শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বসেছে গরুর হাট। প্রাঙ্গণের এক পাশে থাকা শহীদ মিনারে বিভিন্ন বয়সের মানুষের জটলা। তাদের অনেকেই জুতা পায়ে ওপরে উঠেছেন। ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা শহীদ মিনারের বেদিতে পান-সিগারেট বিক্রি করছেন।
মঙ্গলবার (৩ জুন) বিকেলে বরগুনা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। বিশাল প্রাঙ্গণে গরুর হাট বসানোর পর বেহাল দশা হয়েছে সেখানে থাকা শহীদ মিনারের।
এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে স্থানীয়রা বলেন, প্রশাসন এবং হাট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে শহীদ মিনারে সাধারণ মানুষ জুতা পায়ে উঠছে। শহীদ মিনারের বেদিতে পান-সিগারেট-বাদামের দোকান বসিয়েছেন।
প্রশাসনের পক্ষে থেকে জানানো হয়, শহীদ মিনার থেকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামীতে যাতে আর শহীদ মিনারে পশুর হাট না বসে সে ব্যাপারে ইজারাদারকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
সাংস্কৃতিক সংগঠক ও পরিবেশকর্মী আরিফুর রহসান জানান, গতকাল মঙ্গলবার (৩ জুন) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তিনি শহীদ মিনারে গেলে দেখতে পান- মিনারের বেদিতে পান-সিগারেট-বাদামের ভ্রাম্যমাণ দোকান নিয়ে বসেছেন কিছু লোক। ঠিক তখনই একাধিক ব্যক্তিকে তিনি জুতা পরে বেদিতে হাঁটাহাঁটি করতে দেখেন।
এ সময় জুতা পরে উঠেছেন কেন জিজ্ঞাসা করলে তিনি নিজের ভুল স্বীকার করে তাকে বলেন, ‘বাবা এইডা মোর অন্যায় হইছে। কি করমু? হাডের মধ্যে বওনের (বসা) কোনো জায়গা নাই। তাই সবার দ্যাখাদেখি মুই শহীদ মিনারে জোতা লইয়া উঠছি।’
ছাগল কিনে শহীদ মিনারের ওপর ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টি হচ্ছে, মাঠে পানি আর পশু, পরিবেশটাই এমন। আসলে এটা আমাদের ঠিক হয়নি।’
তিনি নিজের ভুল স্বীকার করে বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে ভাষা শহীদদের প্রতি অমর্যাদা হচ্ছে।’
গরু বিক্রি করতে আসা আলম শিকদার বলেন, ‘শহীদ মিনারে স্যান্ডেল পড়ে ওঠা নতুন না। এই জায়গা দিয়ে যখন যাই তখন অনেককেই শহীদ মিনারে এভাবে ওঠানামা করতে দেখি। হাটের কারণে আজ শহীদ মিনারে অনেকেই জুতা নিয়ে উঠছেন।’
খেলাঘর বরগুনা শাখার চারুকলা বিষয়ক সম্পাদক ও পরিবেশকর্মী আরিফুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শহীদ মিনারে জুতা, স্যান্ডেল পরে ওঠা এটা জাতিকে অপমান করা। বরগুনা পৌরসভা কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। ইজারাদারকে আগেভাগেই বারণ করলে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটত না।’
হাটের ইজারাদার তহিদুর রহমান বলেন, ‘একদিনের জন্য শহীদ মিনার মাঠে পশুর হাট বসিয়েছিলাম। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এটি আমরা করতে বাধ্য হয়েছি। তবে পশুরহাট আগামীতে আর বসানো হবে না।’
বরগুনা পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক অনিমেষ বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘একদিনের জন্য ইজারাদারকে শহীদ মিনার মাঠে হাট বসানোর মৌখিক অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শহীদ মিনারের সম্মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে শুনে আমি হাটে মাইকিং করিয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘পরবর্তীতে হাটের জন্য নির্ধারিত সরকারি শিশু সদন মাঠে যেতে বলা হয়েছে। তবে সেখানেও হাট বসানোর জন্য সরকারি বিধি-নিষেধ রয়েছে। এমন পরিস্তিতিতে পৌরসভার একমাত্র হাটটি নিয়ে আমারা বিপাকে পড়েছি।’