গত ২২শে এপ্রিল (মঙ্গলবার) তুরস্কের ড্রোন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি ‘বায়কার’ তাদের নতুন প্রজন্মের বায়রাক্তার টিবি-৩ অটোনোমাস কমব্যাট ড্রোনের সফল টেক অফ অ্যান্ড ল্যান্ডিং টেস্ট সম্পন্ন করে। তুর্কি নৌবাহিনীর ‘টিসিজি আনাদুলু’ লাইট এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার থেকে সারোস উপসাগরে চারটি সফল অটোনোমাস ফ্লাইট টেস্ট চালিয়েছে তুরস্কের নৌবাহিনী।
্টিবি-৩ কমব্যাট (ইউসিএভি) ড্রোনটিকে একেবারে স্বল্প দৈর্ঘ্যের রানওয়ে থেকে টেকঅফ এন্ড ল্যান্ডিং করার উপযোগী করে তৈরি করেছে ‘বায়কার’। বিশেষ করে তুরস্কের নৌবাহিনীর ২৭,৪৩৬ টন ওজনের টিসিজি আনাদুলু একমাত্র (ফ্ল্যাগশিপ) ক্যারিয়ার জাহাজে অপারেট করার বিষয়টি মাথায় রেখে এটিকে তৈরি করা হয়।
‘বায়কার’ তার পরিকল্পিত এই মিশনে চারটি সফল ফ্লাইট টেস্ট পরিচালনা করে। যা ছিল এক কথায় সম্পূর্ণ অটোনোমাস মোডে এবং যেখানে কোনো অপারেটরের নিয়ন্ত্রণ ছিল না। Baykar-এর নিজস্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অ্যালগরিদম এই মিশন সম্পন্ন করেন। যা সমুদ্রভিত্তিক জটিল অপারেশনে টিবি-৩ কমব্যাট ড্রোনের বাস্তব কার্যকারিতা প্রমাণ করে।
তাছাড়া এই কমব্যাট ড্রোনের লাইন-অফ-সাইট (LOS) এবং বিয়ন্ড-লাইন-অফ-সাইট (BLOS) কমিউনিকেশন টেকনোলজির সক্ষমতা এটিকে লং রেঞ্জের কমব্যাট মিশন পরিচালনা করার ক্ষমতা প্রদান করে। এটিকে বিশেষ করে সমুদ্র পথে ইন্টেলিজেন্স, সার্ভেল্যান্স, রিকর্নিসেন্স এবং সরাসরি স্ট্রাইক মিশন পরিচালনা করার উপযোগী করে তৈরি করেছে তুর্কি ‘বায়কার’ কোম্পানি।
ক্যারিয়ারে ডানা ভাঁজ করে রাখার উপযোগী এই ড্রোনে ব্যবহার করা হয়েছে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন (TUSAŞ Engine Industries Inc.) কোম্পানির তৈরি টিইআই পিডি-১৭০ লাইট ইঞ্জিন। যা কিনা ১৭০ হর্সপাওয়ার শক্তি উৎপন্ন করে এবং এটি আকাশে উড্ডয়নরত অবস্থায় (৭০% শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে) প্রতি ঘণ্টায় ১২.৮ লিটার ডিজেল জ্বালানি ব্যবহার করে।
নতুন প্রজন্মের এই কমব্যাট (ইউসিএভি) ড্রোনের দৈর্ঘ্য ৮.৩৫ মিটার, উচ্চতা ২.৬ মিটার এবং ইউং স্প্যান ১৪ মিটার। এর ম্যাক্সিমাম টেক অফ ওয়েট ১,৪৫০ কেজি এবং ম্যাক্সিমাম পে-লোড ক্যাপাসিটি ২৮০ কেজি। এর অপারেশনাল রেঞ্জ ১ হাজার নটিক্যাল মাইল বা ১,৯০০ কিলোমিটার। এর ম্যাক্সিমাম স্পিড প্রতি ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার এবং ক্রুইজ স্পিড প্রতি ঘণ্টায় ২৩২ কিলোমিটার।
এই ড্রোনের ৬টি হার্ড পয়েন্টে মোট ২৮০ কেজি পর্যন্ত মিসাইল, লেজার গাইডেড এন্ড আন-গাইডেড স্মার্ট মিউনিশন বহন করতে পারে। প্রধান অস্ত্র হিসেবে রকেটসানের তৈরি ৭০ এমএম মিসাইলের পাশাপাশি এমএএম-সি/ এমএএম-এল এবং এমএএম-সি প্রিসিয়েন্স গাইডেড মিউনিশন সিস্টেম বহন করতে পারে। তাছাড়া লেজার গাইডেড রকেট এবং এয়ার টু সারফেস লঞ্চড ৮১ এমএম মর্টার মিউনিশন বহন করতে পারে এটি।
এভিয়নিক্স সিস্টেম হিসেবে এই কমব্যাট ড্রোনে উচ্চ প্রযুক্তির মাল্টি-মোড (এইএসএ) রাডার, ইন্টারচ্যেঞ্জেবল ইও/ আইআর/ এলডি ইমেজিং এন্ড টার্গেটিং সেন্সর/পড সিস্তেম ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া এটিতে ইনস্টল করা হয়েছে তুরস্কের অ্যাসেলসান কোম্পানির তৈরি উন্নত (ASELFLIR-500) ইলেক্ট্রো-অপটিক্যাল রিকর্নিসেন্স, সার্ভেল্যান্স ও টার্গেটিং সিস্টেম/পড ইনস্টল করা হয়েছে।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, তুরস্কের টিসিজি আনাদুলু (L-400)। এটি মূলত এফ-৩৫বি ব্যবহারের উপযোগী করে ডিজাইন করা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে তুরস্ক বর্তমানে এতে কিজিলএলমা ও বায়রাক্তার টিবি-৩ ড্রোনের মতো ডেডিকেটেড এরিয়াল সিস্টেম ব্যবহার করছে। ফলে এটিকে বলা হচ্ছে বিশ্বের প্রথম সুপার ড্রোন ক্যারিয়ার।
চলতি ২০২৫ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি বুধবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ইন্দোনেশিয়া সফরকালে দেশ দুটি মধ্যে প্রায় কয়েক বিলিয়ন ডলারের সামরিক ও প্রতিরক্ষা সাজ সরঞ্জাম ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন হয়। এই চুক্তির আলোকে ইন্দোনেশিয়া তার্কিস বায়কার কোম্পানির কাছ থেকে মোট ৬০টি বায়রাক্তার টিবি-৩ কমব্যাট ড্রোন (ইউসিএভি) এবং এর পাশাপাশি ৯টি আকিনসি কমব্যাট ড্রোন ক্রয় করবে।
তথ্যসূত্র: দ্য ডেইলি সাবাহ, দ্য ডিফেন্স পোস্ট, উইকিপিডিয়া।
সংবাদ প্রেরক: সিরাজুর রহমান
ফটো ক্রেডিট: DBC24/7 News