জুলাই ২৮, ২০২৫
লেডিঞ্জে গ্রেন্ড, স্টকহোম,সুইডেন
বাংলাদেশ স্বাস্থ্য

চাঁদপুরে ২৫ জন এইচআইভি পজিটিভ রোগী শনাক্ত

চাঁদপুরে আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বিনামূল্যে এইচআইভি রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এই হাসপাতালে স্থাপিত এইচটিসি এআরটি সেন্টার থেকে গত ৫ বছরে ৬ হাজার ৪২৭ জনের রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২৫ জন রোগীর শরীরে এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৫ জন পুরুষ এবং ১০ জন নারী রোগী। এমন কঠিন রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সবাইকে হাসপাতালের এই সেবা কেন্দ্র থেকে রক্ত পরীক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

জানা গেছে, ২০২০ সালের মার্চ মাসে সারা দেশের আরও ২২টি জেলার মতো চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালেও এ সেবা চালু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরপর থেকে নিয়মিতভাবে প্রতিদিন গড়ে ৭-৮ জন সেবাপ্রার্থী এখানে এসে এইচআইভি পরীক্ষা করাচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে এই সংখ্যা ১০-১২ জনেরও বেশি হয়।

সেন্টারে আসা ব্যক্তিদের মুখের লালা ও রক্ত পরীক্ষা করে মাত্র দশ মিনিটের মধ্যেই রিপোর্ট দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের নিচতলায় স্থাপিত এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে তিনজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। ফোকালপার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন হাসপাতালের আবাসিক দুজন চিকিৎসক। তার সঙ্গে কাউন্সিলর কাম-অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হাবিবুল হক আখন্দ এবং মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সোলেমান হোসেন রয়েছেন।

তারা জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে এই সেবা কেন্দ্র চালু হওয়ার পর থেকে জেলার অনেক মানুষ বিনামূল্যে এই রক্ত পরীক্ষা-সেবা গ্রহণ করে উপকৃত হয়েছেন। এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৪২৭টি পরীক্ষা করা হয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ২৫ জন রোগী পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন এবং চিকিৎসা নিয়েছেন।

তারা আরও জানান, বিশেষ করে বিদেশগামী শ্রমিকদের জন্যে এই পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি। কারণ বিদেশ ভ্রমণের আগে এইচআইভি পরীক্ষার রিপোর্ট অনেক দেশে বাধ্যতামূলক। এছাড়া মাদকাসক্ত এবং যৌনকর্মীদের জন্যও এই পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তাদের আহ্বান, এই শ্রেণির ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী যেন হাসপাতালে এসে বিনামূল্যে এই সহজ সেবা গ্রহণ করে নিজেদের এবং সমাজের সুরক্ষা নিশ্চিত করেন।

দায়িত্বরতরা জানান, এখানে আসা প্রতিটি সেবাপ্রার্থীর জন্যে আলাদা ফাইল খোলা হয় এবং কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হয়, যাতে রোগী সচেতন ও সতর্ক হতে পারেন। রিপোর্ট পজিটিভ এলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। আর নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়া ব্যক্তিদেরও ভবিষ্যতে ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, যে জীবাণুর মাধ্যমে এইডস রোগ হয়, তাকে এইচআইভি (HIV) বলা হয়।

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের রেসিডেন্স ফিজিশিয়ান (আরপি) ডা. মোহাম্মদ আসিফ ইকবাল বলেন, এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধে আমাদের করণীয় অনেক কিছু আছে।

এর মধ্যে রয়েছে- নিয়মিত প্রাথমিক পরীক্ষা, বিদেশগামী শ্রমিকদের এইচআইভি টেস্ট, ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকা, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই পরীক্ষার মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকা এবং গর্ভবতী মায়েদের এইচআইভি পরীক্ষা করা। একমাত্র সচেতনতাই পারে এই রোগের ঝুঁকি কমাতে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. একেএম মাহাবুবুর রহমান বলেন, এইচটিসি এআরটি সেন্টারের মাধ্যমে এ পর্যন্ত যারা সেবা নিয়েছে, তাদের মধ্যে ২৫ জন এইচআইভি পজেটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে এই বিনামূল্যের সেবার আওতায় নিয়ে আসা, যাতে তারা সময়মতো পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারেন।