কবির য়াহমদ : জুলাই-আগস্টে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির দেশে যারা পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর গুলিতে মারা গেছে, তাদেরৃ একটা শ্রেণির লোক ‘শহিদ’ তকমা দিতে চায়। অনেকটা জোর করেই এ প্রচেষ্টা। এই তকমা চেষ্টা/অপচেষ্টার মূলে রয়েছে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহিদকে অবমূল্যায়ন অপচেষ্টা। তারা সাবেক শাসকদের ‘গণহত্যাকারী’ বলতে চায় মূলত একাত্তরের পাকিস্তানি ও তাদের এদেশীয় দোসরদের গণহত্যাকে আড়াল করার চেষ্টা/অপচেষ্টার অংশ হিসেবে।
তাদের লক্ষ্য হচ্ছে, পরের প্রজন্ম ‘শহিদ’ বলতে বুঝবে কেবল চব্বিশের একটা পক্ষের নিহত লোকদের, ‘গণহত্যা’ বলতে বুঝবে কেবল চব্বিশের একটা অংশ। এতে আড়ালে পড়ে যাবে দীর্ঘ মুক্তির সংগ্রাম, স্বাধিকার-স্বাধীনতা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং পাকিস্তানিদের জেনোসাইড।
জুলাই-আগস্টে কেবল একটা পক্ষেই লোক মরেনি। আওয়ামী লীগবিরোধীরা যেমন মরেছে, তেমনি মরেছে পুলিশ ও আওয়ামীপন্থীরা। যদিও এদের কেউই ‘শহিদ’ নয়, তবু তর্কের খাতিরে প্রশ্ন– আওয়ামী লীগবিরোধীদের আপনি ‘শহিদ’ তকমা দিতে চাইলে নিহত বাকিদের কেন ‘শহিদ’ বলবেন না? মানুষের জীবনে-জীবনে ভেদ-বিভাজনের এই রেখা অনাকাঙ্ক্ষিত। সব মৃত্যুই এখানে অপ্রত্যাশিত; নয় কি?
জেনোসাইডের যে বিশ্বজনীন সংজ্ঞা ও মানদণ্ড, তাতে জুলাই-আগস্টের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো এর সবগুলো শর্ত পূরণ করে না। জুলাই-আগস্টের বাংলাদেশ এবং সাম্প্রতিক দেশ পরিস্থিতির কোনটি জেনোসাইডের বিশ্বজনীন মানদণ্ডের কাছাকাছি? জেনোস বা জাতিকে নির্মূল করার চেষ্টা কি চলছে এখন? উত্তর হ্যাঁ নাকি না? এখানে সাইড বা হত্যা অথবা নির্মূল চেষ্টা কি চলছে না? যারা বাঙালি জাতি হিসেবে নিজেদের মনে করে তারা কি আক্রান্ত হচ্ছে না? ক্ষমতাবান যারা তারা নিজেদের বাঙালি ভাবার চাইতে কি ভাবছে না অন্য কিছু? বিষয়টি অধিক আলোচনার দাবি রাখে। সারমর্মে যাবো না, নিজেরাই খুঁজে নিন!লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট। ফেসববুক থেকে