মে ১২, ২০২৫
লেডিঞ্জে গ্রেন্ড, স্টকহোম,সুইডেন
বাংলাদেশ

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের নাটকের আড়ালে চলছে ভয়ংকর ষড়যন্ত্র-সীমান্তে যাচ্ছে অস্ত্রের বড় চালান, দেওয়া হচ্ছে করিডোর

গত ৫ই আগস্ট ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ক্ষণে ক্ষণেই বাংলাদেশে একটা লাইন বার বার আলোচিত হয় আওয়ামী লীগকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করা। বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি, অন্তর্ভুক্তি সরকারের প্রধানের অনাগ্রহের কারণে মাঝেমধ্যেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি স্থিমিত হয়ে যেত।

কিন্তু চলতি মে মাসের শুরুতেই হঠাৎ করে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং তাদের টিম বি জাতীয় নাগরিক পার্টির [NCP] সমন্বয়ে মঞ্চস্থ করা হয় একের পর এক নাটক। জাতীয় নাগরিক পার্টির একজন নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ হঠাৎ করেই গাজীপুরে সফরে গিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত বা আহত হওয়ার এক বিশাল নাটক মঞ্চস্থ করে। হাসনাত আব্দুল্লাহ কেন গাজীপুরে গিয়েছিলেন তার কোন অফিসিয়াল ব্যাখ্যা কিন্তু চাওয়া হয়নি, বা দেওয়া হয়নি। নাটকে বাড়তি মাত্রা যোগ করে আওয়ামীলীগ সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদের দেশ ত্যাগের মাধ্যমে। যদিও সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশের বাইরে যেতে আইনগত কোন বাধা ছিল না। তিনি সকলের সামনে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে থাইল্যান্ডে গিয়েছেন। কিন্তু যেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুসের নাটকটাকে আরেকটু লম্বা সময় ধরে চালিয়ে নিতে হবে, কারণ অস্ত্রের চালান তখনও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়নি। তিনি চিন্তা করলেন নাটকের এপিসোড আরো বাড়াতে হবে। যে কথা সেই কাজ, জাতীয় নাগরিক পার্টির কয়েকজন নেতাকে তিনি তার বাসভবন যমুনার সামনে দাঁড় করিয়ে দিলেন । কেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ দেশের বাইরে চলে গেলেন ? কিন্তু সেই আলোচনা হালে পানি পেল না কারণ তার বিদেশে যেতে কোনরকম আইনি বাধা ছিল না। শুরু হলো নাটকের নতুন পর্ব। হঠাৎ করে নারায়ণগঞ্জের সাবেক সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকে গ্রেফতারের জন্য রাতে তার বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হলো। স্থানীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সর্বসাধারণ সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন। পুলিশ সারারাত অপেক্ষা করে সকালবেলা সাবেক মেয়র কে তাদের হেফাজতে নিলেন। আদালতে পাঠানো হলো এবং পুলিশের সামনে তিনি সাংবাদিকদের কে ব্রিফিং ও করলেন। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিন্তু বেশ অমায়িক আচরণ করছে। কিন্তু না, বিষধর সাপের গায়ের উপরের ডিজাইন দেখে তার সৌন্দর্যে সবকিছু ভুলে গেলে হবে না। তার বিষাক্ত ছোবলের ভয়াবহতা কিন্তু মনে রাখতে হবে।

ইউনুসের বাস ভবন যমুনার সামনে এবং শাহবাগে যখন নাটকের স্ক্রিপ্টিং যখন চলছে, তখন ৮ই মে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাতার এয়ারওয়েজের OR-641 ফ্লাইটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদের (USAF) সদস্যের একটি দল ঢাকায় অবতরণ করে। তারা হলেন, ০১. Tara Lynn Alexzandri Strider (ডিরেক্টর অব লজিস্টিক) ০২. David Thomas Reifenber (প্রোডাক্ট সেলস ম্যানেজার, ডিএফএস গ্রুপ লিমিটেড) ০৩. Michael Cody Thacker (সিনিয়র ডিরেক্টর অফ লজিস্টিক এন্ড ফ্লিট ম্যানেজমেন্ট) এবং ০৪. Sergeant Marctin Lucas Vannorsda। বর্তমানে রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিন এ তারা অবস্থান করছেন।

সূত্র থেকে জানা যায়, মার্কিন নাগরিকদের বাংলাদেশ সফরে আসার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ভারী পণ্যবাহী বিমান আসার আগে সব ধরনের প্রস্তুতি যাচাই করা। তাদের বিরুদ্ধে ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (DIA) সঙ্গে যোগসূত্র থাকার অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে, গত ৩রা মে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দুই দিনের জন্য কাতার সফর করেছিলেন। এবং তার সঙ্গে ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম মহিউদ্দিন আহমেদ (পরিচালক ম্যাটেরিয়ালস অর্গানাইজেশনস) তারা দুজনেই কাতার ইয়ার ওয়াইজের QA-639 বিমানে কাতার ভ্রমণ করেছেন। সেনাবাহিনীর প্রধানের কাতার ভ্রমণ এবং তার কাছাকাছি সময়ের মধ্যে মার্কিন এয়ার ফোর্সের কর্মকর্তাদের বাংলাদেশ ভ্রমণ বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

সূত্র থেকে জানা যায় যে, এই বড় ধরনের অস্ত্রের চালান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে না পৌঁছা পর্যন্ত এই চারজন মার্কিন মার্কিন কর্মকর্তা ঢাকায় অবস্থান করবেন। এবং যে কার্গো বিমানের চালান ঢাকার বিমানবন্দর এসে পৌছাবে সেই কন্টেইনার গুলোতে মারাত্মক অস্ত্র থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এবং সেই অস্ত্র যদি মায়ানমার সীমান্ত পার হয়ে আরাকান আর্মির হাতে পৌঁছায় তাহলে মায়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধ আরও বেগবান হয়ে উঠবে। ফলে বাংলাদেশের সীমান্ত থাকবে উত্তপ্ত। আবারও দেশে প্রবেশ করবে রোহিঙ্গাদের বহর।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের নাটকের আড়ালে মানবিক করিডরের নামে দেশ বিক্রির পাঁয়তারা বাস্তবায়নের ব্যস্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান।
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের এই যে ঘটনাটাকে কেন আমরা নাটক বলছি। গত ৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ উপদেষ্টা পরিষদের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে বিচারকার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত কার্যক্রম চালাতে পারবেনা আওয়ামী লীগ। (জাতীয় দৈনিকগুলোকে দেখলেই তার প্রমান পাবেন)। যে সিদ্ধান্ত ৮ মাস আগে উপদেষ্টা পরিষদের মিটিং এ চূড়ান্ত করা হয়। সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি একই সিদ্ধান্ত নতুন করে দেওয়ার জন্য এত ঢাক ঢোল পিটিয়ে আয়োজন করার পেছনে উদ্দেশ্য কি?

সম্প্রতি বেশ কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর উঠে আসে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সীমান্তের ওপারে মায়ানমারে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো আরকান আর্মিদের নানা রকম সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। সবগুলো ঘটনা যদি একই মালায় গাঁথা হয়। তাহলে একটি কথায় বলা যায় বাংলাদেশের জন্য খুব ভালো কিছু অপেক্ষা করছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ইউনুস বাংলাদেশকে সংস্কার করতে নয় বরং আমেরিকান উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশকে ব্যবহার করছে।