আগস্ট ৬, ২০২৫
লেডিঞ্জে গ্রেন্ড, স্টকহোম,সুইডেন
বিশ্ব

চীনে ছড়িয়ে পড়ছে  চিকুনগুনিয়া ভাইরাস –  আক্রান্ত ৭০০০ জন

চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ গুয়াংদোংয়ে মশাবাহিত ভাইরাস চিকুনগুনিয়া ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। জুলাই মাস থেকে চলতি আগস্ট পর্যন্ত ৭ হাজারেরও বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, যা দেশটির জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা মহামারির সময়কার মতোই কঠোর নজরদারি, কোয়ারেন্টাইন এবং জীবাণুনাশের মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে প্রদেশজুড়ে।

উল্লেখ্য, জুলাই মাসের শুরু থেকেই গুয়াংদোং প্রদেশে চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বাড়তে থাকে। এখন পর্যন্ত ১২টি শহরে সংক্রমণ ছড়িয়েছে, যার মধ্যে ফোশান শহর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। গত সপ্তাহেই প্রায় ৩ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে একে অপরকে সংক্রমণ করে না; বরং কোনো সংক্রমিত ব্যক্তিকে কামড়ানো মশার মাধ্যমেই এটি ছড়ায়। আক্রান্তরা সাধারণত জ্বর, তীব্র জয়েন্ট ব্যথা, র‍্যাশ, মাথাব্যথা ও গাঁটে ফুলে যাওয়ার মতো উপসর্গে ভোগেন।

ফোশান শহরে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করে মশারি টানানো বিছানায় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেউ অন্তত ৭ দিন বা রিপোর্ট নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত ছাড়পত্র পাচ্ছেন না। সংক্রমণ রোধে লোকজনকে বাড়ির ফুলের টব, কফি মেশিন, ফেলে রাখা বোতলে জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—তা না মানলে ১০ হাজার ইউয়ান পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

একইসাথে “এলিফ্যান্ট মশা” নামে পরিচিত মশা ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, যারা ছোট চিকুনগুনিয়া-বাহক মশাকে খেয়ে ফেলতে সক্ষম। শহরের বিভিন্ন লেকে ইতিমধ্যে ৫ হাজার মাছ ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, যেগুলো মশার লার্ভা খেয়ে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ড্রোন ব্যবহার করে জমে থাকা পানির উৎস শনাক্ত করা হচ্ছে।

এছাড়াও, হংকংয়ে এক ১২ বছর বয়সী ছেলের শরীরে চিকুনগুনিয়া ধরা পড়েছে, সে সম্প্রতি ফোশান ভ্রমণ করেছিল। ভাইরাসটি সাধারণভাবে চীনে অপ্রচলিত হলেও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে এর প্রাদুর্ভাব প্রায় নিয়মিত। এখনও পর্যন্ত চীনে সব রোগীই মৃদু উপসর্গে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৯৫ শতাংশ রোগী সাত দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

তবুও সামাজিক মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, “এই ভাইরাস নিয়ে ভয় পাচ্ছি। দীর্ঘস্থায়ী জয়েন্ট ব্যথা খুবই কষ্টকর শোনাচ্ছে।” আবার কেউ তুলনা করছেন কোভিডের সঙ্গে, বলছেন “এই কোয়ারেন্টাইন কি সত্যিই দরকার? কেউ তো আর কাউকে কামড়াচ্ছে না।”

প্রসঙ্গত, চিকুনগুনিয়া প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৫২ সালে তানজানিয়ায়। তারপর এটি আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে ১১০টিরও বেশি দেশে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব রয়েছে। এটি মৃত্যুর কারণ সাধারণত হয় না, তবে নবজাতক, বয়স্ক এবং হৃদরোগ বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে জটিলতা বাড়তে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ভাইরাসটি প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো জমে থাকা পানির উৎসগুলো ধ্বংস করা, যাতে মশা বংশ বিস্তার করতে না পারে। তথ্যসূত্র : বিবিসি