জুলাই ১১, ২০২৫
লেডিঞ্জে গ্রেন্ড, স্টকহোম,সুইডেন
বাংলাদেশ

ফ্লাট দখলের অভিযোগে বিএনপি’র নেত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীর সংবাদ সম্মেলন

জেবা আমিনা আহমেদ নামের এক বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে মব সৃষ্টি করে হামলা ও সম্পত্তি দখলের অভিযোগে তার বিচার দাবি করেছেন সাবেক স্বামী ক্যাপিটাল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাররম হোসেন খান।

এই ব্যবসায়ীর অভিযোগ, বিএনপির কথিত নেত্রী জেবা আমিনা ঢাকায় তার বারিধারার ফ্ল্যাটে হামলা চালান।

বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন মোকাররম হোসেন খান।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, জেবা আমিনা আহমেদ নিজেকে মহিলা দলের সহসভাপতি ও ঝালকাঠি জেলা বিএনপির নেত্রী হিসেবে পরিচয় দেন। রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে আমার এবং পরিবারের সঙ্গে একের পর এক প্রতারণা, হয়রানি করে আসছেন।

মোকাররম হোসেন জানান, ২০০৫ সালে জেবা আমিনার সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। তবে পরবর্তীতে জানতে পারেন, বিয়ের সময়ও জেবা আমিনার আগের স্বামীর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক বজায় ছিল।’

একাধিক বিবাহ ইসলামী শরিয়তে নিষিদ্ধ উল্লেখ করে মোকাররম হোসেন বলেন, সে (জেবা আমিনা) এই সত্য গোপন করে কাজীর কাছে মিথ্যা বলে আমাকে বিবাহ করেন। দীর্ঘসময় নানা টানাপোড়েনের পর ২০১৭ সালে আইনি প্রক্রিয়ায় বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।’

এই ব্যবসায়ী জানান, গত ২৭ জুন ঈদের ছুটিতে তিনি পরিবারের সঙ্গে দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন। সেই সুযোগে রাতে আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার বারিধারার ২, ইউ.এন. রোডের তার মালিকানাধীন ভবনের ২০১ ও ৪০১ নম্বর ফ্ল্যাটে জেবা আমিনার নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একটি সশস্ত্র দল হামলা চালায়। তারা নিরাপত্তাকর্মী ও গৃহকর্মীদের মারধর করে, ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরা ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। এরপর তালা ভেঙে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে গৃহকর্মীদের মারধর ও নারী কর্মীদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়। এরপর মূল্যবান হীরার গহনা, স্বর্ণালংকার, রোলেক্স ও ওমেগা ঘড়ি, নগদ অর্থসহ প্রায় ৭৭ লাখ টাকার সম্পদ লুট করে।

মোকাররম হোসেনের দাবি, ঘটনার সময় ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ এসে হামলাকারীদের কাছ থেকে ২০১ ও ৪০১ নম্বর ফ্ল্যাটের চাবি উদ্ধার করে। তবে পরবর্তীকালে পুলিশ ২০১ নম্বর ফ্ল্যাটের চাবি ফেরত দিলেও ৪০১ নম্বর ফ্ল্যাটের চাবি এখনো ফেরত দেয়নি। ওই ফ্ল্যাটে তার মেয়ে মাহিরা হোসেন খান ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ব্যবহারের মূল্যবান সামগ্রী রয়েছে।

ঘটনার পর পুলিশ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো সাড়া মেলেনি বলেও অভিযোগ করেন এই ব্যবসায়ী। পরে তার মেয়ে মাহিরা হোসেন খান চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

মোকাররম হোসেন বলেন, জেবা আমিনা একাধিকবার তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নিজের বলে দাবি করেছেন এবং জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে কোম্পানি কোর্টে মামলা করেছেন। এসব বিষয়ে গুলশান থানায় একাধিক এজাহার দায়ের করা হয়েছে। ফ্ল্যাট সংক্রান্ত একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে ২০২০ সাল থেকে স্থিতিবস্থা জারি আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে মোকাররম হোসেন খান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘বিএনপি দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এই দলের ভাবমূর্তি জেবা আমিনার মতো নেত্রীদের কর্মকাণ্ডে কলুষিত হোক, আমরা তা চাই না। আমরা আশা করি, বিএনপি দলীয় পর্যায়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

মোকাররম হোসেন খান তার ও পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের গ্রেফতার, লুট হওয়া সম্পদ উদ্ধার, পুলিশের হেফাজতে থাকা ফ্ল্যাটের চাবি ফেরত, সরকার ও প্রশাসনের কার্যকর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি হামলার সিসিটিভি ফুটেজ, স্থিরচিত্র, আদালতের নথি, তালাক ও বিবাহের সনদ, পুলিশের জবানবন্দি ভিডিওসহ একাধিক প্রমাণ উপস্থাপন করেন।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে জেবা আমিন এর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, তিনি যে বাসায় থাকেন সেই ফ্ল্যাটকে দখল করা হয়েছে বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে এটা ভিত্তিহীন।

জেবার আরও দাবি, রাজনৈতিকভাবে তাকে হেয় করার জন্য এটা করা হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী আমীর হোসেন আমুর লোকজন পরিকল্পিতভাবে তাকে রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করতে এই অভিযোগ ছড়াচ্ছেন।