জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
লেডিঞ্জে গ্রেন্ড, স্টকহোম,সুইডেন
বাংলাদেশ মতামত

মিডিয়া ওয়াচ : প্রফেসর ইউনূস কি আইনকে প্রভাবিত করছেন?

আরশাদ মাহমুদ : এই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে গত কয়েক দিনের কিছু উদ্বেগজনক সংবাদের কারণে। প্রথম সংবাদটি ডক্টর ইউনূসের ৬৬৬ কোটি টাকার কর ফাঁকির মামলা সংক্রান্ত। দ্বিতীয়টি হল সাবেক আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর নাটকীয় গ্রেপ্তার এবং দ্রুত গতিতে তার জামিন।

সংবাদ মাধ্যমে দেখলাম যে গত ৪ আগস্ট হাইকোর্ট ডক্টর ইউনুস কে ৬৬৬ কোটি টাকা কর ফাঁকির মামলায় অভিযুক্ত করেছেন এবং অবিলম্বে সেই টাকা শোধ দিতে নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশের চার দিনের মাথায় ডক্টর ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হন। তারপর দেখলাম এই মামলা হঠাৎ করে থেমে গেল। কারণ সংশ্লিষ্ট বিচারক মামলাটিতে বিব্রত বোধ করছেন। প্রথম আলোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কয়েকদিন আগে ডক্টর ইউনূস বলেছিলেন তিনি জেলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তার পরিবর্তে বঙ্গভবনে যেয়ে সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন।

তখন প্রশ্ন উঠেছিল মামলাগুলোর কি হবে? পত্রিকায় দেখলাম প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে বলা হয়েছে তিনি কোন ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবেন না এবং আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কিন্তু অবস্থা দৃষ্টি মনে হচ্ছে আইনের গতি হঠাৎ স্থিমিত হয়ে গেছে বা থেমে গেছে। এটা জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এমনকি ডঃ ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন কয়েকদিন আগে সাংবাদিকদের বললেন এভাবে যদি তার মামলাগুলো প্রত্যাহার হয় বা থেমে যায় তবে জনমনে এই ধারণা সৃষ্টি হবে যে ক্ষমতায় গেলে মামলা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এর উদাহরণ আমরা দেখেছি শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়ার আমলে। ক্ষমতা হারানোর পর তাদের দুজনের বিরুদ্ধেই অনেকগুলো দুর্নীতির মামলা হয়েছিল। কিন্তু আবার তারা ক্ষমতায় ফিরে আসার পর সেসব মামলা গুলো বাতিল হয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে বলে রাখি আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ডঃ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলাগুলো পলিটিক্যালি মটিভেটেড। তাকে হেনস্থা করার জন্যই শেখ হাসিনা একের পর এক মামলা দিয়েছিল। তারপরও বলবো ডঃ ইউনূস যেহেতু আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং আইনের শাসনে বিশ্বাসী সে কারণে তার ব্যক্তিগত মামলাগুলো যেন আইনগতভাবে ফয়সালা হয় সেটা নিশ্চিত করা।

এবার আসি সাবের হোসেন প্রসঙ্গে। তাকে গ্রেফতারের পর খুনের মামলায় আসামি করা হয়। আগের যেসব আওয়ামী মন্ত্রী এবং দুর্বৃত্তরা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে অধিকাংশই খুনের মামলা। তারা এখনো কেউ জামিন পাননি, যদিও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে গ্রেফতার করে 15 মিনিটের মধ্যে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়। তাকে জেলে যেতে হয়নি।

অনেককে বলতে শুনছি যে সাবের হোসেনের গ্রেফতার ঠিক হয়নি। কারণ তিনি একজন ভালো মানুষ এবং সজ্জন ব্যক্তি। আমার সঙ্গে তার মাত্র একবারই সাক্ষাৎ হয়েছে এবং আমার মনে হয়েছে তিনি একজন ভদ্রলোক। কিন্তু প্রশ্ন হলো তিনি তো আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ছিলেন এবং দীর্ঘদিন শেখ হাসিনার অত্যন্ত বিশ্বস্ত সহচর ছিলেন। তাকে তো কখনো এই আওয়ামী অপশাসন বা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোন বক্তব্য দিতে শুনিনি। তিনি তো প্রত্যেকটি কলঙ্কিত নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। তারপর সবচেয়ে নিকৃষ্টতম ৭ জানুয়ারির আমিডামির নির্বাচনে তিনি নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। তার যদি বিন্দুমাত্র বিবেক বা সততা থাকতো তবে এটা তো তার করার কথা না। তাই তার সম্পর্কে যারা ভালো ভালো কথা বলছেন তাদেরকে এই ব্যাপারগুলো চিন্তা করে দেখতে অনুরোধ করবো।
একই কথা প্রযোজ্য সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান প্রসঙ্গে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি তিনি একজন ভালো মানুষ। তারপরও তো তিনি খুনি হাসিনার সরকারে মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য ছিলেন। এটা কি করে সম্ভব?

আরো কয়েকটি কারণে ইউনুস সরকার ইতিমধ্যে বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অভিযুক্ত দুর্বৃত্তরা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হচ্ছে। প্রশ্ন হল এই সিদ্ধান্তগুলো নিতে দুই মাস সময় লাগলো কেন।

প্রথম আলোতে দেখলাম এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি মোকাম্মেল হক নির্বিঘ্নে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। তাকে নিয়ে গত প্রায় এক মাস থেকে নানান খবর বের হচ্ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল তিনি পুনর্গঠিত ব্যাংকের পর্ষদের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন না। এমনকি গত কয়েকদিনে ইউনিয়ন ব্যাংকের গ্রাহকদের টাকা না দিলেও, সে নির্বিঘ্নে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছে। খবরে দেখলাম গতকাল তাকে গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় দেশ থেকে চলে যেতে দেওয়া হল তার পরিবারসহ।
প্রশ্ন হচ্ছে এই ব্যাপারগুলো মিডিয়াতে আসার পরও ডক্টর ইউনুসের সরকার এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিল না কেন? স্বাভাবিকভাবেই জনমনে এই ধারণা জন্মাচ্ছে যে আসলে ডক্টর ইউনুস বা অন্তর্বর্তী সরকার প্রকৃতই দেশ চালাচ্ছেন কিনা?
আমার অনুরোধ ডক্টর ইউনুস রিসেট বা এ ধরনের নন-ইসুগুলোকে নিয়ে সময় ব্যয় করবেন না। এর পরিবর্তে তাকে জরুরিভাবে দেশের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং ঢাকা শহরের সীমাহীন যানজটের দিকে নজর দিতে হবে। এগুলো অত্যন্ত জরুরিভাবে মোকাবেলা না করলে অদূর ভবিষ্যতে মানুষ বলতে শুরু করবে শেখ হাসিনার আমলে যা ছিল এখনো তাই আছে। তাহলে পরিবর্তনটা কোথায় হল?
লেখক:সাংবাদিক। ফেসবুক থেকে