শরিফুল হাসান : সকাল থেকে রাত। চাকরি প্রার্থী তরুণ থেকে শুরু করে নানা মানুষের নানা সংকটের কথা শুনতে শুনতে রোজ মনে হয়, ইশশ! আমি যদি পৃথিবীর প্রতিটা মানুষের প্রতিটা সমস্যার সমাধান করে দিতে পারতাম! যদি পৃথিবীর প্রতিটা মানুষের কান্না মুছিয়ে দিতে পারতাম। আমি সাধারণ এক মানুষ! ক্ষমতা সীমিত। কিন্তু মন মানে না। আমি শুধু শুনে যাই। কী ফেসবুক কী বাস্তব জীবনে প্রতিদিন অনেক শোনার চেষ্টা করি। আমি জানি সবার সমস্যার সমাধান দিতে পারবো না তবু শুনি! এর মধ্যে সবচেয়ে হতাশায় থাকে তরুণরা। একটা চাকুরি লাগবে! নিয়োগগুলো আটকে আছে। বিসিএসের গেজেট হচ্ছে না। কারো আবার ছোট্ট একটা চাকুরি হলেই হবে!
কতো বিষয়ে কতোজনের কতো কথা! আমার ফেসবুক ভরে যায় ইনবক্সে। কাজের ফাঁকে ছুটির দিনে সবসময় কথা শুনি। অনেকের কথা শুনতে পারি না সময়ের অভাবে! অনেকে দেখা করে বলতে চান। তরুণ, নারী, প্রবাসী কতোজনের কতো গল্প! পথ চলতে চলতে আমি রিকশাওয়ালার গল্প শুনি। কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসার গল্প! সাত তলা বস্তিতে থাকার গল্প! গল্প শুনি গাড়িচালক, মজুর, শ্রমিক, প্রবাসীর!
গল্প শুনতে শুনতে মনে হয়, নিপীড়িত প্রতিটা মানুষের যন্ত্রণা যদি মুছে দিতে পারতাম! অনেকের যন্ত্রণার গল্প শুনে কান্না পায়। অসহায় লাগে। মনে হয় তার কষ্টগুলো যদি শুষে নিতে পারতাম! মনে হয় সব মানুষের কষ্টগুলো সমাধান করে দিতে পারতাম মুহুর্তে কোন এক জাদুর স্পর্শে! আমি পারি না। প্রতিদিন টের পাই আমি, একজন অসহায় মানুষ। তবু আমি কথা শুনি। আমি রোজ বুঝি মানুষের পৃথিবীটা মানুষের থাকছে না।
মানুষের কথা শুনতে শুনতে আমার মনে হয় এই দেশের সব শহরে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের পাশে যদি একটা রেস্টুরেন্ট থাকতো যেখানে ছেলে মেয়েরা বিনামূল্যে বা সামান্য মূল্যে খেয়ে যাবে! একটা হাসপাতাল যেখানে বিনামূল্যে আন্তরিকভাবে সব চিকিৎসা মিলবে! একটা দপ্তর যেখানে গেলেই একটা চাকরি বা টিউশনি মিলবে! একটা জায়গা যেখানে মানুষের সব অনাচারের সমাধান আছে!
মনে হয় এই দেশে যদি এমন একটা দপ্তর থাকতো যেখানে রোজ মানুষ তাঁর সংকটের কথা বলতে পারবে! কিছু মানুষ যত্ন নিয়ে তাদের কথা শুনবে! সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে! আমার মনে হয় ক্ষমতা থাকলে এই সমাজ রাষ্ট্র দুনিয়া আমি বদলে দিয়ে মানবিক একটা পৃথিবী গড়তাম। দায় ও দরদের সমাজ যেখানে মানুষ মানুষের পাশে থাকবে।
ফেসবুক মনে করিয়ে দিচ্ছে ছয় বছর আগের লেখা এটি। ক্যালেন্ডার ঘুরে ছয় বছর গেলেও স্ট্যাটাসটা এখনো আগের মতোই আছে।িআমি এখনো রোজ মানুষের গল্প শুনি। একে ওকে ফোন দেই। চেনা জানা সরকারি কর্মকর্তা বড় ভাই বন্ধু কতোজনকে ফোন দেই, মেসেজ করি যদি সমাধান হয়!
আমি রোজ কথা শুনি! চারপাশের মানুষ দেখি। কথা শুনি। বাবার জন্য সন্তানের ছোটাছু্টি দেখি, সন্তানের জন্য বাবার। ভাইয়ের জন্য বোনের, বন্ধুর জন্য বন্ধুর লড়াই দেখি। রোজ মানুষের কথা শুনি। মনে হয়, যদি একটা মুখেও একটু হাসি ফোটে! আমি রোজ তাই মানুষের কথা শুনি। সময়ে, অসময়ে। বেলা অবেলায়! শুনতে শুনতে ভাবি একটা মানবিক দেশ দুনিয়ার জন্য আর কতো শত বছর আমাদের অপেক্ষা করতে হবে? আমি জানি না। তাই রোজ শুনে যাই! লেখক: কলামিস্ট। ফেসবুক থেকে