মাসুদ রানা “ ‘মুজিববাদ’, শ্রুতিতে একটি রাজনৈতিক মতবাদ, এবং ‘মুজিববাদী সংবিধান’ মানে হচ্ছে, যে-সংবিধান ঐ মতবাদের ভিত্তিতে রচিত। তো, ১৯৭২ সালের সংবিধান কি মুজিবাদী সংবিধান হতে পারে? আসলে, মুজিববাদ কী? শেখ মুজিবুর রহমান কি কোনো রাজনৈতিক তত্ত্ব লিখে গিয়েছেন? না, তিনি কোনো মতবাদ লিপিবদ্ধ করে যাননি। তবে, তিনি রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়েছিলেন, যার নাম বাকশাল, এবং যা ছিলো একদলীয় শাসন ব্যবস্থা। তাই, মুজিববাদ বলে কিছু থেকে থাকে, তা হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশাল কর্মসূচি।
আমরা যদি ‘বাকশাল’কে ‘মুজিববাদ’ বলি, আর এই ‘বাকশাল’ যদি ১৯৭২ সালের রচিত সংবিধানে নির্দেশিত বা অনুমোদিত হয়ে থাকে, তাকে আমরা ‘মুজিববাদী সংবিধান’ বলতে পারি। কিন্তু সেটি কি তাই ছিলো?
না, ‘মুজিবাদ’ তথা ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ১৯৭৫ সালের ২৫শে জানুয়ারিতে ১৯৭২ সালের গণতান্ত্রিক সংবিধানকে ৪র্থ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত করে।
যেমন “কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল যে সে মরে নাই” তেমনি বাকশল প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭২ সালের সংবিধানকে ১৯৭৫ সালে ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে পরিবর্তিত করার অর্থই হলো যে, ১৯৭২-এর সংবিধান বাকশালী ছিলো না।
তাহলে, ১৯৭৫ সালের ৪র্থ সংশোধনীর ফলে সংবিধান যে বাকশালী তথা মুজিবাদী হয়েছিলো, তা কি এখনও আছে? উত্তর হচ্ছেঃ না, তা নেই।
১৯৭৮ সালের ১৮ই নভেম্বর জিয়াউর রহমান ‘দ্যা পলিটিক্যাল পার্টি অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৮’ জারি করে বহু-দলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের সংবিধানকে বাকশাল তথা মুজিববাদ মুক্ত করেন।
১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সংবিধানে যেখানে একদলীয় শাসন বাকাশাল ছিলো না এবং ১৯৭৮ থেকে আজও পর্যন্ত সংবিধানে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা নেই।
প্রশ্ন হচ্ছে তারপরও কেন এই মিথ্যা বলা হচ্ছে যে, ১৯৭২ সালের সংবিধান হচ্ছে মুজিববাদী সংবিধান? এর উত্তর মেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫-দফার ৪নং দফায়, যেখানে তারা ‘Proclamation of Republic জারি’র কথা বলে মূলতঃ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ‘Proclamation of Independence’ বা স্বাধীনতার ঘোষণাকে প্রতিস্থাপন করতে চায়।
স্পষ্টতঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের আসল চেহারা সম্পূর্ণরূপে উন্মুক্ত করে ফেলেছে। ওরা কোটা আন্দোলনের কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নেই বলে নিরীহটি সেজে ‘মেটিকিউলাস প্লান’ অনুযায়ী মানুষকে ইমৌশন্যালি ব্ল্যাকমেইল করে রাস্তায় নামিয়ে গণ-অভ্যূথান করিয়ে এখন বলছে ১৯৭১ সালের রাষ্ট্রের প্রতিস্থাপন ও ১৯৭২ সালের সংবিধানের বাতিল চায়।
বাংলার মানুষ কি এতোই বোকা যে, এরপরও তারা বুঝতে পারছে না ওরা কারা ও কী চায়?
বাংলার মানুষের আওয়ামী লীগ কিংবা বাকশাল প্রত্যাখ্যান করা, শেখ মুজিবুর রহমান কিংবা শেখ হাসিনাকে প্রত্যাখ্যান করা মানে এই নয় যে, তারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে এবং Proclamation of Independence ও বাংলাদেশের রিপাবলিকটি প্রত্যাখ্যান করে অন্য কিছু (পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশন) চাচ্ছে।
আমি বিস্মিত হচ্ছি, যে জিয়াউর রহমান স্বয়ং মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দলে এখনও অনেক মুক্তিযোদ্ধা থাকারপর কীভাবে এটি সহ্য করছে!
তোমরা না বলো, দলের চেয়ে দেশ বড়ো? আসলে কি তা তোমরা মনে করো?
২৩/১০/২০২৪
লণ্ডন, ইংল্যাণ্ড