রাজশাহী মহানগর বিএনপি, জামায়াত ও আওয়ামী লীগ নেতার নাম-পরিচয়সহ ১২৩ জনের একটি ‘চাঁদাবাজের তালিকা’ ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। তালিকাটি হাত থেকে হাতে ছুটে বেড়ালেও কারা করেছে এই তালিকা, তা কেউ বলতে পারছেন না। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, এটি পুলিশের তালিকা। যদিও এ বিষয়ে পুলিশসহ কোনো বাহিনী মুখ খুলছে না।
জানা গেছে, তালিকাটিতে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলের ৪০ জনের নাম-পরিচয় আছে। আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে নতুন যোগ দিয়েছেন এমন ৬ জনের নাম আছে। আওয়ামী লীগের ২৯ জন ও জামায়াতের সাতজনের নাম-পরিচয় আছে। এ ছাড়া রাজনীতি করেন না এমন ৩৭ জনের নামও আছে। তালিকায় চারজনকে সুবিধাবাদী হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে।
স্থানীয় বিএনপির এক নেতার দাবি, এই তালিকা পুলিশ করেছে। তিনি পুলিশের স্বাক্ষরসহ তালিকাটি দেখেছেন। কিন্তু মানুষের হাতে হাতে যে তালিকা ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে পুলিশ বা কোনো বাহিনীর পরিচয় নেই।
এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু সুফিয়ান বলেন, ‘চাঁদাবাজদের তালিকা পুলিশেরও আছে। তবে এই তালিকাটি কারা করেছে তা জানা নাই। এটি কোনো বাহিনী করতে পারে, অথবা কেউ এমনিতেও করতে পারে। তালিকাটি কতটা অথেনটিক (সঠিক) বলা যাচ্ছে না। আমরা চাঁদাবাজদের আটক করছি। কেউ অভিযোগ দিলেও ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
তালিকার চার নম্বরে ওয়ার্ড বিএনপির নেতা ও সাবেক কাউন্সিলরের নাম রয়েছে। তাঁর নামের পাশে বলা হয়েছে, ৫ই আগস্টের (২০২৪) পর থেকে মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে তিনি আওয়ামী লীগ অনুসারীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করেন। রাজশাহী বিআরটিসি বাসেও তিনি চাঁদাবাজি করেন। পাঁচ নম্বরে নগর বিএনপির একজন নেতার নাম রয়েছে। তাঁর নামের পাশেও লেখা রয়েছে, মামলার ভয় দেখিয়ে তিনি চাঁদাবাজি করছেন। সাত নম্বরে আরেকজন বিএনপি নেতার নাম। তাঁর নামের পাশে লেখা আছে, ভুবনমোহন পার্কে তাঁর মোটরসাইকেল গ্যারেজ রয়েছে। ফুটপাতের দোকান থেকে তিনি চাঁদাবাজি করেন। তালিকার আট নম্বরে একজন ছাত্রদল নেতার নাম রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মামলার ভয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগ অনুসারীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করছেন। কোচিং সেন্টার থেকেও চাঁদাবাজি করেন। ১১ নম্বরে একজন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার নাম আছে। হেতেমখাঁ এলাকায় তিনি কোচিং সেন্টারে চাঁদাবাজি করেন। ২০ নম্বরে একটি থানা বিএনপির আহ্বায়কের নাম রয়েছে। তিনি কোচিং সেন্টার, বইয়ের দোকান ও আবাসিক হোটেল থেকে চাঁদাবাজি করেন বলে উল্লেখ আছে।
তালিকার ৩৪ নম্বরে রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর এক কর্মীর নাম। তাঁর নামের পাশে লেখা আছে, সব সেক্টরে তিনি মাদকের কারবার করেন। ৫৩ নম্বরে রয়েছে ‘জামায়াতে ইসলামীর ক্যাডার’ নামে এক ব্যক্তির নাম। তাঁর নামে ভূমিদখল, কেনাবেচা, গণ্যমান্য ব্যক্তিকে হুমকি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ। ৫৬ নম্বরে রয়েছে একটি থানা শাখা যুব জামায়াতের সভাপতির নাম। তাঁর বিরুদ্ধে ভূমিদখল, হুমকি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলা হয়েছে।
তালিকায় ৮৪ নম্বরে রয়েছে একটি পৌরসভা শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের নাম। তাঁর বিরুদ্ধ বিভিন্ন নির্মাণাধীন ভবন থেকে ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। ৯৮ নম্বরে রয়েছে এক আওয়ামী লীগ ক্যাডারের নাম। পুকুর খননসহ এলাকায় ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে তাঁর নামে। ১০৬ নম্বরে আগে আওয়ামী লীগ করতেন, বর্তমানে যুবদল ক্যাডার এমন এক ব্যক্তির নাম রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।
তালিকায় নাম থাকা স্থানীয় এক বিএনপি নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর বলেন, ‘আমার নামে বিআরটিসি বাসে চাঁদাবাজির অভিযোগ লেখা হয়েছে। কিন্তু বিআরটিসি বাস আমরা লিজ নিয়েছি। এটা তো চাঁদাবাজি নয়।’ তিনি বলেন, ‘যা শুনছি প্রশাসনের সবাই জামায়াতপন্থি। এই তালিকায় বিএনপির দুজন নেতার লোক রয়েছে। একজন নেতার অনুসারীদের নাম আসেনি। তাতে মনে হচ্ছে, বিএনপির ওই নেতা ও পুলিশ মিলে তালিকাটা করেছে।’ তালিকায় থাকা বোয়ালিয়া থানা পশ্চিম বিএনপির সভাপতি সামশুল হোসেন মিলু বলেন, ‘এটা পুলিশের তালিকা, তার প্রমাণ আমি পেয়েছি। তবে আমি চ্যালেঞ্জ করছি, আমার নামে চাঁদাবাজির প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না।’
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি এরশাদ আলী ঈশা বলেন, ‘এই তালিকার কোনো উৎস নাই। এটা অথেনটিক না। এটা প্রশাসনও নিজেদের দাবি করছে না। কেউ বদমায়েশি করে তালিকা ছেড়েছে।’
রাজশাহী মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি এমাজ উদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘তালিকাটি আমি দেখিনি। স্বাক্ষরবিহীন তালিকার বিষয়ে আমি মন্তব্য করব না। তবে জামায়াতের দায়িত্বশীল কেউ চাঁদাবাজিতে যুক্ত নেই। প্রমাণ পেলে আমরাই শক্ত ব্যবস্থা নেব।’