২০২৫ সালের ১লা সেপ্টেম্বর থেকে চীনের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)–ভিত্তিক বিষয় পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে শি জিনপিং প্রশাসন। তাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছোটবেলা থেকেই শিক্ষার্থীরা এআই প্রযুক্তির মৌলিক ধারণা ও ব্যবহারিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবে। এটি চীনের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে আরও দক্ষ করে গড়ে তুলবে।
চীনের এই পদক্ষেপকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রেও শুরু হয়েছে AI-ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম চালুর প্রস্তুতি। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যে প্রাথমিক স্তর থেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার ঘোষণা দিয়েছে। লক্ষ্য একটাই—আগামী প্রজন্মকে ভবিষ্যতের প্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বিত করে গড়ে তোলা এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত রাখা।
এই যুগান্তকারী উদ্যোগগুলো আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য হতে পারে এক চমৎকার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। যদিও বাংলাদেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো পর্যাপ্ত প্রযুক্তিগত সুবিধা নেই, তবুও ধাপে ধাপে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে AI বিষয় অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
শুরুতে দেশের প্রতিটি উপজেলায় কয়েকটি নির্বাচিত ও ডেডিকেটেড স্কুলে পরীক্ষামূলকভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক সংক্ষিপ্ত কোর্স চালু করা যেতে পারে। এতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে AI–বিষয়ক সচেতনতা, আগ্রহ ও দক্ষতা ধীরে ধীরে তৈরি হবে। পাশাপাশি প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার ও নিরাপত্তা সম্পর্কে জানার সুযোগও মিলবে।
যদি প্রাথমিক পর্যায়ে AI শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন সম্ভব নাও হয়, তাহলে অন্তত প্রতি সপ্তাহে ১ দিন বা মাসে ৬ ঘণ্টা করে হাতে-কলমে কম্পিউটার বিষয়ক মৌলিক শিক্ষা চালুর উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এতে করে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুরাও আধুনিক শিক্ষার ছোঁয়া পাবে এবং প্রযুক্তির জগতে প্রবেশের স্বপ্ন দেখার সুযোগ পাবে।
যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জানতে ও শিখতে পারবে-
(১) কম্পিউটারের অংশ পরিচিতি,
(২) সাধারণ টাইপিং এবং মাউস চালনা,
(৩) কীভাবে গুগল বা অন্য সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করতে হয় তার ব্যবহার শিখবে,
(৪) ছবি আঁকা বা গল্প লেখা সফটওয়্যার ব্যবহার
এগুলো শিশুদের প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করে তুলবে,
(৫) প্রাথমিক কোডিং এবং প্রোগ্রামিং ইত্যাদি।
পরিশেষে বলা যায় যে, এই ধরনের শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হবে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে প্রযুক্তি ব্যবহার শেখানো। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে তাদের মানিয়ে নেওয়ার উপযুক্ত করে গড়ে তোলা, এবং ভবিষ্যতের উদ্ভাবনী চিন্তাধারা ও গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করা।
প্রচলতি শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্য হওয়া উচিত, একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী, দক্ষ ও জ্ঞানভিত্তিক মানবসম্পদ গড়ে তোলা, যারা শুধু চাকরির জন্য শিক্ষা নয়, বরং নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, গবেষণা এবং বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে।
লেখক-
সিরাজুর রহমান,
সহকারী শিক্ষক ও লেখক,
বিনগ্রাম উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,
সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ।