ফজলুল বারী: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি ‘দলকানা’ বিচারপতিদের অপসারনের দাবি করেছে! বৈঠক শেষে কথাটি বলেছেন মির্জা ফখরুল। এটা কী বাংলাদেশে বাস্তব? বা এটি কী বিএনপির মনের কথা?
দেশে রাজনৈতিক দল দুটি। আওয়ামী লীগ ও এন্টি আওয়ামী লীগ। আইন পেশার লোকজন আবার সবচেয়ে বেশি রাজনীতিতে যুক্ত হন। বিচারক থেকে শুরু করে পিপি এপিপি, এটর্নি জেনারেল, ডেপুটি এটর্নি জেনারেল সব পদায়ন হয় দলীয় ভিত্তিতে। কাজেই দল ক্ষমতা থেকে চলে যাবার পর খুব স্বাভাবিক এদের সবাই বাদ পড়েন। নতুন দলীয়রা আসেন। এবারেও নতুন যারা নিয়োগ পেয়েছেন তারা সবাই এন্টি আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ধারার সাথে যুক্ত।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ নিম্ন আদালতের বিচারক নিয়োগ হয় ঘুষের ভিত্তিতে। যেখানে আয় বেশি সেখানে ঘুষের রেট বেশি। পিপি বা প্রভাবশালী আইনজীবীরা তাদের থেকে ঘুষের ভিত্তিতে সুবিধা নেন। আদালতের কর্মচারীরা হন ক্যাশিয়ার। বা পার্টি ধরা, টাকা রিসিভ তাদের মাধ্যমে হয়। আদালত পাড়ায় এসব ওপেন সিক্রেট বিষয়! পিপি এপিপি এরা মানেই আদালতের ভালো উকিল নন। এরা ভালো টাকার লেনদেনের উকিল। টাকার অংশ বিচারক, আদালতের কর্মচারী সহ নানান জায়গায় দিতে হয়।
বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে যে সব আইনজীবীর আইন পেশায় রোজগার ভালো তারা বিচারপতি হতে চান না! যারা উকিল হিসাবে ভালো না, আইন পেশায় যাদের আয় ভালো নয় তারাই রাজনৈতিক বিবেচনায় বিচারপতি হবার জন্য লাইন দেন! আমি এক সময় সুপ্রিমকোর্টে রিপোর্ট করতে যেতাম। আমাকে তখন দেখানো হতো এটা আওয়ামী লীগের কোর্ট এটি বিএনপির কোর্ট! উকিলরাও জামিনের জন্য এসব কোর্ট বুঝে যান!
বাংলাবাজার পত্রিকায় কাজ করার সময় পত্রিকাটির সুপ্রিমকার্ট রিপোর্টারের দুর্বল লেখার জন্য আমরা হাসাহাসি করতাম। রাজনৈতিক বিবেচনায় তিনিই একসময় বিচারপতি হয়ে গেলেন! তিনি নিশ্চয় এখন সিনিয়র বিচারপতিদের একজন! আপিল বিভাগের বিচারপতি বা প্রধান বিচারপতিও হয়ে যেতে পারেন!
বাংলাদেশের হাইকোর্ট সুপ্রিমকার্টের বিচারপতিদের বেশিরভাগ এক সময় আদালত পাড়ার সিনিয়র আইনজীবীদের জুনিয়র হিসাবে কাজ করতেন। এই সিনিয়রদের মনোভাব এমন যে, তাদের অধীনে কাজ করা বিচারপতিরা সব সময় তাদের পক্ষে রায় দেবেন! এর ব্যত্যয় ঘটলে এরা ক্ষিপ্ত হয়ে আদালত কক্ষে ফাইল ছুড়ে মারার ঘটনাও আছে। এটি সুস্পষ্ট আদালত অবমাননা। কিন্তু সংশ্লিষ্টরাও তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুলনিশি জারি করেন না। কারণ তারা যে একদিন তাদের অননদাতা ছিলেন।।! এই হচ্ছে বাংলাদেশের বিচারাঙ্গনের কমন চিত্র!
একবার এরশাদের বিরুদ্ধে ক্যাসেট কেলেংকারীর ঘটনা ঘটলো। ক্যাসেটে ধরা পডলো এরশাদ বিচারপতিকে ঘুষ অফার করছেন! জাতীয় পার্টির নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ বিচারপতিকে ফোন করে এরশাদকে যুক্ত করে দেন! নাজিউর রহমান মঞ্জুর সেই কথোপকথন রেকর্ড করে একটি ক্যাসেট বংগভবনে পাঠান। আরেরটি দেন মিডিয়ায়!
সেই ঘটনা ফাঁস হলে সেই বিচারপতি পদত্যাগ করেন। পরে জানা গেল তিনি ছিলেন খুলনা এলাকার এক উপজেলা বিএনপির নেতা। বিএনপি আমলে বিচারপতি হিসাবে তিনি নিয়োগ পেয়েছিলেন! তা মির্জা ফখরুল, দলকানা বিচারপতির সংজ্ঞা কী আপনার কাছে? দল ছাড়া পাগল অথবা শিশুর মতো নিরপেক্ষ বিচারপতি পাবেন কোথায়? এরমাঝে দলীয় বিবেচনায় আপনাদের লোক যত বিভিন্ন জায়গায় ঢুকে গেছেন, তাদের বাদ দিতে বাধা দেবেননাতো? আপনাদের দলের হলে তিনি আর দলকানা নন? লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক।
সূত্র : https://www.facebook.com/profile.php?id=61552204160274