ছোটবেলায় আমার আম্মুর কাছে একটা গল্প শুনেছিলাম। আমার আম্মু তার কোন এক ফুপু সম্পর্কে বলছিলেন। একদিন সকালবেলা সেই ফুফু আম্মুদের বাড়িতে সবাইকে বলে যে, আমি যে (গুসা) রাগ করেছি তোরা জানস?। তখন সবাই জিজ্ঞেস করল যে কেন রাগ করেছেন, কখন থেকে রাগ করেছেন? তো আম্মুর সেই ফুফু বলল গতকাল রাত থেকে। আমি সিদ্ধান্ত নিসি এই ব্যাডার (স্বামীর) সংসার আর করতাম না।
কিছুক্ষণ পর সেই বাড়িতে আম্মুর ফুফা (সেই ফুফুর স্বামী) এসে হাজির। ফুফাকে জিজ্ঞেস করা হলো যে ফুফু রাগ করেছে কেন? ফুপা বললেন আমার যতটুকু ধানের জমি ছিল সবটুকু আমি তোমাদের ফুফুর নামে লিখে দিয়েছি। এখন সে আমার শেষ সম্বল বাড়িটাও তাঁর নামে লিখে দিতে বলে। সেটা দিতে রাজি না হওয়ার কারনে সাথে সে রাগ করেছে। আমার সংসার আর করতনা সে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনুসও দেখি আমার আম্মুর সেই ফুফুর মতো গুসা করেছে এবং তা নিজের এজেন্টদের (Paid PR) মাধ্যমেই সবাইকে জানান ও দিয়েছে।
ধুরন্ধর ইউনুস তাঁর সংসার জীবনের হানিমুন পিরিয়ড মাত্র নয় মাসে – ০১. শ্রম আইন লঙ্ঘন ও অর্থপাচারের মামলাসহ নিজের নামে থাকা সকল মামলা অনৈতিকভাবে দ্রুত খারিজ করিয়েছেন ০২. ক্ষমতা অপব্যবহার করে জনগণের প্রাপ্য গ্রামীণ ব্যাংকের নামে থাকা ৬৬৬ কোটি টাকা কর মওকুফ করিয়েছেন ০৩. গ্রামীণ ব্যাংকের সকল মুনাফার উপর আগামী ৫ বছরের জন্য অনৈতিক কর মওকুফ সুবিধা নিয়েছেন ০৪. গ্রামীণ ব্যাংকে থাকা সরকারের মালিকানা শেয়ারের পরিমাণ ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে এনেছেন ৫. গ্রামীণ ইউনিভার্সিটির অনুমোদন নিয়েছেন ৬. গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেসের জনশক্তি রপ্তানির লাইসেন্স নিয়েছেন ৭. গ্রামীণ টেলিকমের ডিজিটাল ওয়ালেট চালুর অনুমোদন নিয়েছেন ৮. সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামাজিক নিরাপত্তা ফান্ডের ৭০০ কোটি টাকা Single Source Selection (SSS) এর মাধ্যমে গ্রামীণ ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করেছেন ৯. নিজের এনজিও সহকর্মী, আত্মীয়স্বজন আর এলাকার মানুষ দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র ভরে ফেলেছেন।
এগুলো তো কেবল গণমাধ্যমে আসা খবর, আর গোপনে যে কত কি করেছেন, কত অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন ও দিয়েছেন, এবং আর কি কি নেয়ার পরিকল্পনা করছেন তা আল্লাহ ভালো জানেন।
সম্প্রতি ইউনুসের পেইড এজেন্ট, জাতীয় নাগরিক পার্টি (NCP) প্রধান নাহিদ ইসলাম গনমাধ্যমে বললেন যে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগের কথা ভাবছেন। মুহুর্তেই এই সংবাদ গ্রামে গ্রামে, শহরে শহরে, এমনকি দেশের বাইরেও রটিয়ে দেওয়া হল।
শুরুতে গল্পে বলা ফুফু যেমন স্বামীর সমস্ত ধানের জমি লিখিয়ে নিয়েছিলেন, তেমনি আমাদের চৌকস মেধাবী ইউনুস মাত্র নয় মাসে কি কি নিয়েছেন তাঁর একটা তালিকা তো উপরের অংশে তুলে ধরেছি। এবার আসি সেই ফুফুর মতো ইউনুসের রাগের কারণটা আসলে কি ?
প্রফেসর ইউনুস পদত্যাগ করতে চান না, তেমন কোনও বাসনা তাঁর মনে আদৌ নেই, তিনি কেবল বিষয়টা বাংলাদেশের মানুষদের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। কী সেটা? আসলে নয় মাস হয়ে গেল, হানিমুন পিরিয়ড প্রায় শেষ, এরি মধ্যে প্রায় প্রতিদিন সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে আসছে নানান অনুযোগ, অভিযোগ, দুর্নীতির তথ্য, আর সরকারের ব্যর্থতার খবর।
এদিকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কারনে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল এখন বিএনপি। তারা চায় নির্বাচন। অন্যদিকে ইউনুসে বি টিম হিসেবে প্রসব করা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি এখনও নাবালক পার্টির তকমা থকে বেড়িয়ে আসতে পারেনি, কাজেই তারা নির্বাচনে সুবিধা করতে পারবেন। বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাদের হাল কী হবে? যে মবোক্রাসির জন্ম হয়েছে বাংলাদেশে তা যে কোনও সময়ে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হয়ে উঠবে নাহিদ ইসলাম, ইউনুস সেটা জানেন। জানেন বলেই একটা ডিফেন্স তৈরি করার চেষ্টা।
দেশবাসীর সামনে সংস্কার নামক একটা মুলা ঝুলিয়ে দিয়েছে, আর প্রতিদিন বলাবলি করছে আমরা তো সংস্কার চাই, আমরা তো একটা স্বনির্ভর বাংলাদেশ চাই কিন্তু আমাদের তা করতে দেওয়া হচ্ছে না, আমাদের পদে পদে বাধা দিচ্ছে ভারতের দালালরা। কাজেই আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান। হ্যাঁ, এই আবেদনের জন্যই নাহিদ ইসলাম সেদিন যমুনায় গেলেন আর বেরিয়ে এসে একমাত্র নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের জানালেন ইউনুস পদত্যাগ করতে চান। ব্যস, শুরু হয়ে গেল নতুন ইস্যু। বিএনপি থেকে জামাতের প্রতিনিধিরা প্রায় বাধ্য হয়েই দেখা করলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাথা ইউনুস সঙ্গে। কিন্তু ফলাফল কি হলো? যেই সেই।
একদিকে বিএনপি, বাম দলগুলো, সেনাবাহিনী নির্বাচন চায়, অন্যদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, জাতীয় নাগরিক পার্টি এখনই নির্বাচন হলে কূলকিনারা পাবেন না কাজেই তাঁরা নির্বাচন চান না, আর জামাত কিংকর্তব্যবিমুঢ় ।
আসল কথা হল তিনি পদত্যাগ আপনি করবেন না, নতুন নতুন যাত্রা পালা মঞ্চস্ত করবেন। কারণ আপনার মূল পরিকল্পনা এখনো বাস্তবায়ন করতে পারেননি। গল্পের ফুফুর মতো বাড়িটা এখনো নিজের নামে লিখে নিতে পারেননি, তাই তো খোকা রাগ করেছে ভাত খায়নি কাল।
সংস্কারের যে মুলা তিনি জনগণের সামনে তুলে ধরেছেন। তার আড়ালে মূল লক্ষ্য হচ্ছে তার টিম বি অর্থাৎ জাতীয় নাগরিক পার্টিকে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করা। কারণ এর আগে বিদেশি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন ছাত্রদের একটা রাজনৈতিক দল হওয়া উচিত, কারণ তারা জুলাই অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে তাদের ক্ষমতায় থাকা উচিত। কিন্তু তিনি সেটার বাস্তবায়ন অতি সন্নিকটে দেখতে পাচ্ছেন না। তাই তিনি গোসসা করেছেন।
আমেরিকার এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য নিজের দপ্তরে পদ সৃষ্টি করে নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে একজন অথর্ব অনভিজ্ঞ মার্কিন নাগরিক খলিলুর রহমানকে দেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। সেই খলিলুর রহমানের মাধ্যমে মানবিক করিডোরের নামে মার্কিনীদের হাতে বাংলাদেশের একটি অংশ তুলে দেয়ার নীল নকশা করছেন ইউনুস। এই আলোচনা বাইরে আসতেই রাজনৈতিক দল গুলোর আপত্তি, বিশেষ করে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকর-উজ-জামানের বক্তব্যে তিনি চরমভাবে খেপেছেন। সেনাপ্রধান যখন বললেন যে করিডোর ইস্যু নিয়ে আলোচনা করার অধিকার নির্বাচিত সরকারের হওয়া উচিত। এইটা শুনে ইউনুস সাহেব গুসসা করলেন। সেনাপ্রধান তার বক্তব্যে আঠারো মাসের মধ্যেই অর্থাৎ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার উপরে জোর দিয়েছেন। এই বক্তব্য শুনে স্যার ইউনূস আবারও গুসসা বাড়িয়ে দিলেন।
এদিকে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাত চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্রে তিনি বারবার বাধা প্রাপ্ত হচ্ছেন। যাদের পরিকল্পনা এবং নীল নকশা বাস্তবায়ন করার কাজ তিনি করে যাচ্ছেন অতি সুকৌশলে, সেই সব কাজে বাধা পড়ার কারণেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ইউনুস সাহেব বারবার রেগে লাল হচ্ছেন। এদিকে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ইউনুস সরকারের তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করছেন। পাশাপাশি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাকের শপথের জন্য আন্দোলন হচ্ছে। এত কিছুর ভিড়ে স্যার এখন করবেন কি? তার জন্যই তো এই নাটক। পদত্যাগ পদত্যাগ নাটক। কিন্তু যে বাংলাদেশের মানুষ পাকিস্তানেদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সেই দেশের মানুষ ইউনুস নামক প্রতারকের খপ্পড়ে পড়ে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব হারাতে দিবে না। তাই পরিশেষে বলতে চাই, নাটক কম করো পিয়।