জুন ১, ২০২৫
লেডিঞ্জে গ্রেন্ড, স্টকহোম,সুইডেন
বাংলাদেশ মানবাধিকার রাজনীতি

জীবিতকে মৃত দেখিয়ে জুলাই আগস্ট হত্যা মামলা-নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে ঘুরছেন দাঁরে দাঁরে

২০২৪ সালের জুলাই আগস্ট আন্দোলনের সময় ঢাকা যাত্রাবাড়ী থানা একটি হত্যা মামলায় মৃত হিসেবে উল্লেখ করা হয় ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার সোলায়মান সেলিম কে । পুলিশ যখন ঠিকানা যাচাই করতে যান তখন সেলিম জানতে পারেন তাকে মৃত দেখিয়ে হত্যা মামলা করা হয়েছে।

গত বছরের ৩১শে আগস্ট এই মামলাটি করেন সেলিমের আপন ভাই মোস্তফা কামাল। সাক্ষী হিসেবে দুজনের নামও তার আরোও দুই ভাইয়ের সঙ্গে মিলে যায়। নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে তিনি ঢাকার আদালত ডিবি অফিস ও থানায় পাচবার হাজিরা দিয়েছেন।

সেলিম জানান তিনি প্রাণভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। ফুলবাড়িয়ার ধামুরে এই ঘটনা চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। জুলাই আন্দোলনকে ব্যবহার করে এমন হত্যা মামলা নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ।

সেলিম জানান-যদি বুক চিরে দেখাতে পারতাম, আমি জীবিত থাকতে মৃত। আমার বড় ভাই বাংলাদেশের সরকারের কাছে আমাকে মৃত দেখিয়েছে। আমি মারা গেছি এর চেয়ে দুঃখের কি আছে পৃথিবীতে। ৩রা আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে যাত্রা বাড়ির কাজলা এলাকায় নাকি আমি মারা গেছি।

সেলিম বলেন যদি এর আগে আমাকে হত্যা করার সুযোগ পেত তাহলে তারা তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করে ফেলত। এসময় সেলিম কান্নায় ভেঙে পড়েন।

সেলিম বলেন, চারবার যাত্রাবাড়ী থানায় একবার ডিবি অফিসে গিয়েছেন। দুইবার তাকে কোর্টে হাজিরা দেওয়া হয়। সেলিম বলেন মামলাটা করেছে শুধু তাকে হত্যা করার জন্য, যদি এর মাঝখানে তাকে মেরে ফেলতে পারতো তাহলে ওরা জাগোরে আসামি করেছে ৪১ জন অজ্ঞাত ২০০ মানুষ অযথা জেল খাটতো।

স্থানীয়রা বলেন, সমস্যা আছে এক জায়গায়, হত্যা মামলা দেখাবে অন্য জায়গায় এটা তো ঠিক না। ব্যক্তিগত শত্রুতা যেন ছাত্র আন্দোলনে দেখানো না হয় সেই দাবি করেন তারা।

যাত্রাবাড়ী থানার ওই মামলার প্রধান আসামি শেখ হাসিনা এ ছাড়া ওবায়দুল কাদের আসাদুজ্জামান খান কামাল সহ ৪১ জনের নাম দেয়া হয়েছে এছাড়া অজ্ঞাত ও আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের আরও দেড় থেকে দুই শতাধিক মানুষকে।

যাত্রাবাড়ী থানায় যোগাযোগ করে জানা যাচ্ছে যে, মোস্তফা কামালের মামলাটি রুজু অবস্থায় রয়েছে এবং গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি মামলাটি তদন্ত করছে।

ডিবির তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন মামলার বাদী এখন পলাতক। সেলিম জীবিত কিনা তা নিশ্চিত হতে আদালত ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন।

জুলাই আগস্টে আন্দোলনের পর ভূয়া হত্যা মামলা দিয়ে হয়রানি এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণোদিত ঢালাও হত্যা মামলা দায়েরের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া একটি হত্যা মামলায় আটক হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও সমালোচনার ঝড় উঠে।

মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন একজন জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে তারই আত্মীয়-স্বজন মামলা করছেন এটি কল্পনার বাইরে। এবং এটি সরাসরি জুলাই আগস্ট এর শহীদদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার মত ঘটনা। কেউ হুকুমের আসামী হতে পারে কিন্তু উপস্থিত থেকে এগুলি চালানো বা অন্য কিছু করা এই জায়গাটিতেও আমরা দেখছি নাম দেওয়া হচ্ছে, দ্বিতীয় হচ্ছে সাংস্কৃতিক কর্মীদের বিরুদ্ধেও হত্যা মামলা দেয়া হচ্ছে, ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দেয়া হচ্ছে, জুলাই আগস্ট এর ঘটনায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে, তারপরে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক মাত্রায় মামলা দেয়া হচ্ছে। এর ফলে মামলা দেয়ার আগে এক ধরনের চাঁদাবাজি আমরা লক্ষ্য করেছি যে মামলা তৈরি হচ্ছে টাকা দাও তা না হলে তোমার নাম দিব আরেকটা হচ্ছে নাম প্রত্যাহারের জন্য এ ধরনের চাঁদাবাজি হচ্ছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি। এই সবগুলি মানবাধিকার লংঘন করা এগুলো যেমন সামাজিক অপরাধ বা ফৌজদারি অপরাধ বা মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।

মানবাধিকার কর্মী এলিনা খান বলেন- যারা জড়িত সত্যিকার ভাবে তাদেরকে আনা উচিত বিচারে এবং দ্রুত বিচার করা উচিত। কিন্তু এটা করতে যেয়ে এমন কিছু করা উচিত না যেটা অন্যান্য যারা সাধারণ মানুষ যারা নিরীহ মানুষ যারা এর সঙ্গে জড়িত না তাদেরকে নিয়ে এসে এক ধরনের ইচ্ছাকৃত মামলা কে দুর্বল করার যে প্রবণতা করছে তাদেরকে বিচার করা উচিত। যে তোমরা এই কাজ কেন করেছো? তারা যখন থেমে যাবে তখন এই ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না। এটা খুবই দুঃখজনক একটা বিষয় যে ধরেন ৫ই আগস্ট এর আগে যে ঘটনাগুলো আগে ঘটেছে তখন কিন্তু মিথ্যা মামলা হয়রানির কারণে হাজার হাজার মানুষ সাফার করছে, সেটাই যদি আবার পুনরাবৃত্তি ঘটে তাহলে এটা দুঃখজনক বিষয়।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের দেড় হাজারের মতো মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর এর মধ্যে প্রায় ৬০০ টি হত্যা মামলা । এসব মামলা তদন্তে মনিটরিং করার কথা জানিয়েছিল পুলিশ।

সুত্র – বিবিসি বাংলা