জুলাই ৪, ২০২৫
লেডিঞ্জে গ্রেন্ড, স্টকহোম,সুইডেন
বাংলাদেশ

নেত্রকোনায় সাংবাদিকসহ ৪৩৬ জনের নামে মামলা দিল বিএনপি নেতা

বিএনপি কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলায় আরও একটি মামলা হয়েছে।

বুধবার উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মজলু মিয়া বাদী হয়ে থানায় মামলাটি করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার খালিয়াজুরি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মকবুল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা এ মামলায় ১৮৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে নেত্রকোনা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাজ্জাদুল হাসানকে। ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে খালিয়াজুরি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক রব্বানী জব্বারকে।

আসামিদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মী এবং সাংবাদিক রয়েছেন।
মামলায় ৫১ নম্বর আসামি করা হয়েছে দৈনিক যুগান্তরের খালিয়াজুরি উপজেলা প্রতিনিধি ও উপজেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলামকে। তিনি সিদ্দিকুর রহমান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী। ১০৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে দৈনিক সকালের সময়-এর উপজেলা প্রতিনিধি মৃণাল কান্তি দেবকে।
৩৫ নম্বর আসামি হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরী।

সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে ১৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে মো. শাহিন মিয়াকে, যিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে কর্মরত। ২০ নম্বর আসামি রাজন তালুকদার, বারহাট্টা উপজেলায় খাদ্য গুদামে নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে নিয়োজিত।

১৮৬ নম্বর আসামি আবদুল মোনায়েম, তিনি নূরপুর বোয়ালী দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক। ২৬ নম্বর আসামি আদিল মিয়া, সিদ্দিকুর রহমান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক। ২৭ নম্বর আসামি আসাদুল ইসলাম, খালিয়াজুরি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক। ৫৭ নম্বর আসামি রফিকুল ইসলাম, প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন কালব-এর সরকারি ব্যবস্থাপক হিসেবে কলমাকান্দায় কর্মরত।

এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, গত বছরের ১৬ জুলাই বেলা ১২টা ২০ মিনিটে খালিয়াজুরি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সভা দলীয় কার্যালয়ে চলাকালে এক নম্বর আসামির নির্দেশে ২ থেকে ১০ নম্বর আসামিদের নেতৃত্বে অন্যান্য আসামিরা অস্ত্রসহ উপস্থিত হয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও ভাঙচুর চালিয়ে সভাটি পণ্ড করে দেন। এ সময় রাস্তা বন্ধ করে ১৫টি মোটরসাইকেল ও তিনটি ইজিবাইক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
মামলার বাদী মজলু মিয়ার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে মামলা করতে হবে, তাই আমি বাদী হয়েছি।’ এরপর অন্য প্রশ্নে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন। পরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

গত বছর আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ১৭ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত জেলায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অন্তত ৬০টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় ছয় হাজার ব্যক্তি আসামি হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত এক ডজন পেশাদার সাংবাদিক রয়েছেন।

মামলার আসামি সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এজাহারে যে সময় ও ঘটনার কথা বলা হয়েছে, আমি সে সময় সেখানে ছিলাম না। আমাকে অহেতুক রাজনৈতিকভাবে হেয় করা ও হয়রানি করতেই মামলায় আসামি করা হয়েছে। আমি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নই।’

সাংবাদিক মৃণাল কান্তি দেব বলেন, ‘আমি এই ঘটনার কিছুই জানি না এবং এর সঙ্গে কোনোভাবে জড়িতও নই। উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে।’

খালিয়াজুরি প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘শফিকুল ইসলাম ও মৃণাল কান্তি দেব পেশাদার সাংবাদিক। সহিংসতা-সংক্রান্ত অভিযোগে তাদের আসামি করাটা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী। এটা তাঁদের জন্য মানহানিকর ও অসম্মানজনক। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আশা করি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খালিয়াজুরি উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুর রউফ স্বাধীন বলেন, ‘মামলায় কারা আসামি হয়েছেন, তা আমার জানা নেই। বাদী আমার সঙ্গে পরামর্শ করেননি। এ নিয়ে অনেকে আমাকে ফোন করছেন। মামলার বিস্তারিত জানার জন্য আমাদের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ভালো হয়।’ তবে মাহবুবুর রহমানের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

খালিয়াজুরি থানার ওসি মকবুল হোসেন বলেন, মামলার পর অভিযান চালিয়ে তিনজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকার বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন আসামি অন্য মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন।