৭ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আজ বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকাল সাতটা থেকে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তাঁরা।
জানা গেছে, দীর্ঘ দিন ধরে ৭ দফা দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক সাড়া না পাওয়া গত ২১ মে থেকে শহীদ মিনারে কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কেউ কেউ রাত কাটিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে।
অবস্থান কর্মসূচিতে ‘চুক্তি না মুক্তি মুক্তি মুক্তি, দালালি না রাজপথ রাজপথ রাজপথ, আমাদের দাবি আমাদের দাবি মানতে হবে মানতে হবে, চুক্তি থেকে মুক্তি চাই, নিয়মিত চাকরি চাই’, ইত্যাদি স্লোগান দেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আন্দোলনকারীরা জানান, “পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) এর মধ্যে বিদ্যমান সংকট নিরসনের মাধ্যমে আধুনিক ও টেকসই বিতরণ ব্যবস্থা বিনির্মাণ এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নত ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিতে জানুয়ারি-২০২৪ থেকে আন্দোলন শুরু হয় দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ২৩ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে পল্লী বিদ্যুৎ সংস্কারে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেন কিন্তু দীর্ঘ সাত মাস অতিবাহিত হলেও আজ অবধি প্রতিবেদন দাখিল বা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। এছাড়া মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ কর্তৃক ‘এক ও অভিন্ন চাকুরিবিধি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আরইবি-পবিস একীভূতকরণ’ সিদ্ধান্ত স্বল্পমেয়াদে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক উক্ত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য মন্ত্রীপরিষদ বিভাগকে জানানো হয়েছে।”
“অপরদিকে সমিতির কর্মীদের উপর স্বৈরাচারী পন্থায় আরইবির জুলুম-নির্যাতনের মাত্রা চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্দোলনের অজুহাতে এখন পর্যন্ত ২৯ জনকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত, মামলা-গ্রেফতার-কারাবন্দী, অর্ধশতাধিক কর্মীকে বরখাস্ত, স্ট্যান্ড রিলিজপূর্বক সংযুক্ত এবং নিজ জেলা থেকে গড়ে ৪০০-৫০০ কি.মি. দূরে শাস্তিমূলক বদলি করা হচ্ছে। এছাড়া স্মারকলিপির জন্য গণস্বাক্ষর কার্যক্রম করায় ৭জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গত চার মাসে সাড়ে চার হাজারের অধিক কর্মীকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। সর্বশেষ গত এক সপ্তাহে দেড় হাজারের অধিক লাইনক্রুকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে (নিয়োগপত্র অনুযায়ী চাকরি বদলিযোগ্য না) হয়রানিমূলক বদলি আদেশ জারি করা হয়েছে, বাদ যায়নি মৃত ব্যক্তি, গুরুতর অসুস্থ ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত বিদ্যুৎ কর্মীও। চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন কয়েকজন নারী কর্মী। এছাড়া ফেসবুকে পোস্টের কারণেও ৫ জনকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।”
”চলমান তাপদাহ এবং ঝড়-বৃষ্টির মৌসুমে সমিতির কর্মীরা যখন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা প্রদানে হিমশিম খাচ্ছে ঠিক তখনই আরইবি কর্তৃক লাইনক্রুদের এই ধরনের গণবদলি সিস্টেমের জন্য আত্মঘাতী, কর্মীদের জন্য প্রাণঘাতী, বিদ্যুৎ সিস্টেমে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কর্তৃক পল্লী বিদ্যুৎ কার্যক্রমকে পুনরায় অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র বলে স্পষ্ট প্রতীয়মান। লাইনক্রুসহ সকল হয়রানীমূলক বদলি আদেশ বাতিলের দাবির কারণে বিভিন্ন পবিসে লাইনক্রুদেরকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিতদের মধ্যে অন্যদেরকে নিয়মিত করা হলেও মিটার রিডার কাম মেসেঞ্জার (এমআরসিএম) এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত লাইন শ্রমিকদের চাকরি নিয়মিত করা হয়নি। বিদ্যুতের মতো আবশ্যিক ও জরুরি সেবায় কোন কর্মী ৩৬ বছর চুক্তিভিত্তিক হিসেবে কাজ করবে যা খুবই অমানবিক এবং চরম বৈষম্য”, জানান আন্দোলনকারীরা।
তাঁরা বলেন, “আমরা উল্লিখিত বিষয়ের সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও যৌক্তিক সমাধানের জন্য অসংখ্যবার আরইবি চেয়ারম্যান, বিদ্যুৎ উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ জানিয়েছি, কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো আমাদের বিষয়ে আমাদের সাথে একটিবার আলোচনার সুযোগ দেওয়া হয়নি। পবিসের যে সকল কর্মীকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত ও রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে তাদেরকে চাকরিতে পুনর্বহাল, সংস্কার কার্যক্রমের দৃশ্যমান অগ্রগতি, চুক্তিভিত্তিক বা অনিয়মিতদের নিয়মিতকরণ এবং আরইবি’র দমন-পীড়ন বন্ধের জন্য গত ২১ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখ এবং ২য় দফায় গত ২৬ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে মাননীয় বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বরাবর গণস্বাক্ষর সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করা হয় (যার কপি প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়কে দেওয়া হয়েছে)।”
“ওই বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের কোন তৎপরতা দৃশ্যমান হয়নি। গত অক্টোবর মাসেও প্রধান উপদেষ্টার তৎকালীন বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম প্রেস কনফারেন্সে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ঘোষণা সত্ত্বেও কোন আলোচনা করা হয়নি।”
“আমরা গত ১৬ মে, ২০২৫ তারিখে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সরকারের সহযোগিতা কামনা করলেও ইতিবাচক কোন সাড়া মেলেনি। এমতাবস্থায়, ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিভিন্ন পদের কর্মীদের সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতে ৭ দফা দাবিতে গত ২১ মে থেকে সারাদেশে বিদ্যুৎ সেবা চালু রেখে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালন করে আসছি”, বলেন পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
৭ দফা দাবি–
১. পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের ফ্যাসিবাদি কায়দায় দমন-পীড়নের মাধ্যমে কর্মপরিবেশ অস্থিতিশীলকারী, অত্যাচারী আরইবি চেয়ারম্যানের অপসারণ।
২. ‘এক ও অভিন্ন চাকুরিবিধি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আরইবি-পবিস একীভূতকরণ’ অথবা দেশের অন্য বিতরণ সংস্থার ন্যায় পুনর্গঠন।
৩. মিটার রিডার কাম মেসেঞ্জার, লাইন শ্রমিক এবং পৌষ্য কর্মীদের চাকরি নিয়মিতকরণ।
৪. মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারপূর্বক চাকরিচ্যুতদের স্বপদে পুনর্বহাল।
৫. গ্রাহক সেবার স্বার্থে লাইনক্রুসহ সকল হয়রানি ও শাস্তিমূলক বদলি আদেশ বাতিল এবং বরখাস্ত ও সংযুক্ত কর্মীদের অবিলম্বে পদায়ন।
৬. জরুরি সেবায় নিয়োজিত কর্মীদের আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী নির্দিষ্ট কর্মঘন্টা বা শিফটিং ডিউটি বাস্তবায়নের জন্য অতিদ্রুত জনবলের ঘাটতি পূরণ করতে হবে।
৭. পূর্ণাঙ্গ সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড গঠন করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যক্রম পরিচালিত করতে হবে।
“দেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ১৪ কোটি ভুক্তভোগী পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মানসম্মত বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করণ এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার নির্যাতিত কর্মীর মুক্তির জন্য সাত দফা দাবি বাস্তবায়নে সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, শিক্ষকমন্ডলী, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম কর্মী সহ সকলের সহযোগিতা কামনা করছি”, আহ্বান জানায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিবিএ) সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলী মনির হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মো. হাসানুজ্জামান, প্রচার সম্পাদক মো. মইনুল ইসলাম ও কার্যকরী সদস্য গোলাম মোস্তফাসহ প্রমুখ।