মে ২৯, ২০২৫
লেডিঞ্জে গ্রেন্ড, স্টকহোম,সুইডেন
বাংলাদেশ রাজনীতি

মানবিক করিডোরের নামে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন – মাহবুবউল আলম হানিফ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন মায়ানমার এর রাখাইনে ‘মানবিক করিডোর’ বাংলাদেশের ভৌগোলিক স্থিতিশীলতা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়ার এই হটকারী সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বুধবার মাহবুবউল আলম হানিফ এর প্রেস সেক্রেটারি তারিকুল ইসলাম টুটুল সাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
রাষ্ট্রের নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যুতে অন্ত:বর্তী সরকার কিসের ভিত্তিতে এবং কোন প্রক্রিয়ায় ‘মানবিক করিডোর’ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ? মায়ানমারে সমুদ্র বন্দর থাকার পরেও কেন সেখানে ত্রাণ সামগ্রী পাঠাতে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হচ্ছে?
ইতিহাস বলে – আর্মেনিয়া,আজারবাইজান, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, কঙ্গো এবং সিরিয়া, কোথাও মানবিক করিডোরের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। ইউক্রেন-রাশিয়াতে জাতিসংঘ প্রস্তাবিত মানবিক করিডোরের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
মায়ানমার সরকারের সঙ্গে আরাকান আর্মির দীর্ঘদিনের সংঘাত চলছে, সেই উত্তপ্ত অঞ্চলে করিডোর স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হতে পারে। এই এলাকায় ভারত, চীনসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও পরাশক্তির স্বার্থ জড়িত থাকায়, মানবিক করিডোরের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে একটি সম্ভাব্য প্রক্সি যুদ্ধের কেন্দ্রে পরিণত করবে।
বস্তুত তথাকথিত এই মানবিক করিডোর এর নামে আঞ্চলিক ও ভূ-রাজনীতিগতভাবে এই অঞ্চলকে নিরাপদ ‘বাফার স্টেট’ হিসেবে তৈরি করে বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে চায় এই অন্ত:বর্তী সরকার ।
এর ফলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে আঞ্চলিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার যে জটিলতা তাতে জড়িয়ে পড়বে। বিশ্বের খুব কম মানবিক করিডোরই নিরাপত্তা ঝুঁকির বাইরে থেকেছে। এ ধরণের করিডোর চালু হলে সেই অঞ্চলে থাকা বিদ্রোহী বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীসহ অপরাধীদের সেটাকে অপরাধের নিরাপদ পথ হিসেবে ব্যবহারের বহু নজির রয়েছে।
‘মানবিক করিডোর’ বলতে আমরা সাধারণত বুঝি যেখানে শরণার্থী রয়েছে সেখানে তাদের সহায়তার জন‍্য ত্রাণসামগ্রী ও খাদ‍্যসামগ্রী প্রেরণের জন‍্য ব‍্যবহৃত প‍্যাসেজকে। মায়ানমার এর আভ‍্যন্তরীণ সমস‍্যার কারণে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী শরণার্থী হিসেবে আছে। ত্রাণসামগ্রী দিতে হলে বাংলাদেশের কক্সবাজারে যে রোহিঙ্গা ক‍্যাম্প আছে সেখানেই তো দেওয়ার কথা। মায়ানমারের অভ‍্যন্তরে তো কোনো শরণার্থী শিবির নেই।তাহলে সেখানে ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর কোন প্রয়োজন আছে কি?এটাকে ‘মানবিক করিডোর’ কোন যুক্তিতে বলা হচ্ছে?
মূলত ‘মানবিক করিডোর’ এর নামে এখানে আরাকান আর্মিকে সহায়তা এবং তাদেরকে অস্ত্র- গোলাবারুদ পাঠানোর জন‍্য এই ধরণের সিদ্ধান্ত এসেছে। যেটা বাংলাদেশের জন‍্য অত‍্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং দেশের মানচিত্র বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। কারণ এই ভৌগোলিক অবস্থানে আরাকান আর্মির সাথে যদি মায়ানমার এর সামরিক জান্তা, চীন, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্মিলিত একটা যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয় তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে।
দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে সেনাবাহিনীকে এ ব্যাপারে দৃঢ় ও সময়োচিত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাই। জাতির এই ক্রান্তিকালে, দেশের মানচিত্রের উপর আঘাত হানার পরিস্থিতিতে দেশের সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীলতা প্রত‍্যাশিত। ‌দেশের স্বাধীনতা – সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত আসে এমন হঠকারী আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই অন্ত:বর্তীকালীন সরকারকে।