নড়াইলের ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে ওষুধের সংকট চলছে। ফলে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের গ্রামীণ জনগোষ্ঠী।
তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রতিটি ইউনিয়নে চালু রয়েছে ‘ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র’। এসব কেন্দ্র প্রাথমিক চিকিৎসা, পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা, প্রসূতি সেবা ইত্যাদি প্রদান করে থাকে। কিন্তু গত সাত মাস ধরে এসব কেন্দ্রে ওষুধের কোনো সরবরাহ নেই, ফলে কার্যত রোগীশূন্য হয়ে পড়েছে কেন্দ্রগুলো।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, নড়াইল জেলার তিনটি উপজেলায় রয়েছে ৪০টি ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং একটি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। এর মধ্যে সাতটি কেন্দ্র সিভিল সার্জনের অধীনে পরিচালিত হয়। বাকি কেন্দ্রগুলো পরিচালনা করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। সিভিল সার্জনের অধীনে সদরে তিনটি, লোহাগড়ায় তিনটি এবং কালিয়ায় একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ ফ্রি ওষুধের আশায় এই কেন্দ্রগুলোতে আসলেও এখন ওষুধ না পেয়ে তাদের খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। রোগী আসা কমে যাওয়ায় এখন এসব কেন্দ্র প্রায় ফাঁকা পড়ে থাকে।
সরেজমিনে শাহাবাদ ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, পুরো কেন্দ্রটি নিস্তব্ধ। একটি কক্ষে চুপচাপ বসে আছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার। কিছুক্ষণ পর সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আসেন আলোকদিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন। ডাক্তারকে সমস্যার কথা জানালে তিনি একটি ব্যবস্থাপত্র হাতে ধরিয়ে দেন।
কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালে এসেছিলাম ডাক্তার দেখিয়ে ফ্রি ওষুধ নিতে। কিন্তু ডাক্তার শুধু একটা ব্যবস্থাপত্র দিয়ে দিয়েছেন, কোনো ওষুধ দেননি। আগে এখানে অনেক রোগী আসত, এখন ওষুধ না থাকায় কেউ আসে না। সারাদিনে এক-দুজন রোগী আসে, বাকিটা সময় কেন্দ্র ফাঁকা পড়ে থাকে।’
আনোয়ারের মতো অনেকেই এখন খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। বাদ পড়ছেন না মা ও শিশু রোগীরাও। গোপীকান্তপুর থেকে আসা সন্ধ্যা রানী বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আগে এখান থেকে ফ্রি ওষুধ পেতাম। কিন্তু গত ৬-৭ মাস ধরে ওষুধ নেই। আমাদের বাচ্চাদের অনেক সমস্যা হয়। সরকারের কাছে অনুরোধ—আমাদের প্রয়োজনীয় ওষুধ যেন সময়মতো দেওয়া হয়।’
এ বিষয়ে শাহাবাদ ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এখানে ২৫ প্রকার ওষুধ বরাদ্দ থাকত। কিন্তু গত ৭-৮ মাস ধরে কোনো ওষুধ সরবরাহ নেই। কিছু পরিবার পরিকল্পনার সামগ্রী থাকলেও, রোগীদের সেবা দেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় ওষুধ নেই। আগে প্রতিদিন ৫০-৮০ জন রোগী সেবা নিতে আসতেন, এখন আসে ১৫-২০ জন।’
নড়াইল জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আলিফ নূর বলেন, ‘পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রগুলোতে ওষুধের সংকট রয়েছে। এতে রোগীর উপস্থিতি কমে গেছে। তবে পরামর্শমূলক সেবা চালু রয়েছে। গর্ভবতী মা ও অন্যান্য রোগীদের চেকআপ দেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ওষুধ সরবরাহের কার্যক্রম চলমান রয়েছে, আশা করছি খুব দ্রুত সংকট কেটে যাবে। কেন্দ্রগুলো সবসময় খোলা থাকে এবং ওষুধ না থাকলেও চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।’