দেশে বেকার মানুষের সংখ্যা গত এক বছরে বেড়েছে সোয়া তিন লাখ। ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর সময়কালে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশে। সেই হিসাবে দেশে বর্তমানে প্রায় ২৭ লাখ ৩০ হাজার মানুষ বেকার অবস্থায় রয়েছেন—যারা কোনো কাজ করছেন না, কিন্তু কাজের খোঁজ করছেন এবং কাজ করতে প্রস্তুত।
রবিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এ তথ্য প্রকাশ করেছে। ‘ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ’-এর এই সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেকারত্ব উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ।
প্রতিবেদনে বেকারত্বের হার দুটি ভিন্ন গাইডলাইনের ভিত্তিতে প্রকাশ করা হয়েছে। একটি হলো— আইএলও-র ১৩তম গাইডলাইন, আরেকটি ১৯তম গাইডলাইন (ICLS)।
১৩তম গাইডলাইনের হিসাবে চলতি বছরের ডিসেম্বর শেষে দেশে বেকারের হার ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এই হিসাবে মোট বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ১০ হাজার। আগের বছর একই সময় এই সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ৫০ হাজার।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিকভাবে সর্বজনস্বীকৃত ১৯তম গাইডলাইন অনুযায়ী, চলতি সময়ের বেকারত্বের হার আরও বেশি—৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
এই দুটি হিসাবের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থানের সংজ্ঞা ভিন্ন হওয়ার কারণে। ১৩তম গাইডলাইনে ‘কাজ’ হিসেবে ধরা হয় এমন কর্মও, যেখানে ব্যক্তির উৎপাদিত পণ্য শুধু পারিবারিক ব্যবহারে ব্যবহৃত হয়। আর ১৯তম গাইডলাইন কেবলমাত্র বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে করা কাজকে ‘চাকরি’ হিসেবে গণ্য করে। ফলে বাস্তব অবস্থার কাছাকাছি তথ্য উঠে আসে নতুন গাইডলাইনে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশের ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো— দীর্ঘ সময়ের উচ্চ মূল্যস্ফীতি, নতুন বিনিয়োগে স্থবিরতা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের হার, এবং শিল্প ও উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থান সংকোচন।
এছাড়া ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য উপযুক্ত সহায়তা না থাকাও কর্মসংস্থানের বড় বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
বিবিএসের সংজ্ঞা অনুযায়ী, বাংলাদেশে ‘বেকার’ সেই সব ব্যক্তি, যারা গত ৭ দিনের মধ্যে এক ঘণ্টাও কোনো কাজ করেননি, কিন্তু কাজ পেতে চেষ্টা করেছেন এবং কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সংজ্ঞা অনুযায়ী বেকারত্বের হিসাব বাস্তব চিত্রের চেয়েও কিছুটা কম দেখায়। কারণ, অনেক ‘আংশিক কর্মহীন’ ব্যক্তিও এই হিসাবে কর্মজীবী হিসেবে বিবেচিত হয়ে যান।
দীর্ঘ সময় ১৩তম আইসিএলএস গাইডলাইনের ভিত্তিতে শ্রমশক্তি জরিপ করে আসছিল বিবিএস। কিন্তু আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ১৯তম গাইডলাইনে হিসাব না করায় বহুবার সমালোচনার মুখে পড়ে সংস্থাটি।
তবে বর্তমানে দুটো পদ্ধতিরই তথ্য প্রকাশ করছে তারা। এর ফলে শ্রমবাজারের প্রকৃত চিত্র আরও স্পষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।