শরিফুল হাসান : দুই মাস আগে অন্তবর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা। এখনো সেটাই চ্যালেঞ্জ। সাথে যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত দ্রব্যমূল্য ও যানজট। যেকোনো মূল্যে এই তিন সংকটের সমাধান জরুরি। কিন্তু এই তিনটার কোনোটাই স্বাভাবিক হচ্ছে না। আমি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হলে গত দুই মাসের পারফরম্যান্স দেখে কিছু রদবদল করতাম। কারণ এই তিন সংকটের সমাধান করতে পারলে বহু কাজ সহজ হয়ে যাবে আর না পারলে বাকি সব কাজ কঠিন।
দেখেন নিয়মিত খুন, গণপিটুনি ডাকাতি মানুষকে আতঙ্কিত করে। একটু খোঁজ নিলেই দেখবেন সাধারণ লোকজন বিরক্ত হতে শুরু করেছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও বেশ কয়েকটা মানবাধিকার সংস্থার মতে, সরকার পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক সহিংসতা ও সামাজিক বিরোধে গত দুই মাসে সারা দেশে অন্তত ৬২৫ জন নিহত এবং ১০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার। এর মধ্যে আগস্ট মাসে নিহত হয়েছে ৫৪১ জন এবং সেপ্টেম্বর মাসে ৮৪ জন।
অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। ডিম থেকে শুরু করে সবজি সবকিছুর ভয়াবহ দাম। বন্যা বা অন্য কারণ যাই বলা হোক বাস্তবত হলো কৃষক পর্যায়ে যে জিনিসের দাম ২০ টাকা বাজারে ১২০ টাকা। এর মানে সিন্ডিকেট আরো শক্তিশালী হয়েছে। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
আরেক অসহনীয় পরিস্থিতি ঢাকার যানজট। পরিস্থিতি এতো খারাপ যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বসে থাকতে হচ্ছে। কোনো না কোনো উপায়ে কিন্তু সমস্যার সমাধান করতে হবে। আমি অনেক বছর ধরে লিখছি দরকার হলে সব ব্যক্তিগত গাড়ি বন্ধ করে কয়েক হাজার নতুন এসি বাস নামান। গণপরিবহন ঠিক হলে যানজট সমস্যার সমাধান হবেই। এমনকি প্রয়োজনে ব্যক্তিগত গাড়ি বন্ধ করে একদিন শুধু রিকশা নামিয়ে দেখতে পারেন।
আইন-শৃঙ্খলা, দ্রব্যমূল্য ও যানজটের নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সরকারের ছাত্র আন্দোলনে হতাহত প্রতিটা পরিবারের পাশে থাকা উচিত। আর জুলাই আগস্টের প্রতিটা হত্যার সুষ্ঠু বিচার জরুরি। পাশাপাশি তারুণ্যের কর্মসংস্থানে নজর দিতে হবে। নতুন নিয়োগ প্রায় বন্ধ। সবগুলো বিসিএস স্থগিত হয়ে আছে। একেকটা বিসিএসে চার-পাঁচ বছর লাগছে। তরুণরা ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন। কাজেই শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের দিকে নজর দেয়া জরুরি। পাশাপাশি বেনামি ও মিথ্যা মামলা বন্ধ করতে জুলাই আগস্টের হত্যাকাণ্ডগুলোর সত্যিকারের তদন্ত জরুরি। সর্বোপরি আইনের শাসন মানে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
দেখেন একটা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকলে, সুশাসন থাকলে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকলে সাধারণ মানুষের সরকারের কাছ থেকে খুব বেশি চাওয়ায় নেই। আর সুশাসন প্রতিষ্ঠা না হলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে আইন-শৃঙ্খলা ঠিক না থাকলে সব উন্নয়ন বা সংস্কার ভেস্তে যাবে। আশা করি সরকারের বোধ জাগবে। তারা দ্রুত পরিস্থিতি ঠিক করার দিকে নজর দেবেন।
আসলে আমরা যারা বাংলাদেশেই থাকি এবং বাংলাদেশ ছাড়া যাদের আর কোনো ঠিকানা নেই তারা যেকোনো মূল্যে একটা সুন্দর দেশ চাই। সুশাসনের বাংলাদেশ! মানবিক বাংলাদেশ! মনে রাখবেন একাত্তর থেকে চব্বিশে বারবার তরুণরা এই সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্নে জীবন দিয়েছে। আপনারা বারবার আমাদের হতাশ করবেন না! লেখক: কলামিস্ট। ফেসবুক থেকে