নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার ছাত্রলীগ নেতা রুহুল আমিন আকাশকে নির্মমভাবে হত্যা করে তার লাশ রাস্তায় ফেলে গেছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা, পরিবারের ভাষ্যে উঠে এলো এমন হৃদয়বিদারক ঘটনার তথ্য।
১৬ই জুন, সোমবার সকালে ময়মনসিংহ বাইপাস সড়কের পাশে পড়ে থাকা তার নিথর দেহ যেন ৫ই আগস্ট পরবর্তী সমাজ ও রাজনীতির নির্মমতাকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিলো। রাজনৈতিক সহিংসতার দীর্ঘ ছায়ার মধ্যে আরও একটি নাম জুড়ে গেল—আকাশ।
নিহতের ভগ্নিপতি বোম্বে সুইটস কোম্পানির আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. আনিছুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মাত্র দেড় মাস আগে রুহুল আমিন আকাশ বিয়ে করেছিলেন। তার স্ত্রী গাজীপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন। গতরাতে সে তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আমার বাসায় বেড়াতে আসে। সন্ধ্যায় তার শারীরিক অবস্থার একটু খারাপ হলে সে বমি করে। এরপর রাতে ঘুমিয়ে পড়ে সকালে হাসপাতালে যাবে বলে বাসা থেকে বের হয়। পরে মৃত্যুর বিষয়টি হাসপাতাল থেকে আমাদের জানানো হয়।
এ দিকে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ হোসেন বলেন, এটি স্বাভাবিক মৃত্যু। মৃতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রুহুল আমিন আকাশ ছিলেন কলমাকান্দা উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। স্বপ্ন ছিল দেশের জন্য কাজ করার, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। কিন্তু সে স্বপ্ন আজ রক্তাক্ত রাস্তার ধারে থমকে দাঁড়িয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে বাইপাস সড়কে তার নিথর দেহ দেখতে পান পথচারীরা। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। সেই অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই মৃত্যু স্বাভাবিক নয়—এটাই বলছে প্রাথমিক আলামত। রুহুল আমিন আকাশের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল, মুখে রক্ত।
পরিবারের ভাষ্য, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
তারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ও তার দোসর বিএনপি, জামায়াত-শিবির, বৈছা, এনসিপিসহ মব বাহিনীর সন্ত্রাসের দৃষ্টান্ত এই হত্যাকাণ্ড। ৫ই আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর হাজার হাজার নেতাকর্মীকে যেভাবে নৃশংস কায়দায় হত্যা করা হয়েছে, আকাশের হত্যাকাণ্ড তারই ধারাবাহিকতা।
ছাত্রলীগ নেতার এই মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগে। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই অকাল মৃত্যুর পেছনে যারা দায়ী, তাদের দ্রুত শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনতে হবে। একইসঙ্গে তারা নিহত নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।
রাজনৈতিক হত্যা আমাদের নতুন নয়। কিন্তু প্রতিটি মৃত্যু শুধু পরিসংখ্যান নয়—এর পেছনে থাকে ভেঙে পড়া পরিবার, অসহায় বাবা-মা, আর্তনাদরত ভাই-বোন। রুহুল আমিন আকাশের মৃত্যুতেও সেই একই ছবি দেখা গেছে—শোক, ক্ষোভ ও ন্যায়বিচারের আকুতি।
এই ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি ঘৃণা ও সহিংসতা বন্ধ না হলে, এভাবে আরও কত ‘আকাশ’ ঝরে যাবে?