আধুনিক যুগে আকাশপথে কমব্যাট মিশন পরিচালনার ক্ষেত্রে যুদ্ধবিমানের পে-লোড ক্যাপাসিটি এবং আক্রমণাত্মক সক্ষমতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। তবে বর্তমান যুদ্ধকৌশলে স্টেলথ প্রযুক্তি, উন্নত সেন্সর, এইএসএ রাডার ও অ্যাভিয়নিক্স সিস্টেম এবং নেটওয়ার্ক-কেন্দ্রিক অপারেশনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রযুক্তিবিদরা।
শুধুমাত্র অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র বহনের সক্ষমতার দিক বিবেচনায় বিশ্বের শীর্ষ যুদ্ধবিমানের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এফ-১৫ স্ট্রাইক ঈগল (এয়ার সুপিরিয়রিটি ফাইটার) রয়েছে প্রথম স্থানে। এই বিমানের সর্বোচ্চ পে-লোড ক্যাপাসিটি প্রায় ১০.৪ টন। ১৯৭৬ সালে এটি সার্ভিসে যুক্ত হলেও এখনো আকাশযুদ্ধে এটি তার আধিপত্য বজায় রেখেছে।
পে-লোড সক্ষমতার বিচারে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফ্রান্সের টুইন ইঞ্জিন বিশিষ্ট Dassault Rafale মাল্টিরোল ফাইটার, যার পে-লোড প্রায় ৯.৫ টন। এরপর রয়েছে ইউরোপের যৌথ উদ্যোগে তৈরি Eurofighter Typhoon, যার পে-লোড প্রায় ৯ টন। এসব যুদ্ধবিমানকে লং রেঞ্জ অপারেশন এবং আধুনিক সেন্সর ও ইলেকট্রনিক্স সিস্টেমে সজ্জিত করা হয়েছে।
স্টেলথ প্রযুক্তির কারণে যদিও অস্ত্র বহনের সক্ষমতা কিছুটা হ্রাস পায়, তথাপি এফ-৩৫ লাইটনিং-II এর সর্বোচ্চ পে-লোড ক্যাপাসিটি ৮.১৬ টন (স্টেলথ মোডে ৫.৭ টন) এবং এফ-২২ র্যাপটর এর পে-লোড প্রায় ২.২৬৭ টন বা ৫ হাজার পাউন্ড। এছাড়া ইউএস নৌবাহিনীর এফ/এ-১৮ সুপার হর্নেট এর পে-লোড প্রায় ৮.০৫ টন।
এদিকে রাশিয়ার তৈরি ৫ম প্রজন্মের এসইউ-৫৭ (ফেলন) এর পে-লোড ক্যাপাসিটি ৯ টন। এর পাশাপাশি এসইউ-৩৫এস এবং মিগ-৩৫ যুদ্ধবিমানের পে-লোড যথাক্রমে ৮ টন এবং ৬.৫ টন। তাছাড়া এসইউ-৩০ এবং মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানের পে-লোডও প্রায় একই, যথাক্রমে ৮ টন এবং ৬.৫ টন।
চীনের নিজস্ব প্রযুক্তিতে নির্মিত ৫ম প্রজন্মের জে-২০ (মাইটি ড্রাগন) এর পে-লোড ক্যাপাসিটি দাবি করা হয় ১১ টন, যদিও পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে এর অভ্যন্তরীণ ওয়েপন বে-তে প্রায় ৬–৭ টন অস্ত্র ধারণ সম্ভব। এছাড়া জে-১৬, জে-১১ যুদ্ধবিমানের পে-লোড প্রায় ৮ টন এবং ক্যারিয়ার বেসড জে-১৫ যুদ্ধবিমানের এর ৬.৫ টন। তাছাড়া সিঙ্গেল ইঞ্জিনের জে-১০সি সিরিজের যুদ্ধবিমানের পে-লোড ধারণক্ষমতা ৬ টন পর্যন্ত দেখানো হয়েছে।
তাছাড়া বিশ্বের সেরা সিঙ্গেল ইঞ্জিনের যুদ্ধবিমানের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন যুদ্ধবিমানের সর্বোচ্চ পে-লোড ৭.৭ টন। ভারতের HAL তেজাস যুদ্ধবিমানের পে-লোড ৫.৭ টন এবং পাকিস্তান-চীনের যৌথ উদ্যোগে তৈরি জেএফ-১৭ (Thunder) যুদ্ধবিমানের পে-লোড ৫.৫ টন। সুইডেনের গ্রিপেন-ই (JAS-39) যুদ্ধবিমানের পে-লোড ক্যাপাসিটি ৫.৩ টন হতে পারে।
এখানে উল্লেখ্য যে, যুদ্ধবিমানের এই পে-লোড ক্যাপাসিটির ডেটাগুলো শুধুমাত্র অস্ত্র ও মিসাইল বহনের জন্য প্রযোজ্য। বিমানের ফুয়েল ক্যারিয়িং ক্যাপাসিটি এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাছাড়া ইন্টারনেটে পাওয়া পে-লোড সম্পর্কিত তথ্য বাস্তবে কিছুটা কম-বেশি হতে পারে।
লেখক: সিরাজুর রহমান