ওয়ান-ইলেভেন কালে পত্রিকাগুলো পলাতক কিংবা গ্রেফতারকৃত বিএনপি নেতাদের কথিত দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট করতো। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতারাও ছিল, তবে সংখ্যায় কম।
ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম স্বীকার করেছিলেন যে ডিজিএফআই কর্তৃক সরবরাহকৃত ওইসব সংবাদ যাচাই না করে ছাপা ছিল তার সাংবাদিকতা জীবনের বড় ভুল। আসলে, সিংহভাগ মিডিয়াই তখন তাই করেছিল, শুধু ডেইলি স্টার নয়। আরো উল্লেখযোগ্য যে পত্রিকাগুলোর এই রিপোর্টগুলোকে ভিত্তি করে টেলিভিশনগুলো গ্রাফিক্স ব্যবহার করে পুনরায় রিপোর্ট করতো। আমি যে টেলিভিশনে হেড অফ নিউজ এর দায়িত্বে ছিলাম, সেখানেও তাই করতে হতো।
তখন এটা ছিল একটা হুজুগ। না করলে আমরা সার্কুলেশন বা টিআরপিতে পিছিয়ে পড়ছি — এমন একটা অসৎ প্রতিযোগিতা ছিল মিডিয়ার মধ্যে।
কিছু রিপোর্ট করানোর ক্ষেত্রে সরকারের চাপ ছিল, এবং আমাদেরও কিছু উৎসাহ ছিল। প্রশ্ন হলো, মিডিয়া কি এখন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে, নাকি চাপ অনুভব করছে? তারা কি সেলফ-সেন্সরশিপের আশ্রয় নিচ্ছে?
এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব অপ্রমাণিত তথ্য দিয়ে, বা শোনা কথার ভিত্তিতে, রিপোর্ট হচ্ছে— এগুলোর মূল্যায়ন কীভাবে হবে? এগুলোর ইতিহাস কী হবে?
আমি বিশ্বাস করি, যাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট হচ্ছে তারা কেউ ধোয়া তুলসী পাতা নয়। ক্ষেত্রবিশেষে, তারা আরও জঘন্য। কিন্তু এখন প্রতিদিন নানা পত্রিকায় এই সংক্রান্ত রিপোর্ট পড়ে হাসি পায়। যদি ওই ব্যক্তিরা এই রিপোর্টগুলো চ্যালেঞ্জ করতে পারতো, আর আদালত যদি সঠিকভাবে কাজ করতো, অনেক রিপোর্টারের জেল হতো। চাকরি চলে যেত।
এর জন্য সরকার বা মিডিয়া কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের দরকার হতো না। রিপোর্টই প্রমাণ করতো কতটা ভাসা ভাসা, সূত্রহীন এবং প্রমাণহীন এই সব লেখা।
মিডিয়াকে বলি, রিপোর্ট করেন ভাই, কিন্তু সময় নিয়ে এমন রিপোর্ট করেন যা আদালতেও প্রমাণ হিসেবে দাঁড়াবে। এদের বিরুদ্ধে মামলা বা তদন্তের কাজে লাগবে। দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় আনার জন্য হবে, শুধু পাঠককে চানাচুর মার্কা রিপোর্ট পড়িয়ে মজা দেওয়ার জন্য নয়।
আমি কারো নাম বলছি না। এমন কিছু পত্রিকা আছে যাদের মালিক বা অর্থদাতা শেখ হাসিনার আশীর্বাদে লুটেরাদের শীর্ষ কাতারে আছে। নাম বললে অনেকের মনে কষ্ট লাগবে। এমনিতেই বদনাম আছে যে আমি স্বগোত্রীয় লোকদের সমালোচনা বেশি করি। লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক
সূত্র : https://www.facebook.com/anisalamgirbd
Leave feedback about this