জানুয়ারি ২২, ২০২৫
লেডিঞ্জে গ্রেন্ড, স্টকহোম,সুইডেন
মতামত

রাজনৈতিক দলের সংস্কার, জরুরি দরকার!

নিয়ন মতিয়ুল : কয়েকদিনের শীর্ষ দৈনিকগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, বিগত সরকারের মন্ত্রী, এমপি, প্রভাবশালী নেতা, দলীয় শিল্পপতি, এমনকি রাষ্ট্রপতি অবধি দুর্নীতির ভয়াবহ সব খবরে ভরপুর। যেমন- সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টাকে নিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বরের কালের কণ্ঠের শিরোনাম- তিস্তার চরে দরবেশের ‘জমির খনি’, সাবেক রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে ১ অক্টোবরের শিরোনাম- ‘হাওরে হামিদ পরিবারের রাজত্ব’, ১১ অক্টোবরের শিরোনাম- ‘গুম খুনেই ডুবেছে আওয়ামী লীগ’।

এদিকে, আওয়ামী গডফাদারদের নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে প্রথম আলো। ১৪ অক্টোবর প্রকাশিত হয়েছে তাদের ১২তম পর্ব। এভাবে প্রায় সব পত্রিকা ও সংবাদমাধ্যমেই প্রকাশিত হচ্ছে বিগত সরকারের প্রভাবশালী নেতা, গডফাদারদের দুর্নীতি। যেসব খবরকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখা হচ্ছে। তবে এর মধ্যেই কিছু খবর মিলছে, যা অনেকটা অস্বাভাবিক।

যেমন- প্রথম আলোর ১২ অক্টোবরের শিরোনাম- “বিএনপির ‘অবাধ্য’ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্তূপ”। একই দিনে বিবিসি বাংলার শিরোনাম- “সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েও নেতাকর্মী নিয়ন্ত্রণে ‘হিমশিম’ খাচ্ছে বিএনপি”। বিএনপির নেতাদের নিয়ে ১৩ অক্টোবরে সমকালের শিরোনাম- “দখল চাঁদাবাজির উৎপাত একই চেহারায় ফুটপাত”, ১৪ অক্টোবরে প্রথম আলোর শিরোনাম- “হাতবদল হয়ে পরিবহনে এখন বিএনপির দুই সাইফুলের চাঁদাবাজি”।

অবশ্য, ৫ আগস্টের পর থেকে এমন সব অভিযোগ আমলে নিয়ে এখন পর্যন্ত সহস্রাধিক দলীয় লোকজনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে অন্যতম বৃহৎ দলটি। তারপরও নিয়ন্ত্রণে আসছেন না নেতাকর্মীরা। সম্ভবত এ কারণে আত্মসমালোচনায় অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন শীর্ষ নেতারা। প্রথম আলোর ১৩ অক্টোবরের শিরোনাম- “ছাত্রলীগ–যুবলীগের যারা গুলি চালিয়েছে, তাদের ধরা হচ্ছে না, অভিযোগ রিজভীর”, একই দিনে যমুনা টিভির শিরোনাম- “সব আগের মতোই আছে, শুধু শেখ হাসিনা নেই: গয়েশ্বর”।
প্রশ্ন হচ্ছে, সব যদি আগের মতোই থাকে তাহলে দেড় হাজারের বেশি ছাত্র-জনতার প্রাণের বিনিময়ে গণঅভ্যুত্থানের অর্জন কী? জুলাই-আগস্টের রক্তাক্ত আন্দোলনে আওয়ামী লীগ বাদে বাকি সব রাজনৈতিক দলেরই ভূমিকা ছিল ব্যাপক। আন্দোলনে যে ১৫৮১* প্রাণ ঝরে গেছে তার মধ্যে বিএনপির নেতাকর্মীই ছিলেন ৪২২ জন- এমন দাবি দলটির মহাসচিবের।

রক্তাক্ত জুলাই আন্দোলনের মূল জনপ্রত্যাশা ছিল রাষ্ট্র ও রাজনীতির সংস্কার, সিস্টেমের বদল। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রচলিত ধারার রাজনীতির ইতিবাচক পরিবর্তন বা বড় ধরনের সংস্কার হবে- এমন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আন্দোলনে হতাহতদের পরিবার, ক্ষত-বিক্ষত লাখ লাখ তরুণ-তরুণীর। তাদের সে প্রত্যাশা পূরণ করা রাজনৈতিক দলগুলোর অনিবার্য দায়। যা না মেটালে ব্যর্থ, ব্যাকডেটেড হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোকে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারেন নতুন প্রজন্ম।
(রাজনীতির সংস্কার: ১৫ অক্টোবর, ২০২৪। এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা।) ফেসবুক থেকে