জুলাই ৩, ২০২৫
লেডিঞ্জে গ্রেন্ড, স্টকহোম,সুইডেন
রাজনীতি বাংলাদেশ বিশ্ব

বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সমন্বয়ের পথে ভারত

বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তোলার কথা বিবেচনা করছে ভারত। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের সংসদের পররাষ্ট্রবিষয়ক স্থায়ী কমিটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই বৈঠকে ভারতের কৌশলগত স্বার্থ এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়টি আন্তর্জাতিক অংশীদারদের কাছে তুলে ধরার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার সরকারের পতনের ঘটনা ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, “দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পরিচালনার জন্য ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠিত কাঠামো রয়েছে। আমরা অনুকূল পরিবেশে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত।” তিনি আরও বলেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ভারতের সংসদীয় কমিটির আসন্ন বৈঠকে সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শংকর মেনন, সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আতা হাসনাইন, ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস এবং জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অমিতাভ মাত্তু অংশ নেবেন। এই বৈঠকে বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমন্বয়ের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরুদ্ধারে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানে সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা উঠে এসেছে। ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ইরিক গারসেটি গত জানুয়ারিতে বলেছিলেন, “আমরা দুই দেশই (ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র) যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রতিষ্ঠিত দেখতে চাই।” তিনি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের উপর জোর দেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)ও বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। ঢাকায় ইইউ দূতাবাস জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন এবং সুশীল সমাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। গত ১৮-২০ জুন ঢাকায় ইইউ-সমর্থিত একটি কর্মশালায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের উপর জোর দেওয়া হয়। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের ভূমিকার প্রতি ইইউ গুরুত্ব আরোপ করেছে।
ভারতের উদ্বেগের একটি বড় কারণ হলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা এবং যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমন কল্যাণ লাহিড়ী বলেন, “বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল সরকার ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ভারত তার কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করতে চায়।”
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “দেশবাসী একটি উৎসবমুখর নির্বাচন চায়। আমাদের লক্ষ্য তা নিশ্চিত করা।”
ভারতের এই উদ্যোগ দক্ষিণ এশিয়ায় গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারতকে তার নিজস্ব স্বার্থ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রত্যাশার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ভারতের ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক সমন্বয় কীভাবে এগোয়, তা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ভূ-প্রকৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
– লিখেছেন- আকরাম কুরাইশি [সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক]