রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার জন্য ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে আগের ২৫ শতাংশসহ ভারতের ওপর মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে। এরপরই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও কৌশলগত সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেয়। এবার ট্রাম্পের দ্বিগুণ শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে নয়াদিল্লি।
একই সঙ্গে ভারতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সমরাস্ত্র ক্রয়ের চুক্তির জন্য ওয়াশিংটনে পরিকল্পিত সফরও বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত তিন ভারতীয় কর্মকর্তার বরাতে শুক্রবার (৮ আগস্ট) এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রতিরক্ষা কোম্পানি জেনারেল ডাইনামিক্স ল্যান্ড সিস্টেমসের তৈরি ‘স্ট্রাইকার’ সাজোয়া যান এবং রেথিয়ন ও লকহিড মার্টিনের তৈরি ট্যাঙ্ক-বিরোধী ‘জ্যাভলিন’ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে আলোচনা চলছিল। তবে ট্রাম্পের দ্বিগুণ শুল্কের কারণে সেই আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে।
ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফেব্রুয়ারিতে এই সমরাস্ত্রগুলো যৌথ উৎপাদনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন।
দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং আসন্ন সফরে ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য ছয়টি বোয়িং পি৮আই রিকনেসান্স বিমান এবং সাপোর্ট সিস্টেম কেনার জন্য চুক্তি করার পরিকল্পনা করেছিলেন।
ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৩৬০ কোটি ডলারের প্রস্তাবিত চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শেষ পর্যায়ে ছিল।
এরআগে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় এফ-৩৫ বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এরপর থেকেই দুদেশের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা চলছিল। তবে সম্প্রতি নয়াদিল্লি মার্কিন কর্মকর্তাদের জানিয়েছে, তারা এফ-৩৫ স্টিলথ যুদ্ধবিমান কিনতে আগ্রহী নয়।
শুক্রবার (৩১ জুলাই) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ যাবতকালে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। সরকার ভারতে যৌথভাবে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ডিজাইন এবং উৎপাদনের ওপর জোর দিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মোদি সরকার নিকট ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন কোনো প্রতিরক্ষা চুক্তি করার সম্ভাবনা কম বলেই ইঙ্গিত মিলেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস, যোগাযোগ সরঞ্জাম এবং সোনা আমদানি সম্প্রসারণের কথাও বিবেচনা করছে দেশটি।
প্রসঙ্গত, ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক এবং রাশিয়া ঐতিহ্যগতভাবে এর শীর্ষ সরবরাহকারী। তবে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিপ্রি) মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফ্রান্স, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো পশ্চিমা শক্তি থেকে অস্ত্র আমদানিতে ঝুঁকে পড়েছে ভারত।
ভারতীয় কর্মকর্তাদের একজন এবং আলোচনার সঙ্গে পরিচিত একজন রাশিয়ান সূত্রের মতে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, মস্কো তার এস-৫০০ ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার মতো নতুন প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি কেনার জন্য দিল্লিকে সক্রিয়ভাবে চাপ দিচ্ছে।
অন্যদিকে দুই ভারতীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অস্ত্র না কিনলেও বর্তমানে মস্কোর কাছ থেকে নতুন অস্ত্র কেনার প্রয়োজন মনে করছে না ভারত।