কবির য়াহমদ : কিছুদিনের মধ্যে এমন কিছু লোক নাজিল হয়ে যেতে পারে, যারা ঘোষণা দেবেন– ‘বিনা স্বার্থে, বিনা বেতনে উপদেষ্টা হিসেবে দেশ সেবায় কাজ করতে আগ্রহী। শুধু দেশ সেবা করতে চাই, অন্য কিছু নয়।’ উপদেষ্টা পদটি এখন এমন যে, এখানে আসিফ নজরুল ও আসিফ মাহমুদ এক কাতারে, এক কাতারে নেমে গেছেন সালেহ উদ্দিন ও নাহিদ ইসলাম, এ এফ হাসান আরিফ যেমন উপদেষ্টা তেমনি উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। কোটা নয় মেধা স্লোগান দিয়ে যাদের উদ্ভব-বিকাশ ও উৎপাত, তাদের সবশেষ আশ্রয় এখন সে কোটাই।
ছাত্রদের নিয়োগ দেওয়া প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস তার সরকারকে যেভাবে সাজিয়েছেন, সেখানে এনজিও আর এনজিও; বাদ বাকি চট্টগ্রামের; সিকি-আধুলির মতো বাকিরা পড়ে আছেন দেশের অন্য অঞ্চলের কোটায়। অন্তর্বর্তী সরকার বলেন, আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলেন, ইতিহাসে এমন কোন সরকারেরই পরিসর ১১ জনের বেশি ছিল না। এবার এটা বাড়তে বাড়তে পৌঁছে গেছে চব্বিশে। চব্বিশের আন্দোলনে সৃষ্ট সরকারে সদস্য সংখ্যা এখন পর্যন্ত চব্বিশই। বাড়তে পারে আরও, বিশেষ করে দেশের সবাই যেমন এক পায়ে খাঁড়া হয়ে আছে উপদেষ্টা হতে, তাতে এই সরকারে আরও উপদেষ্টা কেবল সময়ের অপেক্ষা।
ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে উপদেষ্টা পদ পেয়ে যাওয়া মোস্তফা সরয়ার ফারুকী উপদেষ্টা হয়ে যাওয়ার পর কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম হোসেন ওরফে হিরো আলম জানিয়েছেন, তিনি উপদেষ্টা হতে অনেক ফোন পাচ্ছেন। তার ফোন পাওয়ার বিষয়টি স্বতন্ত্রভাবে অনুসন্ধানের সুযোগ নাই, তবে আমি নিজেই তার উপদেষ্টা পদের একজন প্রস্তাবক হিসেবে নিজেকে হাজির করেছি। সুতরাং তিনি যে উপদেষ্টা পদ গ্রহণে চাপে আছেন, সেটা বুঝতে পারি!
নিয়মনীতি ব্যতিরেকে যখন যেমন তখন তেমন নীতিতে যখন সরকার, তখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের উপদেষ্টা পদ সৃষ্টি করে কিছু লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। উপদেষ্টাদের উপদেষ্টা পদে আবার শ্রেণিবিন্যাস করাও যেতে পারে এভাবে; উপদেষ্টার জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা, উপদেষ্টার কনিষ্ঠ উপদেষ্টা, উপদেষ্টার বিশেষ উপদেষ্টা রূপে। এতে মূল সরকারের পরিসর জায়গায় রেখে আরও কিছু লোককে সরকারের অংশ করা যেতে পারে। অনেকের ক্ষোভ প্রশমিত করা যেতে পারে।
কিছু পদ সৃষ্টি করা যেতে পারে এভাবে উপদেষ্টার অনলাইন উপদেষ্টা, উপদেষ্টার ভিডিয়ো উপদেষ্টা, উপদেষ্টার রাজনৈতিক উপদেষ্টা, উপদেষ্টার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, উপদেষ্টার স্বতন্ত্র উপদেষ্টা, উপদেষ্টার প্রবাসী উপদেষ্টা রূপে। এভাবে নানা নাম দেওয়া যায়। প্রস্তাবগুলো হাসির নয়, অনেক লোকের তড়পড়ানি দেখে তাদের শান্ত করার প্রচেষ্টা।
সবাইকে নানা প্রবোধে রাখা গেলেও যারা এখানেও সন্তুষ্ট হচ্ছেন না, তারা নিজ দায়িত্বে নিজেদের উপদেষ্টা রূপে আত্মপ্রকাশ করতে পারেন। এজন্যে কেবল ফেসবুকেই নয়, বাইরে সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন, আদালতে রিট করতে পারেন, মিছিল-মিটিং-মানববন্ধন করতে পারেন, পোস্টারিং করতে পারেন, গ্রাফিতি আঁকতে পারেন। এতেও যদি কাজ না হয় তবে ব্রহ্মাস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন আকিকা করে নামের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে পারেন উপদেষ্টা শব্দটা। সরকারের দিকে না তাকিয়ে নিজে নিজেকেই ঘোষণা করে দিতে পারেন সরকার, এবং মাননীয় উপদেষ্টা।
আকিকা করে নামের সঙ্গে উপদেষ্টা শব্দ যুক্ত করে যদি উপদেষ্টা হয়ে পড়েন, তবু কেন্দ্রীয় সরকারে কোন দপ্তর পাওয়ার নিশ্চয়তা আপনার নাই। এতে মন খারাপের কিছু নাই। নোবেলবিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের যেমন আছেন দপ্তরবিহীন উপদেষ্টা, আপনিও হবেন তার অনুরূপ। লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট। ফেসবুক থেকে