উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চলের ১০টি গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত।
বুধবার (১৩ আগস্ট) সকালে ডালিয়া তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে পানি বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। তবে মঙ্গলবার বিকেল তা ২ সেন্টিমিটার নিচে নামলেও রাতভর বৃদ্ধি পেয়ে সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপরে চলে যায়। ফলে নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে।
পাউবো জানিয়েছে, আগামী দুই দিন এই অঞ্চলে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকতে পারে। এতে লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে স্বল্পমেয়াদি বন্যা দেখা দিতে পারে।
বন্যা সতর্কতা কেন্দ্রের বুধবার সকাল ৯টার প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার নিচে, ধরলা নদীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ৬৫ সেন্টিমিটার নিচে ও পাটগ্রাম পয়েন্টে ২৮৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে পাটগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, কালমাটি, বাহাদুরপাড়া, পলাশী এবং সদর উপজেলার ফলিমারী, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়নে পানি ঢুকেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জুলাইয়ের শেষ থেকে চলতি মাসে তিন দফা বন্যা হয়েছে। তবে প্রথম দুই দফায় পানি দ্রুত নেমে গেলেও এবার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে আমন ধান ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। অনেক পরিবার গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে উঁচু স্থানে।
মহিষখোচা ইউনিয়নের হালিমা খাতুন বলেন, দুই দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে, নদীর পানি ক্রমেই বাড়ছে। ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে, গরু-ছাগল উঁচু রাস্তায় বেঁধে রেখেছি। কোনো জনপ্রতিনিধি এখনো খোঁজ নেয়নি। এই বছরে তিনবার বন্যা হয়েছে।
খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘরের নিচে পানি ঢুকেছে, খাটের উপর বাচ্চাদের নিয়ে শুকনো খাবার খেয়ে সময় কাটাচ্ছি। ভারতের বৃষ্টির কারণে তিস্তার পানি বেড়েছে। আমরা তিস্তা নদীর স্থায়ী সমাধান চাই।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, ভারতের উজানে বৃষ্টিপাতের কারণে পানি বাড়ছে-কমছে। বর্তমানে পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে আছে। সকালের তুলনায় ২ সেন্টিমিটার কমেছে। ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।