ভওস : আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বাংলাদেশে অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার প্রধান হয়েছেন শান্তিতে নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সরকারের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও দেশ পরিচালনা করছেন ড. ইউনূস নেতৃতাধীন উপদেষ্টারা। সরকারের দুই মাসের শাসনামলে দুর্ধর্ষ জঙ্গিরা ছাড়া পেয়েছে, বড় বড় সন্ত্রাসীরাও জেলমুক্ত হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি সারাদেশে আওয়ামী লীগ বা সরকারবিরোধী সংগঠনের কর্মী-সমর্থকদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর, পুড়িয়ে দেওয়া, লুটপাট, জোর করে দোকানপাট কিংবা জমি দখল করা হচ্ছে। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
মব জাস্টিসের নামে জীবন্ত মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। শিল্পকারখানায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে লুটপাট করা হচ্ছে। শতশত শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, লাখ লাখ মানুষ বেকার হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ছাড়া করা হচ্ছে। হত্যা করা হচ্ছে। ঘরবাড়িতে থাকতে পারছেন না। প্রশাসন কার্যত নীরব। ঢালাওভাবে গণহারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে বাণিজ্য শুরু হয়েছে।
মানুষ আশা করেছিলো, অন্তবর্তী সরকারের সময়ে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় হবে। সিন্ডিকেট ভেঙে দেবে। কিন্তু হয়েছে উল্টো। দ্রব্যমূল্যের দাম প্রতিদিনিই রেকর্ড ভাঙছে। কোনো তরিতরকারীই আর একশ টাকার নিচে নেই। প্রায় সব তরিতরকারীই সেঞ্চুরি করে ফেলেছে। মানুষের মধ্যে চরম হতাশা তৈরি হয়েছে। ইলিশ মাছ তো এখন টুকরো করে বিক্রি শুরু হয়েছে, তবুও কেনার সামর্থ্য
অনেক মানুষের নেই। পাঙাসই এখন নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে ইলিশ। ডিম তো ডিগবাজি দিয়ে ডজন প্রতি দুইশ টাকা ছুঁই ছুঁই। মানুষ বলতে শুরু করেছে, আওয়ামী লীগ সরকারই ভালো ছিলো। আয় ছিলো এখনকার চেয়ে বেশি, নিত্যপণ্যের দামও ছিলো কম।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। পুলিশ নিরাপত্তার কাজে যুক্ত হলেও আগের মতো ততপরতা তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় না। শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বলা যায়। ঢাকা শহর প্রায় অচল, ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় গাড়িতেই বসে থাকতে হয়। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে আসছে। ঢাকা শহরের কয়েকজন রিকশাচালকের দাবি, আগে তাদের প্রতিদিনি ১২-১৫শ টাকা আয় হতো। কখনো কখনো ২ হাজার টাকাও তারা দিনে কামাই করতে পারতেন, এখন ৩-৪শ টাকার বেশি আয় করতে পারেন না। ঢাকায় ফুটপাতে ব্যবসা করেন এমন একজন বলছিলেন, পরিস্থিতি যা তাতে ইউনূস সরকার কদিন টিকে বলা মুশকিল। তার আশঙ্কা, অন্তবর্তী সরকার খুব বেশিদিন টিকবে না। কারণ তারা দেশ পরিচালনায় নিজেদের সক্ষমতা দেখা পারছেন না।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়া, ব্যক্তি পর্যায়ের আলাপে লোকজন এখন বলছে, দেশের গণমাধ্যম সঠিক খবরটি দিচ্ছে না বা দিতে পারছে না। বিটিভির ভূমিকায় এখন দেশের সব মিডিয়া। ইউনূস সরকার কতোটা বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। খুব সম্প্রতি একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে সরকারপ্রধানের সমালোচনা করায় তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রদোহ মামলাও করা হয়েছে তার নামে।
মানুষ মনে করেছিলো নোবেলজয়ী ড. ইউনূস সরকারপ্রধান হওয়ায় বিশ্বের সমর্থন পাবেন। দেশের পরিস্থিতি ভালো হবে। কিন্তু আমেরিকা বা পশ্চিমা বিশ্ব ছাড়া ইউনূস সরকারকে সমর্থন দেওয়া বা সহযোগিতার ক্ষেত্রে খুব একটা উতসাহ দেখা যাচ্ছে না বিশ্বের অন্যান্য দেশের। বরং সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে অন্য উপদেষ্টাদের নানা মন্তব্যের কারণে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেয়েছে। মুহাম্মদ ইউনূস মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে রোষানলে পড়েছেন দল-মত নির্বিশেষে সব মানুষের।
বিবিসি বাংলাকে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজের অধ্যাপক মুশতাক খান বলেন, ‘মানুষ কিছু অ্যাকশন দেখতে চায়, তাতে সবকিছুর সমাধান হবে না। এখানে যে কোনো সেক্টরে হাত দিলেই আপনি দেখবেন অনেক অনিয়ম হয়েছে। অনিয়মের কোনো শেষ নাই। আপনি এমন কিছু করবেন না যা পরে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। বড় বড় কয়েকটা কাজ করতে হবে। যাতে মানুষ বুঝতে পারে যে একটা পরিবর্তন আসছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টা এ রকম নয় যে মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে মূল্যস্ফীতি বাড়াচ্ছে। সিন্ডিকেটগুলো থামাতে হবে। বাজারে এখনো সিন্ডিকেট কাজ করছে হয়তো। এই সিন্ডিকেট যদি কাজ করতে থাকে, তাহলে সেগুলোকে অবশ্যই ভাঙতে হবে। যেসব বড় সিন্ডিকেটের মালিকরা হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে বসে আছে এবং তারা সে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে, আপনাকে সে টাকায় হাত দিতে হবে।’
বাকস্বাধীনতার ব্যাপারের অন্তবর্তী সরকারের অবস্থান সম্পর্কে লেখক সুষুপ্ত পাঠক ফেসবুকে লেখেন, ৫ আগস্টের আগে তারা কোনো শর্ত ছাড়াই বাকস্বাধীনতার পক্ষে ছিলো। ৫ তারিখের পর তারা বাকস্বাধীনতার আগে ‘যদি’, ‘কিন্তু’, ‘তবে’ যুক্ত করছে। এখন বাকস্বাধীনতার মানে সেটা তাদের পক্ষে হতে হবে।