জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
লেডিঞ্জে গ্রেন্ড, স্টকহোম,সুইডেন
বাংলাদেশ মতামত

বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে সারদায় কি হচ্ছে?

নাদিম মাহমদু : সারদায় হচ্ছেটা কী? বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে সারদায় কি হচ্ছে? গত এক সপ্তাহে আড়াইশোর অধিক পুলিশে প্রশিক্ষণরত কর্মকর্তাদের অনেকটায় বাধ্যতামূলক চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এতোটাই তুচ্ছ, যা নিয়ে আলোচনা করতে লজ্জাবোধ করছি।

এই যে ২৫২ জন ছেলে-মেয়েকে আপনারা যে ‘নাশতা না খাওয়ার’ যুক্তিতে শৃঙ্খলা ভঙ্গের নজির বিহীন অভিযোগ তুললেন, সেই অভিযোগ পৃথিবীর আর কোন শৃঙ্খলাবাহিনীর মধ্যে অতীতে কখনো হয়েছে কি না আমার জানা নেই।
এই ধাক্কাটা কবেলই আড়াশোই জন এসআইয়ের নয়, আপনারা এই আড়াইশো পরিবারকে ধাক্কাটা দিচ্ছেন, যারা সামীহীন ত্যাগ ও পরিশ্রম করে চাকরিরটার জন্য লড়াই করে গিয়েছেন। এই এসআইরা কেউ কোটিপতি পরিবারের সন্তান নয়, এরা কেউ কৃষক, কেউ শিক্ষক, কেউ রিকশাচালক আবার কেউ দিনমজুরের সন্তান, যারা অতিকষ্টে পাবলিকের করের টাকায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়েছেন, এখন দেশের সেবাই নিজেদের নিয়োজিত করতে পুলিশের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।

একটি ছেলে/মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পাস করে পুলিশের শারীরিক ও মেধা পরীক্ষা পাস করার পর আপনারা তাদের বছর ধরে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। সরকারের অর্থ ব্যয় করে, তাদেরকে পেশাদারিত্বে যোগ্য হিসেবে গড়ছেন, সেখানে কেবল নাশতা না খেয়ে হৈচি করার অভিযোগ যে একটা ছুতো তা একটি শিশুও বুঝে সারা বছর প্রশিক্ষণে যেখানে আপনাদের ৮২৩ জন থেকে মাত ১৯ জন প্রশিক্ষণে অযোগ্য ছিল, সেখানে আপনারা ‘নাশতা না খেয়ে হইচই করে মাঠের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি’ অভিযোগ তুলে ২৫২ জন হবু এসআইকে সরিয়ে দিলেন, আরো ৫৯ জনকে সরানোর পথ তৈরি করছেন, যা ভাবতে গা শিউরে উঠছে।

আপনারা কি বলছেন, ওই শিক্ষানবিশ এসআইরা ঠিক কেন নাশতা খেতে চাচ্ছিলেন না? কেন বিশৃঙ্খলা তৈরি করছিল? সেটা ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন আপনারা কেন সেই ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য হলো না, এইসব উত্তর যতদিন জনগণের সামনে আসবে না, ততোদিন সারদার এই ক্ষত পুলিশকে দুর্বলতা শেখাবে, অনৈতিক চর্চা হিসেবে দেখবে ওই চাকরিচ্যুতরা।

এই যে আপনারা নতুন করে যে ৫৯ জনকে শোকজ করে বলেছেন, গত ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় অতিথি শিক্ষক ও বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির সাবেক প্রিন্সিপাল মো. নাজিবুর রহমানের ক্লাসে শৃঙ্খলা ভঙ্গ অভিযোগ তুলেছেন, সেই নাজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে যা বলেছে, তাতে আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত।

যে ব্যক্তির ক্লাসে শৃঙ্খলার ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছেন, সেই প্রশিক্ষক ‘সকাল-সন্ধ্যা’কে বলছেন, “আমি ক্লিয়ার কাট বলতে পারি যে আমার ক্লাসে কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি।”“আমার অবস্থানকালে ছাত্ররা বা ছাত্রীরা যারা ছিল অর্থাৎ ক্যাডেট এসআই, তারা কেউ কোনও গণ্ডগোল করেনি। বরং আমি যেটা বলতে চাই যে, আলহামদুলিল্লাহ তারা ক্লাসটা উপভোগ করেছে এবং আমি বলবো যে তারা রেসপনসিভ ছিল।

“রেসপনসিভ বলতে আমি যেটা বোঝাচ্ছি যে, ইনটারেকশন ইন বিটউইন দি লেকচারার অ্যান্ড দি স্টুডেন্ট। দ্যাট ওয়াজ দেয়ার, কিন্তু গন্ডগোলটা কোথা থেকে হলো আই ডোন্ট নো। আমিতো কোনও গণ্ডগোল দেখিনি। বরং আই অ্যাম ভেরি হেপি দ্যাট দে আর ভেরি রেসপনসিভ।

এই বক্তব্য শোনার পরও আপনাদের নৈতিকতা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন জাগছে। যে ব্যক্তি প্রশিক্ষণ দিয়ে খুশি, সেই ব্যক্তির নাম ভাঙ্গিয়ে আপনারা প্রশিক্ষণরত এসআইদের সরিয়ে দিচ্ছেন, যার মধ্যে দিয়ে আপনারা নিজেরাই পুলিশের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন না তো?
মানলাম, তারা হৈচৈ করেছে, তো বলুন না পৃথিবীর কোন শ্রেণির ক্লাসে কথা-বার্তা হয় না? ক্লাস না করলে, ওই পুলিশের দায়িত্ব পালনে ঠিক কি ধরনের বাধার সম্মিখীন হতো? তারা কি চোর ডাকাত ধরতে পারত না, আসামীদের নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন ঠিকমত দিতো পারত না?

পেশাদারিত্বের ক্লাসের গুরুত্ব আছে, তবে সেটা পিনপতনের শব্দে ভেঙ্গে যায়, তা আমার জানা ছিল না।
এইসব সাজানো বিষয়, আমাদের সামনে আনার দরকার নাই। আমি বলি কি, ধাপে ধাপে এইসব হাস্যকর যুক্তি দেখিয়ে শোকজ, চাকরিচ্যুত করার প্রয়োজন নেই, পারলে ৮০৪ জনকে সরিয়ে দেন। মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে, আপনারা এদের পেটে লাথি মেরে এটাই প্রমাণ করতে চাচ্ছেন যে এই ৮০৪ জনই পতিত সরকারের সমর্থক? এরা কি সবাই ছাত্রলীগের পুলিশ?

ধরলাম তারা সবাই ছাত্রলীগের কর্মী ছিল। তো এই ছাত্রলীগ হওয়ার কারণে কি চাকরির সময় এরা স্নাতক সনদ জমা দেয়নি, শারীরিক উচ্চতায় হেরফের হয়েছিল নাকি এই এক বছর প্রশিক্ষণ মাফ ছিল। আজ ছাত্রলীগ, কাল ছাত্রদল, পরশো শিবির পুলিশ হবে। পুলিশের কাজ দলের বিবেচনায় দায়িত্ব পালন নয়, যে দায়িত্বপালন করতে গিয়ে আপনারা দুর্বল হয়েছেন, সেটাকে ঘৃণা করুন। সৈনিক সব সময় সৈনিক, তাকে সঠিক ও নিরপেক্ষভাবে ব্যবহার করার রাস্তা তৈরি করা সরকারের সংস্কারের অংশ, সেটা নিশ্চিয় চাকরিচ্যুত করার মাধ্যমে নয়?
শুধু একটাই অনুরোধ, আজ যাদের বিরুদ্ধে অন্যায় করছেন, যে পরিবারগুলোর স্বপ্ন ভঙ্গ মেতেছেন, সেই পরিবারগুলো একটি পরিবার হয়ত আগামীতে আপনারটাও হবে। সেই ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা আপনারদের হবে তো?

যাই হোক, পুলিশ একাডেমির সাবেক প্রিন্সিপাল মো. নাজিবুর রহমানকে ধন্যবাদ, দিনশেষে তিনি এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, সত্যটা সামনে আনছেন। ২৫২ জন এসআই অন্যায়ভাবে বৈষম্যবিরোধী সরকারের আমলে চাকরিচ্যূত ও শোকজের প্রতিবাদ জানাই। এই নোংরামি অবিলম্বে বন্ধ করুন। তাদের আদেশ প্রত্যাহার করুন।
ফেসবুক থেকে