেভাবে আওয়ামী লীগ সরকারকে হটানো হয়েছে তা ভালোভাবে নেয়নি ভারত। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই দেশব্যাপী জঙ্গিদের যেভাবে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী মৌলবাদী দলগুলোকে যেভাবে সামনে আসতে দিচ্ছে সরকার, তা অশনি সংকেত হিসেবেই দেখছে ভারত। বাংলাদেশ অনিরাপদ হলে ভারতও অনিরাপদ হয়ে উঠবে। ফলে ভারত কোনোভাবেই চায় না বাংলাদেশে উগ্র সংগঠনকারী কেউ ক্ষমতায় থাকুক।
তিনি বলেন, ভারত আওয়ামী লীগেই আস্থা পায়। কারণ আওয়ামী লীগ সেই বিশ্বাসটা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই প্রমাণ করেছে, যা বাংলাদেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলো পারেনি। বিএনপিও ভারতকে সহযোগিতা করেনি ক্ষমতায় থাকাকালে। ইউনূস সরকারও এখনো পর্যন্ত আস্থা দেওয়ার মতো কিছু করেনি। বরং ক্ষমতা এসে ভারতকে হুমকি দিয়ে বসে আছেন। সেভেন সিস্টার্স অশান্ত করার হুমকি দিয়ে ভারত সঙ্গত কারণেই ভালোভাবে নেয়নি। নেবেও না। ফলে আওয়ামী লীগই ভরসা। আওয়ামী লীগের প্রতি এখনো বাংলাদেশের জনগণ আস্থাশীল। তাদেরই কথা এখন বলছে দেশটির জনগণ। তারা বুঝতে পেরেছে, কোটা আন্দোলনের নাম করে আসলে আওয়ামী লীগকে হটানোর দীর্ঘমেয়াদী প্ল্যান করা ছিলো। যা স্বীকারও করেছেন ড. ইউনূস। আওয়ামী লীগই আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুতে ভারত ও তার মিত্ররা কাজ করবে।