বগুড়ায় ১৪ বছর বসয়ী মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় বাবাকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক জিতু ইসলামের বিরুদ্ধে।
শনিবার (১৪ জুন) বিকেলে বগুড়া শহরের ফুলবাড়ী এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। নিহত শাকিল শহরের শিববাটি শাহি মসজিদ এলাকার মৃত সাজু মিয়ার ছেলে। শাকিল শিববাটি এলাকায় জনৈক রানার বাড়িতে ভাড়া থেকে বসবাস করেন।
পেশায় তিনি একজন রিকশাচালক। ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক (ইনসপেক্টর) আলমাস আলী তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত শাকিলের এক ছোট বোন জানান, তার ভাইয়ের কিশোরী মেয়েকে স্বেচ্চাসেবক দলের নেতা জিতু ইসলাম বিভিন্ন সময়ে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু জিতু কিছুটা বয়স্ক হওয়ায় শাকিল বিয়ের প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন।
তিনি বলেন, ‘শনিবার সকাল ৯টার দিকে শাকিল রিকশা নিয়ে বের হন এবং সকাল ১০টায় জিতুর সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। সেখানে জিতু ও তার লোকজন আমার ভাইকে গণপিটুনি দেয়। এরপর আমার ভাই রিকশা ফেলে রেখে মসজিদের পেছন দিয়ে আহত অবস্থায় আমাদের বাড়িতে আসেন। ভাই আমাকে বলেন, ‘আমাকে বাঁচাও, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।’
তখন আমি তার চিকিৎসার জন্য টাকা আনতে পাশের বাড়িতে যাই। ফিরে এসে দেখি জিতুর লোকেরা আমাদের বাসার চারপাশ ঘিরে রেখেছে। তাদের সবার হাতে অস্ত্র। তখন আমার ভাইকে ঘরের ভেতর রেখে বাইরে তালা দিই। এ সময় জিতু ও তার দলবল আমাদের ঘরের তালা ভেঙে আমার ভাইকে টানতে টানতে বের করে নিয়ে যায়।
এরপর তারা আমার ভাইকে নদীর পাড়ে নিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে। তিনি আরো বলেন, ‘আমি ভাই হত্যার বিচার চাই।’ এ সময় বিচার চেয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন শাকিলের আরেক বোন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট ছিলিমপুর পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) হারুনার রশিদ তিনি জানান, স্থানীয় লোকজন শাকিলকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে দিলে বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে তার মৃত্যু হয়। নিহতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
ইন্সপেক্টর আলমাস আলীর দাবি, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে শাকিলকে মারধর করে চাকুসহ পুলিশে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল আটক ওই বখাটে যুবকদের। কিন্তু শাকিল গুরুতর আহত হওয়ার কারণে তাকে ফেলে পালিয়ে যায় বখাটেরা।
জানতে চাইলে বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাসান বসির জানান, এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন, জিতু, মতি ও বিপ্লব। ওসি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আটকৃকত জিতুর কোনো রাজনৈতি পরিচয় আছে কি না জানতে চাইলে ওসি বলেন, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানা নেই। তবে লোকমুখে শুনেছি তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা।
এ বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল জিতুর দলীয় পরিচয় নিশ্চিত করে বলেন, জিতু বগুড়া জেলা শাখার সহ সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার কারণে তাকে বহিস্কারের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।