ঈদুল আজহার আগে এক আদেশে ১৫ সংবাদকর্মীকে চাকুরিচ্যুত করেছে ভোরের কাগজ কর্তৃপক্ষ। গত ২৭ মে পত্রিকাটির জেনারেল ম্যানেজার মো. আনিসুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক আদেশে বেতন-বোনাস ও পাওনাদি বুঝিয়ে না দিয়েই তাদের চাকুরিচ্যুত করা হয়। তবে অবসান সংক্রান্ত পত্রে আগামী এক মাসের মধ্যে পাওনা বুঝে দেয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে, গত ঈদুল ফিতরের আগে একযোগে ৪২ সংবাদকর্মীকে চাকুরিচ্যুত করে ভোরের কাগজ।
জানা যায়, সদ্য চাকুরিচ্যুত করা ১৫ সংবাদকর্মীর মধ্যে রিপোর্টার, সিনিয়র সাব এডিটর, সাব এডিটর, সিনিয়র আর্টিস্ট, ফটো সাংবাদিক রয়েছেন। সংবাদকর্মীদের দেয়া পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুসারে আপনার চাকুরির অবসান করা হচ্ছে যা অবিলম্বে কার্যকর হবে। চাকুরির অবসান সংক্রান্তে বকেয়া পাওনাদি আগামী ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের হিসাব শাখা থেকে পরিশোধ করা হবে। যদিও এর আগে যাদের চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে তাদের পাওনাও ঠিক মতো বুঝে দেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
প্রসঙত, অষ্টম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নসহ কয়েকটি দাবিতে সাংবাদিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে গত ২০ জানুয়ারি বন্ধ করে দেওয়া হয় দৈনিক ভোরের কাগজের প্রধান কার্যালয়। দুদিন পর আন্দোলনে অংশ নেওয়া ৪২ কর্মীকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। পরবর্তীতে প্রায় ৬৬ দিন পর গত ২৭ মার্চ ‘উদ্ভূত পরিস্থিতি’ নিয়ন্ত্রণে আসার কথা বলে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় খুলে দেয় কর্তৃপক্ষ। অফিস খুললেও সেখানে কোনো কাজ হয়না বলে জানা গেছে। যদিও পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। তবে, পত্রিকাটি কোথা থেকে প্রকাশিত হচ্ছে, তা জানেন না বলে জানান চাকুরিচ্যুত সংবাদকর্মীরা।
এ বিষয়ে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ভোরের কাগজের সাংবাদিক, কর্মকর্তা কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ করা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ভোরের কাগজের সংবাদকর্মীদের আন্দোলনের সঙ্গে মাঠে থাকবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন।
এদিকে, প্রচার সংখ্যায় কারচুপি ও প্রেস নিয়ে অসত্য তথ্য দেওয়ায় গত ২৪ মার্চ দৈনিক ভোরের কাগজের সরকারি মিডিয়া তালিকাভুক্তি বাতিল করে তথ্য মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর। মিডিয়া তালিকাভুক্তি বাতিলের চিঠিতে বলা হয়, গত ২০ জানুয়ারি ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ভোরের কাগজ সংবাদপত্রের অফিস এবং প্রেস চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের ৩ সদস্যের একটি পরিদর্শন টিম পরিদর্শন করে। পরিদর্শনকালে সংবাদপত্রের প্রধান কার্যালয় বন্ধের নোটিস দেখা যায় এবং অফিস বন্ধ পাওয়া গেছে।
চিঠিতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট হামরাই প্রিন্টিং প্রেস পরিদর্শন করে দেখা যায়, সংবাদপত্রটি বন্ধ আছে। এরপর সংবাদপত্রটি কোথায় ছাপানো হয় তা ডিএফপিকে জানানো হয়নি। এ কারণে সংবাদপত্র ও সাময়িকীর মিডিয়া তালিকাভুক্তি এবং নিরীক্ষা নীতিমালা, ২০২২ মিডিয়া তালিকাভুক্তি বাতিলের শর্তাবলী ৮.০০ এর ৮.৩ অনুযায়ী প্রচার সংখ্যা কারচুপি ও অসত্য তথ্য প্রদান করায় দৈনিক ‘ভোরের কাগজ’ সংবাদপত্রের সরকারি মিডিয়া তালিকাভুক্তি নির্দেশক্রমে বাতিল করা হলো।