জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
লেডিঞ্জে গ্রেন্ড, স্টকহোম,সুইডেন
বাংলাদেশ

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মুক্তি দিন

কবির য়াহমদ : চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর বেশ কিছু বক্তব্য ফেসবুক সূত্রে শুনলাম। তাকে অনেক জানাশোনা লোক মনে হয়েছে। কেবল নিজ ধর্মের প্রতিই আনুগত্যই অয়, অপরাপর ধর্মগুলোর প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল মনে হয়েছে। তার দেওয়া বক্তব্যগুলোর মধ্যে উসকানি কানে বাজেনি, চোখে পড়েনি।

গেরুয়া জামা পরেন তিনি। এই জামা পরা লোকজনেরা মনে করে থাকেন, এই রঙে রয়েছে জীবনীশক্তি। ফল পাকলে যেমন অধিকাংশই কমলা রঙের হয়, তেমনি পরিণত হওয়ার প্রতীক ভাবেন তারা এই পোশাককে। চিন্ময় কৃষ্ণ এবং তার অনুসারীরা পরিণত ভেবেই বুঝি এমন পোশাকে। অবশ্য অনেক সাধু সন্ন্যাসীই এমন রঙের পোশাক পরে থাকেন। পোশাক নিয়ে এই সামান্য কথাগুলো হয়ত পূর্ণাঙ্গ নয়, তবে সে পথেরই।
সনাতন জাগরণী মঞ্চ নামের যে সংগঠন বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের অধিকার আদায়ের দাবিতে মাঠে নেমেছে, তাদের প্রতি কঠোর অন্তর্বর্তী সরকার। তাদের ৮ দফা দাবি নিয়ে সরকারের গুরুত্ব নেই। বরং তাদের আন্দোলনকে ভণ্ডুল করে দেওয়ার অভিসন্ধি চলমান। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে হয়রানি তার প্রমাণ।

সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। সভা-সমাবেশে ব্যাপক উপস্থিতি বলছে তাদের দাবিগুলোর প্রতি একাত্ম সকল সনাতনী। এগুলোকে তাই অগ্রাহ্য করা উচিত হবে না। সরকারকে তাদের দাবি ও অধিকারকে অগ্রাহ্য না করে সহনশীল হতে হবে।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে। পাঁড় সরকার সমর্থকও জানেন এই অভিযোগ হয়রানির উদ্দেশ্যে। এখান থেকে সরকারের প্রাপ্তির কিছু নাই, বরং আছে অনেক কিছু হারাবার। চিন্ময়কে যত বেশি হয়রানি করা হবে, সরকার তত বেশি সমালোচিত হবে। দেশে হয়ত এর প্রতিক্রিয়া বিশাল পরিসরে হবে না, কিন্তু বিদেশে হবে ভয়ানক। বিদেশিরা বলবে শান্তিতে নোবেলজয়ী দেশকে রেখেছেন অশান্তিতে। এতে তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে ভয়ঙ্করভাবে।

চিন্ময় কৃষ্ণ কারাগারে। তার মাঝে কঠিনের যে রূপ দেখা গেছে, তাতে মনে হয় না তিনি কোন দাসখত দিয়ে মুক্তি চেয়ে নেবেন। বরং এই কারাগমন তাকে অনেক শক্তিশালী করবে; বিপরীতে সরকারকে করবে দুর্বল।
এই প্রথম বাংলাদেশে সনাতনীদের ব্যাপক শক্তিশালী রূপে দেখা গেছে। লক্ষ্য অর্জিত হয়নি তাদের ঠিক, তবে তারা ঐক্যের প্রমাণ রেখেছেন। এখানে তারা দেখছে না কে ইসকন আর কে অ-ইসকন, বরং আওয়াজ তুলেছে সনাতন-সনাতন।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মুক্তি দিন, মামলা প্রত্যাহার করুন, এবং সনাতনীদের দাবিগুলোর প্রতি সংবেদনশীল হোন। মুক্তি-প্রত্যাহার ও দাবি মেনে নেওয়ার মাঝে পরাজয় নেই, বরং এর মধ্যে আছে শাসকের যোগ্যতা প্রমাণের রসদ। লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট