জানুয়ারি ২২, ২০২৫
লেডিঞ্জে গ্রেন্ড, স্টকহোম,সুইডেন
বাংলাদেশ মতামত

দ্রুততম সময়ের মধ্যে চা শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দিয়ে দিন, ওদের কাজে ফেরান

নাদিম মাহমুদ : বাগানে কাজ বন্ধ থাকায় কচু বিক্রি করে কোনো রকমে চলছি। এ মাস গেলে আমাদের চার মাসে পড়বে বেতন বিহীন। বাগান থেকে সপ্তাহে রেশনের সাড়ে তিন কেজি আটা দেওয়া হয়, সেই দিয়ে আর কচু খেয়ে দিন পার করছি। “আজকে কচু বিক্রি করে ৪০ টাকা পেয়েছি; এই ৪০ টাকা দিয়ে কী হবে? (বিদ্যুৎ গোয়ালা)

৩০ বছর ধরে বাগানে কাজ করছি এ রকম আর হয়নি। এত কষ্ট আমরা আর কোনোদিন করিনি। আটজনের পরিবার নিয়ে কষ্ট করে চলছে। আর ছোট বাচ্চা-কাচ্ছা নিয়ে খুব কষ্টে আছি। ( কুলমতি লোহার)

সাতজনের পরিবারে রাতে ভাত, আর সকাল-দুপুর রুটি খেয়ে চলছি। ছোট বাচ্চাদের ঠিকমত খাওয়াতে পারছি না। বড় ছেলে গাড়ি ভাড়ার জন্য স্কুলে যেতে পারছে না। (বিন্দা লোহার)

এই যে তিনজনের বক্তব্য দিলাম, এরা সবাই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির ‘চা শ্রমিক’। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার বিদায়ের পর লাক্কাতুরা, কেওয়াছড়া, দলাদলিসহ ন্যাশনাল টি কোম্পানির চা শ্রমিকরা মজুরি থেকে বঞ্চিত। এর প্রতিবাদে দীর্ঘ ১ মাসেরও বেশি সময় কর্মবিরতি পালন করছেন এই হতভাগা চা শ্রমিকরা। রাজধানী থেকে শত মাইল দূরে এই মানুষগুলোর কণ্ঠস্বর সরকার শুনতে পারছে না। সীমাহীন মানবেতর জীবন যাপন করা এই মানুষগুলোর জন্য রাজধানীতে কেউ সমাবেশও করে না। শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো সিলেটের এই চা শ্রমিকদের কণ্ঠ ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। পত্রিকায় খবর এলো তা প্রকাশ হয় ভিতরের পাতায় সিঙ্গেল কলামে। যেন এই মানুষগুলোর পেটে ক্ষুধার জ্বালা নেই, ওদের সন্তানদের লালন-পালন করতে হয় না।

প্রশ্ন হলো, বিদ্যুৎ গোয়ালা, কুলমতি লোহার, বিন্দা লোহারের পরিচয় যদি ‘চা শ্রমিক না হয়ে ‘সচিব হতো, পুলিশের কর্তা হতো, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতো কিংবা তিতাসের কর্মচারী হতো তাহলে কি পরিস্থিতি হতো? উনারা কি পারতেন বেতন ছাড়া একমাস চলতে? পারতেন ২০ টাকা বাস-ভাড়া দেয়ার সামর্থ্য হারানো বাবা-মা তার সন্তানদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করতে?

গত তিন মাসে ঢাকার রাস্তায় নানা মানুষের দাবি-দাওয়া আদায়ের চিত্র আমরা দেখেছি। কিন্তু এই গতর খাটা মানুষগুলোর দুর্দশা লাঘবের কোন উদ্যেগ দেখিনি। তারা জেলা প্রশাসকে জানিয়েছে, সমাবেশ করে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে, এরপর তারা আর কি করতে পারে?

না এটা কেবল ওই গোষ্ঠিদের হয়, যাদের কণ্ঠস্বরের আওয়াজ কেউ শুনতে চায় না। যে মানুষগুলো ত্রিশ বছরেও এই সমস্যার মধ্যে পড়েনি, সেই মানুষগুলোর বেতন কেন আটকে রাখছে সরকার? নাকি যারা বেতন আটকে রাখছে তারা শেখ হাসিনা সরকারের অনুসারী, আন্দোলন জোরদার করে অন্তবর্তীকালিন সরকারকে বিব্রত করছে?

সিলেটের এই শ্রমিকদের পাশে দ্রুত দাঁড়ান। তাদের অন্ন ধ্বংস করবেন না, ওদের ঘামে ভেজা শরীর আপনাদের মুখেও অন্ন এনে দেয়। দেশটাকে এগিয়ে নিতে হলে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে চা শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দিয়ে দিন, ওদের কাজে ফেরান। ফেসবুক থেকে