সরোয়ার তুষার যুগ্ম আহ্বায়ক জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। NCP’র আত্মপ্রকাশের পর থেকে সরওয়ার তুষার বাক পটু এবং ভদ্র মানুষ হিসেবেই নিজের একটা অবস্থান তৈরি করছিলেন। কিন্তু তার নিরীহ, ভদ্র, বিনয়ী চেহারার আড়ালে নারীদের প্রতি ছিল তার লোলুপ দৃষ্টি। যা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, তিন সন্তানের জননীকেউ তিনি ছাড় দিতে রাজি নন। জাতীয় নাগরিক পার্টি’র বয়স ৬ মাস না হলেও এই কদিনে অন্তত ছয়শর বেশি অভিযোগ এসেছে এদের নামে সারা দেশ থেকে।
কিছুদিন পরপরই এই দলের নারী নেত্রীদের বেসামাল, বেপরোয়া জীবন যাপনের নানা কুকীর্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
সবকিছুকে ছাপিয়ে অতি সম্প্রতি সামনে আসে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষারের চরিত্রহীনতার এক প্রামাণ্য দলিল।
অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হাসান আরিফের (যিনি কিছুদিন আগে মারা গেছেন) পুত্রবধূ নীলা ইসরাফিলের সাথে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক তুষারের একাধিক ফোন কলের অডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এখান থেকেই শুরু হয় আলোচনা।
এরপর নানামুখী চাপে জাতীয় নাগরিক পার্টি সরোয়ার তুষারকে সাময়িক বহিষ্কার এবং কারণ দর্শানোর নোটিস প্রদান করে। সেই চিঠিতে উল্লেখ করা হয় আপনার বিরুদ্ধে নৈতিক স্কলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে সে কারণে আপনাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হলো। এমন চিঠি অবশ্য কিছুদিন আগেও সবাই দেখেছে। নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে সেই দরবেশের চেহারা। যার নাম গাজী তানভীর। এই গাজী তানভীরকেউ কিন্তু ৪০০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে এমন একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছিল। সেই চিঠিতে তানভীরকে পাঁচ কার্য দিবসের মধ্যে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ব্যাখ্যা দেওয়ার কথা ছিল। তা না হলে তাকে স্থায়ীভাবে দল থেকে বহিষ্কারের কথা উল্লেখ করা ছিল। প্রায় দুই মাস হতে চলল তানভীরের চিঠির ব্যাখ্যা জমা পড়েছে কিনা সেটাও কেউ জানতে পারেনি তানভীরকে বহিষ্কার করা হয়েছে কিনা সেটা সম্পর্কে কোন কিছু ক্লিয়ার করেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় নাগরিক পার্টির নেত্রী নিলা ইসরাফিল তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে তার দলের নেতা সরোয়ার তুষার এবং তাকে নিয়ে যে অডিও কল ভাইরাল হয়েছে সে সম্পর্কে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন।
সেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে তিনি সে সময় নেপালে বসবাস করতেন। যখন তিনি নেপালে বসবাস করতেন তার আগে থেকেই তিনি তুষারের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। সে সময় তুষার তাকে বিভিন্ন কারণে সময় অসময়ে ফোন করতো।
কথা বলার ফাঁকে সে বলতো যে তোমার ছবি পাঠাও, তুমি দেখতে খুব সুন্দর, তোমার ঠোঁট সুন্দর, তোমার কন্ঠ সুন্দর, তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে। নিলা ইসরাফিল তার স্ট্যাটাসে আরও উল্লেখ করেন যে গত রমজান মাসে হঠাৎ করে তুষার আমাকে এমন এক অনৈতিক প্রস্তাব করে যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখে প্রকাশ করা সম্ভব না।
নিলা ইসরাফিল আরও লিখেছেন যে, এই বিষয়টি নিয়ে তিনি বাংলাদেশে আসার পর জাতীয় নাগরিক পার্টির বর্তমান আহবায়ক নাহিদ ইসলামের কাছে অভিযোগ করেছিলেন । তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নাহিদ ইসলাম ঢাকা মহানগরের দুইজন নাগরিক পার্টির নেতাকে এই বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই বিষয়টি আর আলোর মুখ দেখেনি। যেহেতু জাতীয় নাগরিক পার্টির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম তার দলের নেতার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কোনরকম সমাধান করেননি সে কারণে দলের যুগ্ম আহবায়ক সরোয়ার তুষার তার ঘৃণ্য উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য মাঝেমধ্যেই নীলা ইসরাফিলকে ফোন করতেন এবং নানা রকম অশ্লীল প্রস্তাব দিতেন।
নীলা ইসরাফিল শুরু থেকে বেশ প্রতিবাদী নারী হিসেবে পরিচিত। কয়েক বছর আগে তিনি তার মৃত শশুর, সাবেক উপদেষ্টা হাসান আরিফের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন। সে মামলায় নীলা অভিযোগ করেছিলেন গর্ভাবস্থায় তার পেটে লাথি মেরে হাসান আরিফ তার গর্ভের বাচ্চা নষ্ট করে ফেলেছিল। কিন্তু হাসান আরিফের ক্ষমতার কাছে সে সময় নীলার ন্যায় বিচার পাননি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে হাসান আরিফের বিরুদ্ধে গিয়ে যে নীলা ন্যায়বিচার পাননি। নিলা কি এখন ন্যায় বিচার পাবেন? অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগ কর্তা হিসেবে যারা পরিচিত, কিংস পার্টি হিসেবে যারা ইতিমধ্যে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সেই জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও কি নীলা ইসরাফিল বিচার পাবেন। সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন?