জুন ৬, ২০২৫
লেডিঞ্জে গ্রেন্ড, স্টকহোম,সুইডেন
বাংলাদেশ রাজনীতি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার চলমান বিচার কার্যক্রম একটা প্রহসন এর রায় কি হবে তা আগে থেকেই ঠিক করা আছে – ড. হাছান মাহমুদ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার চলমান বিচার কার্যক্রম একটা প্রহসন

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন যে রাজনৈতিক দলের ভিত্তি আছে, কোটি কোটি সমর্থক আছে কলমের খোঁচায় সে দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করলেই নিষিদ্ধ হয় না। সুইডেন ভিত্তিক গণমাধ্যম ভয়েস অফ সুইডেনকে http://www.voiceofswede.online  দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি আরও দাবি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার চলমান বিচার কার্যক্রম একটা প্রহসন এর রায় কি হবে তা আগে থেকেই ঠিক করা আছে। এছাড়াও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পরিকল্পনা সহ নানা বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো। সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকারটি পাবেন https://youtu.be/-KquBlwyHGY?si=GQNauSe4-waPwKsk & https://fb.watch/A1a2Q9YJev/

ভয়েস অব সুইডেন : হাছান ভাই কেমন আছেন?

ড. হাছান মাহমুদ : আমি শারীরিকভাবে ভালো আছি, মানসিকভাবে তো প্রতিদিনই যন্ত্রণার মধ্যে আছি। দেশে আমাদের নেতাকর্মীদের উপর নিপীড়ন নির্যাতন চলছে, আমাদের দলের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে, এমনকি ইন্টারনেট ভিত্তিক কার্যক্রমের উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত, প্রতি মুহূর্ত দেশকে অনুভব করি, এবং দেশে নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ আছে আমার নিয়মিতই। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমি প্রতিদিনই কথা বলি, তারা প্রত্যেকেই অত্যন্ত যন্ত্রণার মধ্যে আছে। লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী সারা দেশে আজকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সেগুলো আমাকে প্রতিনিয়ত যন্ত্রণার মধ্যে রেখেছে। শারীরিকভাবে মোটামুটি ভালো থাকলেও মানসিকভাবে ডেফিনেটলি ভালো নেই, এই সমস্ত বিষয় আমাকে প্রতিনিয়ত, প্রতিমুহূর্তে কুরে কুরে খাচ্ছে।

ভয়েস অফ সুইডেন :  আপনি জানেন যে, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারের নামে প্রহসন শুরু হয়েছে। এই ব্যাপারে আপনার বক্তব্য জানতে চাই।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার চলমান বিচার কার্যক্রম একটা প্রহসন এর ব্যাখ্যায় ড. হাছান মাহমুদ :

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে মামলাগুলো করা হয়েছে সেসব মামলাগুলো গায়েবি এবং মিথ্যা মামলা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যতগুলো মামলা করা হয়েছে সবগুলো মিথ্যা এবং গায়েবী মামলা। এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো করা হয়েছে সেগুলো সাজানো মামলা। মিথ্যা, বানোয়াট, ফেবরিকেটেড সাজানো মামলা এবং সেই সাজানো মামলার লাইভ ব্রডকাস্ট করা হচ্ছে। এর পুরোটাই একটা নাটক।

আমি গত বছরের জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে আগস্ট মাসের তিন তারিখ পর্যন্ত বিদেশে ছিলাম। আগস্ট মাসের ৩ তারিখ সন্ধ্যায় আমি দেশে পৌঁছাই। সে সময় আমার ইউরোপে এবং ইউকেতে অনেকগুলো মিটিং ছিল। আজকে যে অ্যাপ্সটেল কনভেনশন নিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ঢাক ঢোল পেটাচ্ছে সেই অ্যাপসটেল কনভেনশনে গত পহেলা আগস্ট আমি নিজে স্বাক্ষর করেছি। সে সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমার একটা প্রায়োরিটি ছিল এবং সেই কনভেনশনে সই করার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে যারা ফ্যামিলি রিইউনিফিকেশনের জন্য বিদেশে আসে কিংবা চাকরি বা অন্যান্য যে কোন কারণে বিদেশে আসে তাদের ম্যারিড সার্টিফিকেট থেকে শুরু করে সকল ধরনের সার্টিফিকেট বাংলাদেশে একবার সত্যায়িত করে দিলে বিদেশে এখন আর সেগুলোকে সত্যায়ন করা লাগে না। এবং সেই অ্যাপসটেল কনভেনশনে আমি আগস্টের এক তারিখে সই করি। আগস্টের ২ তারিখে ইউকেতে ফরেন মিনিস্ট্ররের সাথে আবার মিটিং ছিল দুপুরবেলা । এরপর আমি রাতে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। এবং পরদিন সন্ধ্যায় আমি বাংলাদেশে পৌঁছাই। আমি যতদূর জানি, আমাদের নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীকে, পুলিশ বাহিনীকে যেকোনো ধরনের বল প্রয়োগ করতে নিষেধ করেছিলেন। সে সময় কোন কোন জায়গায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে এটা সত্য এবং পুলিশের উপরেও আক্রমণ হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি যখন জালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বা জনগণের উপর আক্রমণ হচ্ছে তখন কোন কোন ক্ষেত্রে পুলিশকে বল প্রয়োগ করতে হয়েছে। কিন্তু আপনি দেখবেন যে, সেই জুলাই আগস্টে কত পুলিশকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি একজন পুলিশ বাঁচার জন্য আকুতি করছিল তার বাচ্চার জন্য, তাকেও হত্যা করা হয়েছে। একজন পুলিশ যে কিনা কর্মক্ষেত্রে ছিল না তার বাসায় ছিল সেখান থেকে তাকে ধরে এনে তারপর হত্যা করা হয়েছে। আরেকজন পুলিশ ঔষধ আনতে যাচ্ছিল তাকেও সেখান থেকে ধরে এনে হত্যা করা হয়েছে। এবং আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা এবং কর্মীকে তারা হত্যা করে তাদের লাশ ঝুলিয়ে দিয়েছিল। আমি বলতে চাই সমস্ত হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া দরকার। এগুলো নিয়ে কিন্তু কেউ কথা বলে না। সুতরাং এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে বিচার শুরু হয়েছে সেটি একটি সম্পূর্ণ নাটক। এটা প্রহসন ছাড়া অন্য কোন কিছু নয় এবং আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বহুদিন ধরে কাজ করছি। ২০০১ সালের অক্টোবর মাস থেকে আমি তার পার্সোনাল উইনিং এ ২০০৮ সাল পর্যন্ত কাজ করেছি তার ব্যক্তিগত বিশেষ সহকারী হিসেবে। আমি দেখেছি তিনি অত্যন্ত সংবেদনশীল একজন মানুষ এবং তিনি যেকোনো সময় এবং রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়েও তিনি সবসময় বল প্রয়োগের বিরুদ্ধে ছিলেন। শুরু থেকে আমাদের দলের অনেকেই প্রধানমন্ত্রীকে বল প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি সবসময়ই এটার বিরুদ্ধে ছিলেন। সুতরাং এই ধরনের বিচার সম্পুর্ণ সাজানো নাটক ছাড়া অন্য কোন কিছু নয়। ।

ভয়েস অফ সুইডেন : এমন বিচারের ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

ড. হাছান মাহমুদ : দেখুন এগুলো তো সম্পূর্ণ সাজানো নাটক এবং এই বিচারের রায় কি হবে সেটা আগে থেকে নির্ধারণ করা আছে। আমি আপনাকে একটি উদাহরণ দেই। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সম্ভবত ১৬ তারিখে নিউমার্কেট এলাকায় আমাদের একজন যুবলীগ কর্মী মৃত্যুবরণ করেছিল। তার লাশটা আমাদের পার্টি অফিসের সামনে আনার পরে তার জানাজায় আমি নিজে অংশগ্রহণ করেছি। এবং তারপর সেই লাশের সৎকার করার জন্য দলের পক্ষ থেকে টাকা পয়সা দেওয়া হয়েছিল। সে আমাদের কর্মী। যে মামলাটা করা হয়েছিল পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার এজাহারে বলা হয়েছিল যে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামের নেতা কর্মীরা তাকে হত্যা করেছে। আর সেই মামলা গ্রেফতার দেখানো হয় সালমান এফ রহমান এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ আরো অনেককে। সুতরাং মামলাগুলো কি রকম সেটা বোঝানোর জন্যই আপনাকে এই উদাহরণটুকু দিলাম। আদালতে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে তাহলে কি সালমান এফ রহমান এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তারা কি তাহলে বিএনপি কিংবা জামায়াত করেন কিনা? কারণ সেটাই তো উল্লেখ করা ছিল মামলার এজাহারে। আসলে এগুলো সাজানো বিচার এবং এগুলোর রায় কিরকম হবে সেটা আগে থেকে নির্ধারণ করা। এগুলো লাইভ ব্রডকাস্ট করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার প্রয়াস ছাড়া অন্য কোন কিছু নয়।

ভয়েস অব সুইডেন : আপনিতো আওয়ামী লীগের শাসনামলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ছিলেন আপনি কি মনে করেন যে বর্তমানে বাংলাদেশে গণমাধ্যমগুলো স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারছে?

ড. হাছান মাহমুদ : আমি আমার বক্তব্যটা বা আমার প্রসঙ্গে পরে বলি। বিশ্ব সম্প্রদায় কিংবা যারা গণমাধ্যম নিয়ে কাজ করে যেসব প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত তারা কি বলছে? তারা বলছে, পৃথিবীর যে দশটি দেশে সাংবাদিকদের জন্য অনিরাপদ সেই দশটি দেশের মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে আজকে শত শত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা বা হত্যা চেষ্টা মামলা দেয়া হয়েছে। কয়েক ডজন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও হত্যা মামলা কিংবা হত্যা চেষ্টা মামলা। দুনিয়ার কোথাও এমনটা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। কোন সাংবাদিক এখন সাহস করে সরকারের বিরুদ্ধে কিংবা সরকারের কোন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে কিছু লিখতে সাহস পায় না। এমনকি সরকারের উপদেষ্টাকে একটি নেগেটিভ প্রশ্ন করার কারণে সেই সাংবাদিকের চাকরি চলে গেছে। আপনিই বলুন দেশে এখন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কি আছে? গণমাধ্যমের স্বাধীনতা তো নাই-ই বর্তমানে বাংলাদেশে গণমাধ্যমগুলো ভীতি এবং সন্ত্রস্ত অবস্থার মধ্যে আছে। এবং সরকারের বিপক্ষে একটি কথাও লেখা যায় না। এই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য। এটি হচ্ছে বিশ্বের গণমাধ্যম নিয়ে এবং সাংবাদিকদের নিয়ে যারা কাজ করে তাদের বক্তব্য এবং তারাও এই ব্যাপারে বারংবার কনসার্ন ব্যক্ত করছে। আমি বিগত সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ছিলাম ৫ বছর। আমি যখন মন্ত্রী ছিলাম আমার বিরুদ্ধেও বিভিন্ন পত্রপত্রিকা লিখেছে। তাদের স্বাধীনতা ছিল সে জন্য তারা লিখতে পেরেছে। এখন যেভাবে দমন করছে, এখন কি তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার বিরুদ্ধে কেউ কিছু লিখতে পারে? কিংবা অন্য কোন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে কেউ কিছু লিখতে পারে, পারেনা। এখন তো, সোশ্যাল মিডিয়াকে ও কন্ট্রোল করা হচ্ছে। সুতরাং গণমাধ্যমের কোন স্বাধীনতা আর বাংলাদেশে অবশিষ্ট নাই। এটি সত্যি আমাদের জাতির জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক।

ভয়েস অব সুইডেন : আপনি তো নিশ্চয়ই জানেন যে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। এই ব্যাপারে আপনার বক্তব্য জানতে চাই।

ড. হাছান মাহমুদ : দেখুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক দল, যে দলকে বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ সমর্থন করে। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এমন একটি রাজনৈতিক দল যে দলের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ হয়েছে এবং স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন প্রথমে ৭ই মার্চ ১৯৭১ সালে। এবং ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন এবং পুরো স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম সবই হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে।

স্বাধীনতা তো একদিনে অর্জিত হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে স্বাধীনতার সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন। এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। এরপরে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ আওয়ামী লীগের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, উপ-রাষ্ট্রপতি ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতির কারণে তাকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এবং সেই প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ। সেই প্রবাসী সরকারের অধীনেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ড গুলো গঠিত হয়েছিল। সেই সরকারের অধীনেই বিভিন্ন দপ্তর গুলো পরিচালিত হয়েছিল এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডাররা সেই সরকার থেকেই বেতন ভাতা পেয়েছে। প্রত্যেক সেক্টর কমান্ডার এবং উপ-সেক্টর কমান্ডার সহ এবং অন্যান্য দপ্তর গুলো এই সরকার থেকে বেতন ভাতা গ্রহণ করেছে। এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যারা সেক্টর কমান্ডার ছিলেন প্রত্যেকে চারশত টাকা করে ভাতা নিয়েছেন। পুরো মুক্তিযুদ্ধটাই আওয়ামী লীগ পরিচালনা করেছে এবং সেই পুরো সরকারটাই ছিল আওয়ামী লীগের সরকার। আওয়ামী লীগ হ্যাভ দা ম্যান্ডেট, আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সমগ্র পাকিস্তানে মেজরিটি আসনে জয় লাভ করেছিল এবং পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় সবকটি আসনেই জয়লাভ করেছিল। সুতরাং আওয়ামী লীগের ম্যান্ডেট ছিল বিধায় আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে। সেই সরকারের অধীনেই আমাদের পুরো মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল। এবং সেই কারণেই ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জনের পর সেই সরকারই কিন্তু বাংলাদেশে এসে প্রথম দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিল। তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম সহ সেই সরকারের মন্ত্রীরা বিভিন্ন কর্মকর্তা সহ ঢাকায় আসেন কলকাতা থেকে। পরবর্তীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই সরকারের রাষ্ট্রপতি হিসেবেই ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি বাংলাদেশে পদার্পণ করেছিলেন। এই ইতিহাস অনেকেই জানেনা, সুতরাং আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক দল যে দল স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা করে, যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে।

আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক দল যে দলের সবচেয়ে দুঃসময় যখন ছিল অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট এর পরে, সবচেয়ে দুঃসময় ছিল আওয়ামী লীগের। অনেকেই বলে তখন আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে কম ছিল। সে সময়ও আওয়ামী লীগ ত্রিশ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল নির্বাচনে। আপনি ২০০৮ সাল থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময় প্রত্যেকটা ইলেকশন দেখুন আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা চল্লিশ থেকে ষাট শতাংশ। সুতরাং সেই দলটার রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা এবং সেই দলের নিবন্ধন স্থগিত করা, এগুলো গণতন্ত্রের উপর হিংস্র থাবা। যে দলের জনভিত্তি আছে এমন কোন একটি দলকে নিষিদ্ধ করলেই নিষিদ্ধ হয়ে যায় না। সুতরাং আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত করলেও এটা কাগজে-কলমে স্থগিত আছে কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যক্রম চালু আছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা সব সময় সরব আছেন এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম তাদারকি করছেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম সব জায়গায় চালু আছে।

যে দলের জনভিত্তি আছে, কোটি কোটি সমর্থক আছে সেই দলকে কলমের খোঁচায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করলেই নিষিদ্ধ হয়ে যায় না।

অনলাইনেও আওয়ামী লীগের কার্যক্রম না চালানোর জন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সেটা কি বন্ধ হয়েছে? আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইট হয়তো বন্ধ করে দিয়েছে কিন্তু অন্যভাবে কি আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বন্ধ আছে? বরং এই নিষেধাজ্ঞার পরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অনলাইনে আরো বেশি সরব হয়েছে। সুতরাং এগুলো আসলে প্রচন্ড ভুল, যে দলের জনভিত্তি আছে সেই দলের কার্যক্রম বন্ধ করা কিংবা নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন স্থগিত করা, এতে নির্বাচন কমিশনের যে কোনো স্বাধীনতা নেই সেটি প্রমাণিত হয়েছে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের মধ্য দিয়ে। কিন্তু আসলে আওয়ামী লীগকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। আওয়ামী লীগকে আগেও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ১৯৫৮ সালেও আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চের পরেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আর সে নিষিদ্ধ করার পরে কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। ৭৫ সালের পরেও কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং নিষেধাজ্ঞা আওয়ামী লীগের জন্য নতুন কিছু না এগুলো সাময়িক।  আওয়ামী লীগ সগৌরবে নিশ্চিতভাবেই জনগণকে নেতৃত্ব দিবে।

ভয়েস অফ সুইডেন : 

২০২৪ সালে ভোটের মাধ্যমে কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল এবং আমরা দেখলাম যে প্রফেসর ইউনুসের ম্যাটিকিউলাস ডিজাইনে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত এবং জঙ্গিদেরকে সাথে নিয়ে দেশ পরিচালনা করছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেছে।

আওয়ামী লীগের কি কোন সুযোগ আছে প্রবাসী সরকার গঠন করার বা আওয়ামী লীগ কি এইরকম কোন চিন্তাভাবনা করছে কিনা?

ড. হাছান মাহমুদ : এই ধরনের কোন আলোচনা এখনও আমাদের মধ্যে হয়নি।

ভয়েস অফ সুইডেন : বিদেশে আওয়ামী লীগের অনেকগুলো সংগঠন কাজ করছে, বিশেষ করে ৫ই আগস্টের পর থেকে বিদেশে অবস্থান করা আওয়ামী লীগের এসব সংগঠনগুলোর কার্যক্রমকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

ড. হাছান মাহমুদ : বিদেশে আওয়ামী লীগের যেসব শাখা আছে সেই শাখা গুলো সব সময়ই দেশের দুর্যোগ দুর্বিপাকে, দলের দুর্যোগ দুর্বিপাকে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। ২০০৭ সালে যখন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে যেতে বারণ করা হয়েছিল তখন বিদেশে আওয়ামী লীগের সংগঠনগুলো যেভাবে সরব হয়েছিল গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেসময় জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই দেশে গিয়েছিল এবং তাদের অনেকেই গ্রেফতার হয়েছিল, পরে অনেকদিন তারা জেলে ছিলো। বর্তমানেও ৫ই আগস্টের পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আওয়ামী লীগের শাখা গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। শুধুমাত্র তারা যে বিদেশের রাজপথেই সরাব আছে তা কিন্তু নয়, অন্যান্য ফ্রন্টেও কাজ করছে। এটা অত্যন্ত আশা ব্যাঞ্চক। দেশে অবস্থান করা নেতাকর্মীদের তারা সাহস যোগাচ্ছে এবং সার্বিকভাবে পুরো আওয়ামীলীগকেই সাহস যোগাচ্ছে। তাদের নেতৃবৃন্দের ভূমিকা অত্যন্ত চমৎকার, অত্যন্ত বলিষ্ঠ, এজন্য তাদের সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই।

ভয়েস অফ সুইডেন : আরেকটি প্রশ্ন যে ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সময় আরপিও চেঞ্জ করে বলা হয়েছিল যে বিদেশে কোন রাজনৈতিক দলের শাখা-সংগঠন থাকতে পারবে না। কিন্তু যখন বাংলাদেশে রাজনীতির পট পরিবর্তন হয় তখন বিদেশে আওয়ামী লীগের জনমত গঠনের জন্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন ভাবে কাজ করে। যদি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয় এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। তখন আরপিওতে পরিবর্তন আনার কোন পরিকল্পনা কি আছে আপনাদের?

ড. হাছান মাহমুদ : দেখুন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সেগুলোর আলোচনা অবশ্যই হবে। এখন বিদেশে তো শুধু আওয়ামী লীগের নয় বিএনপি’রও তো বিদেশে শাখা আছে এবং বিদেশের শাখা গুলো বিএনপির চ্যাপ্টারগুলো নিয়েও কিন্তু সরব এবং তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশি শাখা গুলোকে দেখাশোনা করেন। তারাও তো সরব রয়েছে, আমি মনে করি আগামীতে মেজর যে রাজনৈতিক দলগুলো বাংলাদেশে আছে অবশ্যই আরপিওর যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো নিয়ে তাদের ভাবতে হবে। ধন্যবাদ।

ভয়েস অফ সুইডেন : অনেক ধন্যবাদ হাছান ভাই।