মাত্র দুই দিনের জেন-জি বিক্ষোভ নেপালে বিপর্যয় ডেকে এনেছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বিক্ষোভে জনপরিকাঠামোর ক্ষতি ২০০ বিলিয়ন রুপিরও বেশি। অসংখ্য ভবন ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি অমূল্য ঐতিহাসিক নথি ও রেকর্ডও ভস্মীভূত হয়েছে।
শহর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিংহ দরবার, পার্লামেন্ট ভবন ও সুপ্রিম কোর্ট গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলোর প্রতিটির নির্মাণমূল্য বিলিয়ন রুপি।
একজন কর্মকর্তা বলেন, “এই ভবনগুলোকে আর পুনরায় মেরামত করে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। এগুলো ভূমিকম্পের পরের মতো সহজে মেরামত করে পুনরায় চালু করা যাবে না। এগুলো পুনর্নির্মাণ করতে কমপক্ষে ২০০ বিলিয়ন রুপি লাগবে।”
তিনি আরও জানান, এই হিসাব কেবল ভবনের জন্য, অফিস পুনঃস্থাপন ও ব্যবস্থাপনার অতিরিক্ত খরচ এতে ধরা হয়নি।
ধ্বংসযজ্ঞ শুধু কাঠমান্ডু শহরেই সীমাবদ্ধ নয়। বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক পরিষদের হল, মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর, কারাগার, পুলিশ স্টেশন, ভূমি রাজস্ব কার্যালয় এবং ডজন ডজন পৌর ওয়ার্ড অফিস পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এক প্রকৌশলী মন্তব্য করেন, “এই ভবনগুলো কখন, কীভাবে এবং কোন সম্পদ দিয়ে পুনর্নির্মাণ সম্ভব হবে তা ভাবলেই ভয় লাগে।”
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। তবে পোখারা, ইটাহারি, জনকপুর, ধনগড়ি ও বিরাটনগরের মতো বড় শহরেও সরকারি কার্যালয় আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে। মঙ্গলবারের জেন-জি বিক্ষোভে অনুপ্রবেশকারী বিশৃঙ্খল গোষ্ঠীগুলো বিশেষভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। শুধু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নয়, ব্যক্তিগত ও সম্প্রদায়িক সম্পদও তারা লক্ষ্যবস্তু করে। রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ি, ব্যবসায়িক কমপ্লেক্স, পর্যটন অবকাঠামো, গাড়ির শোরুম, সংবাদমাধ্যমের দপ্তর ও স্থানীয় সুবিধা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়।
সোমবার পুলিশের গুলিতে ১৯ জন নিহত হওয়ার পর বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে। মঙ্গলবার সকালে উস্কানিদাতারা সুযোগ নিয়ে সরকারি ও সম্প্রদায়িক ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এখন পর্যন্ত মোট ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ।
এই ধ্বংসযজ্ঞে নেপালের রাষ্ট্রযন্ত্র কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। ফেডারেল সরকারের তিন অঙ্গই বিপর্যস্ত; সুপ্রিম কোর্ট তাবুতে বসে কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছে।
কার্যনির্বাহী কেন্দ্র সিংহ দরবারের বেশিরভাগ অফিস অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংস হয়েছে। নিউ বানেশ্বরের সংসদ ভবনও পুড়ে গেছে। ফলে পরিস্থিতি শান্ত হলে সংসদ সদস্যরা কোথায় অধিবেশন করবেন তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আলোচনা চললেও কর্মকর্তারা বলছেন, মন্ত্রিসভা বৈঠক করার মতো অক্ষত কোনও স্থানই অবশিষ্ট নেই।
শহর উন্নয়ন মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে জানিয়েছে, ২০০ বিলিয়ন রুপির ক্ষতির হিসাব কেবল প্রাথমিক অনুমান। ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো প্রতিস্থাপন ও শাসনক্ষমতা পুনরুদ্ধারের প্রকৃত ব্যয় এর চেয়ে বহুগুণ বেশি হতে পারে।
সুত্র – খবরহাব



