জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
লেডিঞ্জে গ্রেন্ড, স্টকহোম,সুইডেন
মতামত

সংস্কার একদফা কর্মসূচির কোথাও না থাকলেও সবাইকে মেনে নিতে হচ্ছে!

কবির য়াহমদ : বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের এক দফা দাবি ছিল শেখ হাসিনা সরকারের পতন। এই দাবিতে আন্দোলনের নেতৃত্বের সঙ্গে আরও কিছু রাজনৈতিক দল যোগ দিয়েছিল। তাদেরও দাবি ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের পতন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যে সরকার গঠিত হয়েছে, তাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের নেতাদের স্থান হয়েছে। অন্য অংশীজনেরা থেকেছে উপেক্ষিত। বিশেষত দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি হয়েছে উপেক্ষার শিকার।

প্রফেসর মুহাম্মদ ই উ নূ স কে যদি বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের আড়ালের মূল নেতা ভাবা হয়, তবে তিনি হয়েছেন সবচেয়ে বেশি লাভবান। তার সাজা মওকুফ হয়েছে। আর্থিক লাভ হয়েছে তার ৬৬৬ কোটি টাকা কর মওকুফ পাওয়ার মাধ্যমে। গ্রামীণ ব্যাংক পেয়েছে ৫ বছরের কর অব্যাহতি।

নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ উপদেষ্টার ও মাহফুজ আলম পেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর পদ। অন্য সমন্বয়কেরা পেয়েছেন বিপুল ক্ষমতা। ফরহাদ মজহার নিজের লোকদের বিভিন্ন জায়গায় বসাতে পেরেছেন।
সুইডেন আসলাম থেকে শুরু করে ডাকসাইটে স ন্ত্রা সী রা ছাড়া পেয়েছে জেল থেকে, বিভিন্ন জং গি গোষ্ঠীর নেতারা জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন, মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন অনেকেই, জামিন পেয়েছেন অনেক রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সাবেক আমলা মাহমুদুর রহমান দেশে ফিরেছেন, বিভিন্ন এনজিওর কর্তাসহ দৈনিক প্রথম আলো-ডেইলি স্টারকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবীরা সরকারের বিভিন্ন দায়িত্ব পেয়েছেন, জা মা য়া ত-শি বি র বিপুল স্পেস পেয়েছে, ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন দলের নেতারা বিপুল ক্ষমতাশালী ভাবছেন নিজেদের।

এখানে কী পেল বিএনপি? দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফ হয়েছে সত্য, কিন্তু এর দৃশ্যমান কোন প্রভাব নেই, কারণ আগে থেকেই তিনি নিজের বাসভবনে ছিলেন। তারেক রহমানের ছোট ছোট মামলা বাতিল হচ্ছে সত্য, কিন্তু তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা জাগেনি। বরং তারেক রহমানের সাজা পাওয়া মামলা নিয়ে কোন কথা নাই কারো, সরকার এটা নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তিনি বক্তৃতা-বিবৃতি দিতে পারছেন। আগেও দিতেন, তবে এখনকার মতো এত প্রচার পেত না, পার্থক্য কেবল প্রচারেই। কিন্তু তার স্ট্যাটাস আগের মতোই রয়ে গেছে।

নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে প্রায় নিশ্চিত। তবে আইনি বেড়াজালে পড়ে সাজা থাকায় তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। যদিও নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আগ্রহ নাই। তাদের আগ্রহ কেবলই সংস্কারে।
যে আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকার গঠিত হয়েছে, তাতে সবচেয়ে বড় অংশীজন বিএনপি নেই। বিএনপির দাবিদাওয়া পূরণেও আগ্রহ নেই সরকারের। বিএনপি খুশি থানার দখল আর বিভিন্ন জায়গায় ছোটখাটো দখল পেয়ে গেছে বলে। তবে এরবাইরে দেশের দখল নিয়ে রেখেছে অন্যরা। অল্পতে তুষ্ট এখানে বিএনপি।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনে ম্যান্ডেট ছিল সকল অংশীজনের। ওই সময় সংস্কার নিয়ে আলাপ ছিল না। কিন্তু আন্দোলনের নেতৃত্ব সরকার গঠন করে সংস্কারের নতুন আওয়াজ তুলেছে। এটাকে তাই মানতে হচ্ছে সকল অংশীজনকে। সংস্কার কর্মসূচি আন্দোলনে অংশ নেওয়া কারো ছিল না, এটা প্রথম আলো-ডেইলি স্টারকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবীদের মস্তিস্কপ্রসূত। এখন আন্দোলনের সকল অংশীজনকে এটা মেনে নিতে হচ্ছে। তারা নানা ভাবে নানা জায়গায় আটকা বলেই কিনা কথিত সংস্কারকে নিয়ে জোরালো বিরোধিতা করতে পারছে না।

খেয়াল করলে দেখবেন, অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা ও নানা সংস্কার কমিটির প্রধান থেকে শুরু করে সদস্যের অধিকাংশেরই বুদ্ধিবৃত্তিক পৃষ্ঠপোষক প্রথম আলো-ডেইলি স্টার। পত্রিকা দুটো দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে তাদেরকে আলোচনায় রেখেছে, কখনো কলাম ছাপিয়ে/লিখিয়ে, কখনো বিশেষজ্ঞের মন্তব্যে। দীর্ঘ এই চেষ্টা এখন সাফল্যের মুখ দেখেছে তাদের। এই গণমাধ্যমগুলোর সৌজন্যে তাদের অনেকেই দেশের পরিচিত মুখ।

সংস্কার একদফা কর্মসূচির কোথাও না থাকলেও এখন এটা সবাইকে মেনে নিতে হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে অনিশ্চয়তাকে জিইয়ে রেখে সংস্কার নিয়ে যত আলাপ এখন। অথচ রাজপথের আন্দোলনে যারা ছিল, বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনে যারা ছিল, আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ছাড়া আর কোন কর্মসূচি ছিল না তখন।
এক দফায় দাবি ছিল আওয়ামী লীগের পতন; সরকার পতনের পর সংস্কার শব্দটি নাজিল হয়েছে। এই নাজিল হওয়া শব্দটা নিয়েই এখন চলছে দেশ। লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট। ফেসবুক থেকে